আজ: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৯ অক্টোবর ২০১৫, সোমবার |

kidarkar

প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা উধাও: নির্বাক দায়িত্বশীলরা

indexশেয়ারবাজার রিপোর্ট: টানা তিন দিনের সূচকের ব্যাপক পতনে দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বাজার মূলধন কমেছে। আর সূচকের এমন ভরাডুবির কারণে ফোর্স সেলও বেড়েছে। বাজারের এমন অবস্থায় পুঁজি হারিয়ে আবারও পথে বসতে চলেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

কিন্তু উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে টানা ভরাডুবির নেপথ্যে কি কি কারণ থাকতে পারে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরাও স্পষ্ট কোন ধারণাই দিতে পারছেন না। এমন অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও সম্পুর্ণ নীরব এবং নিষ্ক্রিয় রয়েছেন।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা যায়, গত তিন কার্যদিবসে ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩.৫৯ শতাংশ অর্থাৎ ১৭১.৬৩ পয়েন্ট কমেছে। সূচকের এমন পতনের কারণে বাজার মূলধন কমেছে ৯ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। আর শেয়ার দরের এমন পতনের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে ফোর্স সেলও অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে নিস্ব হতে চলেছে।

অপরদিকে দেশর অপর শেয়ারবাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএসসিএক্স এ সময়ে ৩.৭৮ শতাংশ ৩৩৭.১৪ পয়েন্ট কমেছে। সূচকের এমন পতনের কারণে সিএসই’র বাজার মূলধন কমেছে ৯ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা।

এর আগে ২০১৪ এর শেষের দিকে বাজারের এমন পতনের কারণে বিএসইসি এক জরুরি সভার আয়োজন করেছিল। সভায় বিএসইসি’র পক্ষ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং স্টেক হোল্ডারদের সক্রিয় হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। বিএসইসি’র এমন উদ্যোগে পরদিনই বাজার পুনরায় উত্থানে ফিরে এসেছিল। কিন্তু এবার বিএসইসি’র পক্ষ থেকে এমন উদ্যোগ নেয়া হবে কিনা এ বিষয়ে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

সম্প্রতি পুঁজিবাজারের উন্নয়ন নিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান সগর্বে বলেছিলেন, পুঁজিবাজার ২০১০ সালের মহাধস কাটিয়ে সম্পূর্ণ স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। তিনি আরও বলেছিলেন, গুজব ও হুজুগ মুক্ত পুঁজিবাজার গড়ে তোলার জন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

এদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এক আলোচনা সভায় বলেছিলেন, কেউ চাইলে কিংবা কোন গুজবেও বর্তমানে পুঁজিবাজারের পতন ঘটানো যাবেনা।

দায়িত্বশীলদের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে গত তিন দিনের পতন নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সাথে আলাপকালে তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কিছু কিছু আইনের পরিবর্তন ঘটেছে সত্য কিন্তু বিএসইসি যেসব কোম্পানিকে অতিরিক্ত প্রিমিয়াম দিয়ে আইপিও অনুমোদন দিচ্ছে তাতে বাজারে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ি বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এসব কোম্পানি বাজারের ব্যাপক ক্ষতি করছে। অপরদিকে দুর্বল এ বাজারের উন্নয়নে বিএসইসি ব্যাংকের এক্সপোজার লিমিটের সময়সীমা বাড়ানো নিয়ে এখনো দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। তারা বরাবরই বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর চাপিয়ে গেছে।

এদিকে বাজারের এমন ভরাডুবি সম্পর্কে ডিএসই’র উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে তারা নির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে পারেনি।

অপরদিকে একাধিক মার্চেন্ট ব্যাংকার এবং স্টেক হোল্ডাররা মনে করছেন, সম্প্রতি দেশে বিদেশী হত্যাকান্ড, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বিদেশী রাষ্ট্রের উদ্বেগ, মানি লন্ডারিং নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাদের কঠোর নজরদারি, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ১২টি দেশের টিপিপি চুক্তির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে। তার জেরই পুঁজিবাজারে পড়ছে।

তবে এর থেকে কিভাবে উত্তরণ করা যায় এ বিষয়ে কোন দায়িত্ব এড়ানো ছাড়া আর কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

তবে বাংলাদেশের শেয়ারবাজরে ধস অব্যাহত থাকলেও এশিয়ার প্রধান দেশগুলোর শেয়ারবাজার গত দুই কার্যদিবস উর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে। সেখানকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থাৎ ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় পুঁজিবাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিনিয়োগকারীরা অনিশ্চয়তা ঝেড়ে পুনরায় সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। কিন্তু ফেডারেল রিজার্ভের এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে স্পর্শ করতে পারেনি।

এ বিষয়ে বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান এবং তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি ঘটনা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে মানি লন্ডারিং এবং টিপিপি চুক্তি নিয়ে সবার মধ্যে এক ধরণের অস্বচ্ছতা তৈরি হয়েছে।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/তু/অ/মু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.