আজ: শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫, সোমবার |

kidarkar

প্যারাগন লেদার সার্টিফিকেট প্রতারণা মামলায় ৪ আসামির জামিন

Trybunal_SharebazarNewsশেয়ারবাজার রিপোর্ট: প্যারাগন লেদার এ্যান্ড ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার সার্টিফিকেট প্রতারণা মামলায় অভিযুক্ত আসামি এম এ সালাম গুরুতর অসুস্থ বিধায় আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি। তাই তার পক্ষে করা জামিন আবেদন ঝুলিয়ে রেখেছেন আদালত। বরং তাকে জেলহাজতে রেখে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশের পাশাপাশি আসামির শারিরিক অবস্থার প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। তবে আদালতে উপস্থিত থাকায় এই মামলার অপর চার আসামিকে জামিন দিয়েছেন আদালত।

আসামি এম এ সালাম প্যারাগন লেদার এ্যান্ড ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

এদিকে এই মামলার অপর আসামি মো. জালাল উদ্দিন ও হেমন্ত বাইন ভূঞাকে জামিন দিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। অভিযুক্তরা সকালে শুনানিতে উপস্থিত থেকে জামিন আবেদন করায় ট্রাইব্যুনাল তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।

আর এখন পর্যন্ত প্যারাগন লেদার শেয়ার সার্টিফিকেট জালিয়াতির মামলায় অভিযুক্ত চার আসামি জামিন পেলেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির করপোরেট এ্যাডভাইজার আব্দুস সালাম (তিনি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড এ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশের আইসিএবি সাবেক সভাপতি), ২৩ সেপ্টেম্বর শেয়ার অফিসার এস এস জুনায়েদ বাগদাদী এবং ২৮ সেপ্টেম্বর এ্যাকাউন্ট অফিসার মো. জালাল উদ্দিন ও কম্পিউটার অপারেটর হেমন্ত বাইনকে জামিন দেওয়া হয়।

আজ ২৮ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত শুনানিতে আসামি এমএ সালামের জামিনের আবেদন করেন তার পক্ষের আইনজীবীরা। এই সময় আদালতে আসামির অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে তার পক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বলেন, আসামি এমএ সালাম গুরুতর অসুস্থ। তিনি বর্তমানে চলাফেরা করতে সম্পূর্ণ অক্ষম। তাই তাকে এজলাসে উপস্থিত করা সম্ভব হয়নি।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে তিনি জেল হাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। তবে তার আরো উন্নততর চিকিৎসা প্রয়োজন। তাই ভাল চিকিৎসার জন্য আদালতের কাছে আসামির জামিনের আবেদন করেন এই আইনজীবী।

এই বিষয়ে আদালতে উপস্থিত ডেপুটি জেলার সর্বোত্তম দেওয়ান বিচারকের নির্দেশে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেন, গুরুতর অসুস্থতার কারণে আসামি এমএ সালামকে আদালতে আনা সম্ভব হয়নি।

তাই আসামি এম এ সালাম শারীরিক অসুস্থতার কারণে আদালতে উপস্থিত হতে না পারায় তাকে জামিন দেওয়া হয়নি। বরং তাকে জেলহাজতে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য জেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এম এ সালামের বর্তমান শারীরিক অবস্থা জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শারীরিক অবস্থার রিপোর্ট পাওয়ার পর তার জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আদালত।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রিসিকিউটর (পিপি) মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্যানেল আইনজীবী মাসুদ রানা খান, আসামিপক্ষের সিনিয়র আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ, আইনজীবী ইমানুর রহমান, জেসমিন আক্তারসহ আরও বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর এ মামলার ২০ জন আসামির মধ্যে পাঁচজন ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন জানান। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের বিচারক হুমায়ুন কবীর তাদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠান।

মামলা সূত্রে জানা যায়, প্যারাগন লেদারের শেয়ার জালিয়াতির অভিযোগের ভিত্তিতে বিএসইসি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত শেষে ওই কমিটি ২০০১ সালের ৩১ মে প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আসামিগণ কোম্পানির শেয়ার জাল করার ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা রাখে। পরে এই জাল শেয়ার সার্টিফিকেট কিছু ব্যক্তি ও কোম্পানিটির কিছু কর্মকর্তা ঋণের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে জমা দেয়। আর ওইসব জাল শেয়ার সার্টিফিকেট ব্যাংকের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে আসে। শেষপর্যন্ত ওই সব শেয়ার বাজারে এসে মারাত্মক বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি করে এবং নির্দোষ বিনিয়োগকারীদের সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, জাল শেয়ার গ্রহণ করা ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা আসামিগণের প্রত্যেকের জন্য প্রায় ২০ লাখ টাকা করে ঋণ নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। এ ছাড়া আসামিদের দু’জন জাল শেয়ার সার্টিফিকেটের মাধ্যমে সন্ধানী ক্রেডিট এ্যান্ড কো-অপারেটিভ ও চার্টার্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি থেকে ঋণ গ্রহণ করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিটি ওই সময় তিন প্রকার শেয়ার ইস্যু করে, যা ইস্যু করার মতো আইনগত কোনো ভিত্তি ছিল না। আর ফুজি বাংলা নামের কোরিয়ান কোম্পানি থেকে বিল্লি নামের একজনকে প্যারাগন লেদারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক করার সমঝোতা স্বাক্ষর হয়। কিন্তু এটি মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হওয়া সত্ত্বেও গোপন করে কোম্পানিটি। আর এই তথ্য গোপন রেখে আসামিরা কোম্পানিটির শেয়ার ক্রয় করে স্বার্থ হাসিলের জন্য।

প্যারাগন লেদারের শেয়ার জালিয়াতি নিয়ে কোম্পানিসহ ২০ জনকে আসামি করে ২০০১ সালে মামলা করে বিএসইসি। আসামিরা হলেন— এম এ সালাম, আবুল কালাম আজাদ, নূর মোহাম্মদ, কোম্পানির এ্যাডভাইজার আব্দুস সালাম, এস এস জুনায়েদ বাগদাদী, মো. কুতুবউদ্দিন, মো. আরব মিয়া, আলী আহম্মেদ, মো. নূরুল আফসার, মো. কলিমউদ্দিন, মো. জালাল উদ্দিন, হেমন্ত বাইন, এবিএম মোরশেদুল হক, মো. সাইফুল্লা মিজান, শামসুল হাদী, মো. বশির আলম, মাহবুবুর, মাহবুবুর রহমান, মোয়াজ্জেম হোসেন ও প্যারাগন লেদার এ্যান্ড ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/অ/মু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.