বিইআরসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপীল করেছে তিতাস গ্যাস
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: ভোক্তাপর্যায়ে গ্যাসের মূল্য বাড়লেও বিতরণকারী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের চার্জ কমিয়েছে জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। আর বিইআরসি’র এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ-আদালতে আপীল করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এ কোম্পানিটি।
ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, বিইআরসির আদেশে গত ২৭ আগস্ট থেকে সব ধরনের গ্রাহক শ্রেণীভিত্তিক গ্যাসের মূল্য পুনর্নির্ধারণ অর্থাৎ বাড়ানো হয়, যা ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। কিন্তু গ্রাহক পর্যায় গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হলেও প্রতিষ্ঠানটির আয়ের প্রধান উৎস বিতরণ চার্জ গড়ে প্রায় ৫৮ শতাংশ কমিয়েছে বিইআরসি।
জানা যায়, বর্তমানে বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ পাওয়ার, সার, শিল্প, চা বাগান, বাণিজ্যিক, সিএনজি ফিড গ্যাস এবং গৃহস্থালি কাজে প্রাকৃতিক গ্যাসের সংযোগ প্রদান ও বিতরণের কাজ করে তিতাস গ্যাস। এর মধ্যে বিতরণ চার্জ সবচেয়ে বেশি কমানো হয়েছে বাণিজ্যিক পর্যায়ে। আগে বাণিজ্যিক খাতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের জন্য তিতাস গ্যাসের বিতরণ চার্জ ছিল ১ টাকা ৭৩ পয়সা, যা ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ দশমিক ৫ পয়সায় নামিয়ে আনা হয়েছে। এ হিসাবে এ খাতে বিতরণ চার্জ প্রায় ৮৫ শতাংশ কমেছে। এছাড়া ক্যাপটিভ পাওয়ারে ৭৩ শতাংশ, শিল্প ও চা বাগানে ৭৪ শতাংশ এবং গৃহস্থালিতে বিতরণ চার্জ ৬৬ শতাংশ কমানো হয়েছে। তবে সিএনজি ফিড গ্যাসে বিতরণ চার্জ অপরিবর্তিত রয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও সার কারখানায় গ্যাস বিতরণের চার্জ বাড়ানো হয়েছে। গড়ে তিতাসের বিতরণ চার্জ প্রায় ৫৮ শতাংশ কমেছে।
বিতরণ চার্জ কমানোর কারণে চলতি হিসাব বছরে তিতাস গ্যাসের আয় ও মুনাফা কমিয়ে দেবে বলে আশঙ্কা করছেন বিনিয়োগকারী ও বাজারসংশ্লিষ্ট অন্যরা।
জানা গেছে, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে তিতাস গ্যাসের পুনর্নির্ধারিত বিতরণ চার্জ কার্যকর হয়েছে। এরই মধ্যে কোম্পানির মুনাফায় বিতরণ চার্জ কমার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তিতাস গ্যাসের মোট (গ্রস) মুনাফার প্রায় ৯৫ শতাংশই আসে বিতরণ চার্জ থেকে। কোম্পানিটির হিসাব বছর শেষ হয় জুনে। এ হিসাবে চলতি প্রথম প্রান্তিক থেকেই তিতাস গ্যাসের মুনাফা প্রভাবিত হচ্ছে।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেখা যায়, কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১.৫৭ টাকা। যা ২০১৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ছিল ২.৩৭ টাকা। অর্থাৎ গ্যাস বিতরণ চার্জ কমে যাওয়ায় কোম্পানির মুনাফা তিন মাসে ৩৪ শতাংশ কমেছে।
এদিকে, জারি করা আদেশে বিতরণ চার্জ কমানোর যুক্তি হিসেবে বিইআরসি জানিয়েছে, ২০১৪-১৫ হিসাব বছরে রেভিনিউর লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রতি ঘনমিটারের বিপরীতে তিতাস গ্যাসের গড়ে ২৯ পয়সা প্রয়োজন হয়। বিদ্যমান অন্যান্য আয় (গ্যাস ট্রান্সমিশন চার্জ, সুদ ও বিবিধ আয়) বাবদ ৪২ পয়সা প্রাপ্তি বিবেচনায় তিতাস গ্যাস কোম্পানির বিতরণ চার্জ বাবদ আর কোনো আয়ের প্রয়োজন হয় না। তবে ভোক্তাপর্যায়ে গ্যাসের মূল্যহার অভিন্ন রাখার স্বার্থে গ্যাস বিতরণ চার্জ ভারিত গড়ে প্রতি ঘনমিটারে ২২ দশমিক ৬৮ পয়সায় পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
এদিকে মুনাফা কমে যাওয়ার সংবাদে তিতাস গ্যাসের শেয়ারে টানা দরপতন দেখা দিয়েছে। গত ২৩ কার্যদিবসে এ কোম্পানির শেয়ারদর প্রায় ৩৫ শতাংশ কমেছে। শেয়ারদর কমার কারণ অনুসন্ধানে গতকাল (১১ নভেম্বর) পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
২০০৮ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত তিতাস গ্যাসের পরিশোধিত মূলধন ৯৮৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৫ হিসাব বছরের জন্য কোম্পানিটি গতকাল ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এ সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ৯৮ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ১০ টাকা ৩৮ পয়সা। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ৩৮ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।
শেয়ারবাজারনিউজ/অ/মু