আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৪ অক্টোবর ২০১৫, রবিবার |

kidarkar

৮.৫ শতাংশ শেয়ার ট্রান্সফারের তথ্য উধাও!

hidelশেয়ারবাজার রিপোর্ট: ১৯৯৬ সালে চিটাগং সিমেন্ট বর্তমানে হাইডেলবার্গ সিমেন্টের শেয়ার ট্রান্সফারের তথ্য খুঁজে পায়নি কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ।

তাই চিটাগং সিমেন্টের উদ্যোক্তা টি কে রিফাইনারি লিমিটেডের কাছে থাকা ৫১ শতাংশ শেয়ার কিভাবে ৮.৫ শতাংশ কমে ৪২.৫ শতাংশ হলো এ বিষয়ে কোন তথ্য জানা যায়নি।

৪ অক্টোবর রবিবার অনুষ্ঠিত স্বাক্ষী জেরায় পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ১৯৯৬ সালে চিটাগং সিমেন্ট শেয়ার কারসাজির মামলায় (ট্রাইব্যুনাল মামলা নং-১৯/১৫) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আইনজীবী মো: মাসুদ রানা খানের প্রশ্নের মুখে চিটাগং সিমেন্ট বর্তমান হাইডেলবার্গ সিমেন্টের কর্মরত কোম্পানি সেক্রেটারি মো: মোস্তাফিজুর রহমান (স্বাক্ষী) তথ্য খুঁজে না পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।

এর আগে মাসুদ রানা আদালতের কাছে কোম্পানির ১৯৯৪-১৯৯৫, ১৯৯৫-১৯৯৬, ১৯৯৬-১৯৯৭ এই তিন অর্থবছরের শেয়ার ট্রান্সফার রেজিস্ট্রার, বুক ক্লোজিং রেজিস্ট্রার এবং শেয়ার রেজিস্ট্রারের তথ্য জানতে চান।

স্বাক্ষীকে জেরার সময় বিএসইসির আইনজীবী আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ১৯৯৪-১৯৯৫ সালের নিরীক্ষিত বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী চিটাগং সিমেন্টের উদ্যোক্তা টি কে রিফাইনারি লিমিটেডের কাছে ৫১ শতাংশ এবং সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কাছে ৪৯ শতাংশ শেয়ার ছিল। ১৯৯৫-১৯৯৬ সালের নিরীক্ষিত বার্ষিক প্রতিবেদনেও এই উদ্যোক্তা ও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের সমপরিমাণ শেয়ার দেখানো হয়েছিল। কিন্তু ১৯৯৬-১৯৯৭ সালের নিরীক্ষিত বার্ষিক প্রতিবেদনে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানটির কাছে থাকা ৫১ শতাংশ শেয়ার থেকে ৮.৫ শতাংশ কমে ৪২.৫ শতাংশ দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কাছে থাকা ৪৯ শতাংশ থেকে ৮.৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৫৭.৫ শতাংশ দেখানো হয়েছিল। আর এ শেয়ারগুলো কোথায় কার পোর্টফোলিওতে ট্রান্সফার হয়েছে এ বিষয়ে কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কোম্পানি সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান আদালতকে বলেন, শেয়ার ট্রান্সফার রেজিস্ট্রার পাওয়া যায়নি। তাই এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া যাচ্ছেনা।

এই বিষয়ে বিএসইসি’র আইনজীবী বলেন, ন্যায়বিচারের স্বার্থে ১৯৯৬ সালে কোম্পানিটির শেয়ার ট্রান্সফার রেজিস্ট্রারের তথ্য আদালতে উপস্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি।

এই সময় আদালত বলেন, শেয়ার ট্রান্সফারের তথ্য না পাওয়ার বিষয়ে আদালত পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবে।

এই সময় আসামী আবু তৈয়বের পক্ষে আইনজীবী খোন্দকার মাহবুব হোসেন, ডিএসই’র সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান পক্ষে মো: মহসিন রশীদ স্বাক্ষীকে জেরা করেন। অপর আসামি বুলবুল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: শহিদুল হক বুলবুল আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।

মহসিন রশিদের জেরা থেকে জানা যায়, বোনাস শেয়ার এবং রাইট শেয়ার ব্যাতিত আসামী রকিবুর রহমানের পোর্টফোলিও থেকে ঘটনার সময় চিটাগং সিমেন্টের কোন শেয়ার বিক্রি হয়নি এবং কেনাও হয়নি। বরং বোনাস শেয়ার ও রাইট শেয়ারের কারণে তার পোর্টফোলিওতে শেয়ার সংখ্যা বেড়েছিল।

এই সময় বিচারক ৬ অক্টোবর পরবর্তী জেরার দিন ধার্য করে আদালত মুলতবি ঘোষণা করেন।

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে আসামী আবু তৈয়ব টি কে ওয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিটাগং সিমেন্টের চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া মামলার অপর আসামীরা হলেন চিটাগং সিমেন্টের পরিচালক রকিবুর রহমান ও মো: শহিদুল হক বুলবুল।

মামলার চার্জশিট থেকে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে চিটাগাং সিমেন্টের শেয়ার কেলেঙ্কারির দায়ে রকিবুর রহামনসহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়— আসামিরা ১৯৯৬ সালে চিটাগাং সিমেন্টের পরিচালক ছিলেন। ভারতীয় ও ইরানী বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির শেয়ার কিনবে বলে আসামিরা মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছড়িয়ে শেয়ার মূল্য প্রভাবিত করেন। এ ব্যাপারে পরবর্তীকালে চিটাগাং সিমেন্টের পক্ষ থেকে সন্তোষজনক কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। এরপর কোম্পানির একজন পরিচালক বড় অংকের শেয়ার হস্তান্তরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এছাড়া বিএসইসির নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও রকিবুর রহমান ও এএস শহিদুল হক বুলবুল পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেননি। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ এর ১৭ ধারা অনুসারে কারসাজি।

পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আমিরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। তিন মাস পর ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ তদন্ত কমিটি সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে আসে। আর এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৯৯৭ সালের ৪ মে মহানগর মূখ্য হাকিম আদালতে মামলা করে বিএসইসি। মামলাটি পরবর্তীকালে বিচারের জন্য প্রথম অতিরিক্ত দায়রা আদালত ঢাকায় বদলি করা হয়। এই আদালতে থাকাকালীন সময়ে মামলাটির বাদীর সাক্ষ্য শেষ হয়। পরবর্তীকালে মামলার আদালত পরিবর্তনের নির্দেশ এলে বাদী পক্ষের সম্মতিতে নিম্ন আদালতের আদেশের উপর স্থগিত আদেশ দেন উচ্চ আদালত। এরপর বিএসইসির ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর মামলাটি এই আদালতে স্থানান্তর করা হয়।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/অ/মু

 

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.