পুঁজিবাজারের মধ্য গগনে অগ্নি মেঘ
আমার আজকের অভিব্যক্তি কিংবা স্বতলব্ধ জ্ঞানের বহিপ্রকাশ কোনো ব্যক্তি বিশেষ কে বড় বা ছোট করার জন্য নয় বা আমার কোনো ব্যক্তিস্বার্থ কিংবা আন্তরিকতা কিংবা বাগড়ম্বরের জন্য নয়। আমার লিখনির কারণে যদি কোনো ব্যক্তি, সর্বশান্ত, প্রান্তিক বিনিয়োগকারী কষ্ট পান তাহলে আমি আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমার আজকের আকুতি, আর্থিক হাহাকার কেবল আর্ত মানবতার জন্য। রক্তচোষা খুনী লুটেরা কারসাজিবাজদের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান।
দেখুন আজকে একটা নেহায়েত তুচ্ছ এক্সপোজার লিমিটের কারণ তুলে মাকের্টকে এভাবে ধ্বস নামালো। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর এস কে. সুর চৌধুরীর মন্তব্যের মাধ্যমে জানতে পারলাম যে ৩টি ব্যাংক কেবল এক্সপোজার লিমিটের আওতার বাইরে আছে অথচ তারা বলছে প্রত্যকেটা মার্চেন্ট ব্যাংক এক্সপোজার লিমিটের চাপে আছ। আজ পুঁজিবাজারের মধ্য গগন অগ্নি মেঘে মেঘাচ্ছন্ন। মুষ্ঠিমেয় ৪০০ থেকে ৫০০ লোকের হাতে আজ প্রায় ৩৫ লক্ষ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর ভাগ্য অবরুদ্ধ।
২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে ২০১৫ এর ৪ মে পর্যন্ত একটানা মার্কেটকে ক্রাশ পয়েন্ট এ যখন নিয়ে আসলো তখন কিন্তু কোনো এক্সপোজার নাটক ছিল না। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে ব্যাংক ও তাদের সাবসিডিয়ারী মার্চেন্ট বাংকগুলো যদি মনে করেন আমার এত বোকা, বেয়াকুফ তাহলে সেটা তাদের চরম বোকামি।
গত কয়েক মাসে সুনামিতুল্য পুঁজিবাজারে ভূমিকম্পে ইনডক্সে ৮.৮ শতাংশ কমলেও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির পরিমাণ অনেক অনেক বেশি। তাদের অনেকের মোট বিনিয়োগের ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত হারিয়েছেন। কে ফিরিয়ে দিবে লক্ষ ভাগ্যহত ক্ষুদ্র বিনিয়োগতকারীর সপ্নীল জীবনবোধকে। যারা কবেলমাত্র বাঁচতে চয়েছিলো ডাল-ভাতে!
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে ব্যাংক ও তাদের সাবসিডিয়ারী মার্চেন্ট বাংকগুলোর বিনিয়োগ নিয়ে বা সমন্বয়ের দাবি আদায়ে এমন দুঃসহ পরিস্থিতি তৈরি। এতে জিম্মী করা হয়েছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের। সুনামিতে বড় পুঁজির প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা একঢিলে দুই পাখি মারার ফন্দি করছে। একদিকে তাদের কাঙ্ক্ষিত এক্সপোজার লিমিট এবং বর্ধিত সময়ের দাবী আদায়। অপরদিকে দাবী পূরণ শেষে বাজার ভালো হলে বৃহত্তর লাভও তারা বুঝে নেবে। কারণ, ধসের মূলে বড় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় ভূমিকাতেই ছিল ইন্সটিটিউশনাল বিনিয়োগকারীরা। প্রথমে তারা সেল প্রেসার দিয়ে পেনিক তৈরি করেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দিশেহারা হয়ে বিক্রি শুরু করলে তারাই আবার শেয়ার কম দামে কিনছে। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে লুণ্ঠন প্রক্রিয়ার দ্বারা তাদের বিনিয়োগ ঝুঁকি কমিয়ে নিয়েছে।
তারা কিন্তু আতঙ্ক সৃষ্টি, ম্যানিপুলেশন ষড়যন্ত্র করছে। যে কোনো শেয়াররের দাম কমানোর কিংবা বাড়ানোর জন্য তারা সেটাই করে যখন যেটা প্রয়োজন। আমরা নিশ্চয় জেনে থাকব যে তাদের অপরাধগুলো বাংলাদশে দন্ড বিধির ২৪, ২৫ এর ধারা অনুযায়ী ৫ বছরের জেল বা ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা, অথবা উভয়ই। তারা যেভাবে ম্যানিপুলেশন ও ষড়যন্ত্র করছে ডিএসইর সার্ভিল্যান্স সফটওয়্যার মুর্হূতেই সনাক্ত করতে পারে। তাহলে কেন তারা আইনের আওতায় আসছে না। তারা কি আইনের ঊর্ধ্বে। বিএসইসি, ডিএসই, পাবলিক প্রসিকিওশান আমাদের কে বলে দিক যে তারা আইনের ঊর্ধ্বে। তারপর আমরা রাষ্ট্রের নাগরিকরা দেখব কত ধানে কত চাল হয়।
ধরুন, ৬০ টাকায় ১০০০ স্টক আপনি ১০ টাকা লসে সেল দিয়ে ওই কোম্পানির ১,৬৫০টি স্টক যদি আবার ৩০ টাকায় কিনে নিতে পারেন, তবে কেমন হয়? দুবার ক্রয়-বিক্রয়ে ব্রোকাজের কমশিন! আপনার নতুন কেনা স্টকগুলোর গড়মূল্য দাঁড়াবে ৩৬ টাকা! কী আশ্চর্য হচ্ছেন? কত সহজে আপনি গড় ক্রয় মূল্য ৬০ টাকা থেকে ৩৬ টাকায় নামিয়ে আনলেন। এমন কাজ করেছে অনেক ইন্সটিটিউশন।
এবার শুধু এক্সপোজার লিমিটের দাবী আদায় হলেই ষোলকলা পূর্ণ, তা না কিন্তু৷ এদের আকাঙ্ক্ষা যে আকাশ কে স্পর্শ করছে৷ আপনি যদি ওই রথী মহারথীদের অফিসে যান দেখবেন তাদের চাকচিক্ক, শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত আয়েশী জীবনযাপন , ভোগ সম্ভোগ-এ নির্লিপ্ত জীবন৷ ইন্দ্রিয়ানন্দানুভুতির টানে যাদের অনেকেই ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত থাকে৷ যন্ত্রণার সাথে লক্ষ্য করছি যে, ভাগ্যহত সেই হতদরিদ্র্য যারা দারিদ্র্য-এর নির্মম কষাঘাতে নিমজ্জিত, সেই প্রান্তিক বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ষড়যন্ত্র ও ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে সর্বস্ব লুটে আজ তারা ভোগ-সম্ভোগ, মিথ্যাচার-অনাচার, ন্যায়-নৈতিকতা বিবর্জিত অধিক মুনাফার জন্য লুণ্ঠন-লুঠতরাজ-এ ব্যস্ত ভাগ্যহত,নিঃস্ব বিনিয়োগকারীদের প্রতিটি সন্ধ্যা আর প্রভাত দুঃসহের বার্তা বাহক। ভাগ্যই এ জন্য দায়ী নয়। এ জন্য দায়ী তারা যারা বাজার কে কারসাজি, ষড়যন্ত্র ও ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে সর্বস্ব লুণ্ঠন করেছে ।
এমন স্বাধীন রাষ্ট্র কি আমরা চেয়েছিলাম? এমন স্বাধীন বাংলাদশে কি আমরা চেয়েছিলাম? যেথায় এমন স্বাধীন লুণ্ঠন হবে! যেখানে মানবতা মুখ থুবরে পরবে, হবে বিপন্ন! বিচারহীন-আইনহীন অর্থাৎ যেখানে আইনের প্রয়োগ হবে না কিংবা পশুশক্তির পক্ষে আইন যাবে এমন পৃথিবী কিংবা সমাজ বা রাষ্ট্র তো আমরা কল্পনা করিনি। কিন্তু কেন? কেন আমরা তাদের বর্বর দুষ্কার্য, মানবতাহীন কর্মকান্ডকে চালিয়ে যেতে দিব। আমরা কেন বাধ সাত্তে পারছি না। আমাদের অবশ্যই উচিত বাধ সাধা, আমরা বাধ সাধবো। হায়রে বিধি! হায়রে আমার জন্ম! ক্ষমা কর প্রভু আমায়! তুমি যে দিয়েছিলে গৗেরবান্বিত জীবন,
হায় প্রভু! একি জীবন দিলে তুমি! এ যে অন্ধকারে অন্ধকারাচ্ছন্ন, যে জীবন শুধু দিল প্রবঞ্চনা, যেথায় মনুষ্যত্ব নির্যাতিত ও নিগৃহীত! তুমি তো তোমার মহা পবিত্র কোরানে আবু লাহাব সুরায় জানিয়েছিলে কীভাবে তুমি আবু লাহাব কে ধংস করেছিলে৷ ধংস কর তুমি এই পুঁজিবাজারের মোনাফেক, জালেম, হায়না, চোর, লুন্ঠনকারী ঘৃণ্য পশুদের যেমন করেছিলে আবুলাহাব কে। (ইন্নাল লাহা মাস সাবেরিন)
সাদিক হোসাইন (প্রজ্বলন)
১৬৯/১,শান্তিনগর,ঢাকা-১০০০