অক্টোবরে ৩৭ হাজার কোটি টাকা হারিয়েছে পুঁজিবাজার
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: চলমান মন্দা পরিস্থিতিতে অক্টোবর মাসে দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ সম্মিলিতভাবে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা বাজার মূলধন হারিয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) হারিয়েছে ১৮ হাজার ৬৫৯ কোটি ২৯ লাখ ৫৬ হাজার টাকা এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) হারিয়েছে ১৭ হাজার ৪২ লাখ ৪২৩ কোটি ৩২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডিএসইতে অক্টোম্বর মাসজুড়ে লেনদেন হওয়া মোট ২০ কার্যদিবসের ১২ দিনই সূচকে পতন ঘটেছে। এ পতনের মাত্রাও ছিলো অন্যান্য মাসের তুলনায় অত্যাধিক। আর এ সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমছে ২৮৭.৬০ পয়েন্ট বা ৬ শতাংশ। এদিকে সিএসইতে লেনদেন হওয়া মোট ২০ কার্যদিবসের ১৪ দিনই সূচকে পতন ঘটেছে। এ সময়ে সাধারণ মূল্য সূচক কমছে ৫৪৩.৫০ পয়েন্ট বা ৬ শতাংশ।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, সেপ্টেম্বরে ডিএসইর বাজার মূলধনের পরিমাণ ছিলো ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। আর অক্টোবর মাস শেষে এ মূলধন ১৮ হাজার ৬৫৯ কোটি ২৯ লাখ ৫৬ হাজার বা ৬ শতাংশ কমে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮৯০ কোটি টাকায় নেমে গেছে। এদিকে আলোচিত সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ৪ হাজার ৮৫২.০৮ থেকে ২৮৭.৬০ পয়েন্ট বা ৬ শতাংশ কমে ৪ হাজার ৫৬৪.৪৮ পয়েন্টে অব্স্থান করছে।
এদিকে সেপ্টেম্বর শেষে সিএসইর বাজার মূলধনের পরিমাণ ছিলো ২ লাখ ৬৮ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। আর অক্টোবর মাস শেষে এ মূলধন ১৭ হাজার ৪২ লাখ ৪২৩ কোটি ৩২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা বা ৭ শতাংশ কমে ২ লাখ ৫১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকায় নেমে গেছে। এদিকে আলোচিত সময়ে সিএসইর সাধারণ মূল্য সূচক ৯ হাজার ৩৫.১২ থেকে ৫৪৩.৫০ পয়েন্ট বা ৬ শতাংশ কমে ৮ হাজার ৪৯১.৬২ পয়েন্টে অব্স্থান করছে।
সূচকের অব্যাহত পতনের প্রতিবাদে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় বিক্ষোভ করেছেন।
বাজারে এমন অস্থিরতার মধ্যেও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান এম. খায়রুল হোসেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজার অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় সম্পূর্ণ স্থিতিশীল রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, স্টক এক্সচেঞ্জের পিই রেশিও বিনিয়োগ বান্ধব রয়েছে। পাশাপাশি দেশের জিডিপিতে ক্যাপিটাল মার্কেটের অংশগ্রহণ বাড়ছে। তাই বিদেশী বিনিয়োগকারীদের দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্লেষকরা জানান, পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত যে বিনিয়োগ রয়েছে আগামী বছরের জুলাইয়ের মধ্যে তা নির্ধারিত সীমার নিচে নামিয়ে আনতে হবে। সেটি করতে গেলে হাতে গোনা কিছু ব্যাংককে অতিরিক্ত শেয়ার বিক্রি করতে হবে। কিন্তু এর সময়সীমা বাড়াতে বিনিয়োগকারীদের দাবী থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো কোনো ধরনের দায়িত্বশীল ভূমিকা নিচ্ছে না। আর প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের অনেকের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, বাজারের দরপতনের জন্য এটি খুব বড় কোনো কারণ নয়। বাজারের সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে যখন মন্দাভাব চলে তখন ক্রেতা কমে যায়। উল্টো অনেক বিনিয়োগকারী মনে করেন, যেহেতু ধারাবাহিকভাবে দরপতন ঘটছে সেহেতু হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে চুপচাপ বসে থাকাই নিরাপদ। এ প্রবণতার কারণেই মূলত মন্দা বাজারে দরপতন আরও ত্বরান্বিত হয়। বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীরা মন্দা বাজারেই শেয়ার কেনেন। অথচ আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘটে ঠিক উল্টোটা।
শেয়ারবাজারনিউজ/ম/স