পুঁজিবাজারে ব্যাংকের এক্সপোজার নিয়ে বিবি’র লুকোচুরি: পাওয়া যাচ্ছে না সঠিক তথ্য
সানি আহম্মেদ : পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর কি পরিমাণ বিনিয়োগ করা হয়েছে তার সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। আইনে ব্যাংকগুলোর সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে ইক্যুইটি ইনভেষ্টমেন্ট বা পেইড আপ পুঁজিবাজার এক্সপোজার হিসেবে যোগ করতে না বললেও বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) সেটা করিয়ে নিচ্ছে।
ব্যাংক কোম্পানি আইনে সাবসিডিয়ারিতে ঋণ প্রদান পুঁজিবাজার এক্সপোজার হিসেবে গণ্য করতে বলা হয়েছে। কিন্তু সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে ইক্যুইটি ইনভেষ্টমেন্ট বা পেইডআপকে পুঁজিবাজার এক্সপোজার হিসেবে গণ্য করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারেই সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে ইক্যুইটি ইনভেষ্টমেন্ট বা পেইড আপকে পুঁজিবাজার এক্সপোজার হিসেবে গণ্য করতে নিষেধ করা হয়েছে।
এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেই নিজের আইন ভঙ্গ করছে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে আরো বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ থাকলেও ব্যাংকগুলো তা পারছে না।
জানা যায়, দ্য ব্যাংক কোম্পানি (এমেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট,২০১৩ তারিখ ১৪/০৭/২০১৩ এর ২৬ক ধারায় বলা হয়েছে, এই আইন কার্যকর হইবার তিন বৎসরের মধ্যে প্রত্যেক ব্যাংক-কোম্পানী এমনভাবে উহার পুঁজিবাজার বিনিয়োগ কোষ পুনর্গঠন করিবে যাহাতে ধারণকৃত সকল প্রকার শেয়ার, কর্পোরেট বন্ড, ডিবেঞ্চার, মিউচুয়াল ফান্ড ও অন্যান্য পুঁজিবাজার নিদর্শনপত্রের মোট বাজারমূল্য এবং পুঁজিবাজার কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়োজিত নিজস্ব সাবসিডিয়ারি কোম্পানী বা কোম্পানিসমূহ বা অন্য কোন কোম্পানি বা কোম্পানীসমূহে প্রদত্ত ঋণসুবিধা এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে গঠিত কোন প্রকার তহবিলে প্রদত্ত চাঁদার পরিমাণ সমষ্টিগতভাবে উহার আদায়কৃত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন্ড আর্নিংস এর মোট পরিমাণের ২৫ (পঁচিশ) শতাংশের অধিক না হয়।
অর্থাৎ পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর যে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি রয়েছে সেগুলোতে ঋণ প্রদান করলে সেটা এক্সপোজার হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক্সপোজারের যে ফরম্যাট দেয়া হয়েছে সেখানে সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে ইক্যুইটি ইনভেষ্টমেন্টকে পুঁজিবাজার এক্সপোজার হিসেবে ধরা হচ্ছে।
অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজের সার্কুলারেই (DOS Circular No. 04/2011 dated 24/11/2011) বলা হয়েছে যে, ক্যাপিটাল মার্কেটের সাবসিডিয়ারি (ব্রোকারেজ হাউজ/মার্চেন্ট ব্যাংক/অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি) কোম্পানির ইক্যুইটি ইনভেষ্টমেন্ট বা পেইড আপ ক্যাপিটাল ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজার এক্সপোজার হিসেবে যোগ হবে না। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি ইক্যুইটি ইনভেস্টমেন্টও পুঁজিবাজার এক্সপোজার হিসেবে যোগ হবে না। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেই নিজের আইন ভঙ্গ করছে।
ধরা যাক, কোনো ব্যাংক তার সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে ৯০ কোটি টাকা পেইড আপ ক্যাপিটাল বা ইক্যুইটি ইনভেষ্টমেন্ট হিসেবে দেয়া হলো। এটা কোনো ঋণ হিসেবে দেয়া হয় নাই। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক্সপোজারের যে ফরম্যাট দেয়া হয়েছে সেখানে সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে ইক্যুইটি ইনভেষ্টমেন্টকে পুঁজিবাজার এক্সপোজার হিসেবে ধরা হচ্ছে। যা আইনের পরিপন্থী।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে (সুতাংশু কুমার) সুর চৌধুরী বলেন, সারা বিশ্বে পুঁজিবাজারের দায়দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংক নেয় না। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেয়া বিভিন্ন নীতি ও সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারে প্রভাব ফেলে। তারপরও আমরা নিজেদের অস্তিত্বের কথা চিন্তা করে পুঁজিবাজারকে সহায়তা দিয়ে আসছি। ব্যাংকগুলোর সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে ইক্যুইটি ইনভেষ্টমেন্ট বা পেইড আপকে পুঁজিবাজার এক্সপোজার হিসেবে ধরা হচ্ছে, এটা ঠিক। আমরা শিগগিরই এটিকে শেয়ারবাজার এক্সপোজার লিমিট গণনার বাইরে রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোতে ৫ হাজার ৫০০ কোটি থেকে ৬ হাজার কোটি টাকার ইক্যুইটি ইনভেষ্টমেন্ট রয়েছে। যা পুঁজিবাজার এক্সপোজার হিসেবে দেখানো হচ্ছে। অথচ আইনে এসব অর্থ পুঁজিবাজার এক্সপোজার হিসেবে দেখানোর কথা বলা হয়নি। এমনকি আইনে নিষেধ পর্যন্ত করা হয়েছে। এসব অর্থ এক্সপোজার হিসেবে ধরা না হলে ব্যাংকগুলো আরো বেশি পরিমাণ অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
শেয়ারবাজারনিউজ/ম.সা