বিএসইসি’র ব্যর্থতায় বেকসুর খালাস পেলেন শেয়ার কেলেঙ্কারির আরেক আসামী
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: অভিযোগ প্রমাণে প্রয়োজনীয় নথি উপস্থাপনে বিএসইসি’র ব্যর্থতায় সৌদি-বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এ্যান্ড এগ্রিকালচার ইনভেস্টমেন্টের (সাবিনকো) শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলায় একমাত্র আসামি ও প্রতিষ্ঠানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কুতুবউদ্দিন বেকসুর খালাস পেয়েছেন।
৩০ নভেম্বর সোমবার পুঁজিবাজার মামলা নিষ্পত্তিতে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক হূমায়ুন কবীর এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় বিচারক বলেন, মামলার বাদী পক্ষ (বিএসইসি) আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
আসামীপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিচারক বলেন, বাদীপক্ষ কমপ্লেইন পিটিশন প্রমাণ করতে পারেনি। এ ছাড়া আসামির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে এর স্বপক্ষে সার্ভিলেন্স রিপোর্ট নেই এবং সার্ভিলেন্স রিপোর্টের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটির কোনো প্রতিবেদনও দাখিল করা হয়নি।
সাবিনকোকেও এ মামলায় আসামি করা উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেন বিচারক।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আসামিপক্ষের আইনজীবী বোরহান উদ্দিন সংবাদিকদের বলেন, বাদি জেরায় বলেছেন তিনি মামলা সম্পর্কে জানেন না। আর এ মামলার প্রধান বাদী বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক নির্বাহী পরিচালক মিজানুর রহমানকে আদালতে উপস্থিত করা সম্ভব হয়নি। ফলে কমপ্লেন পিটিশন ট্রাইব্যুনালে প্রমাণীত হয়নি।
এর আগে গত ২৯ নভেম্বর মামলার যুক্তিতর্ক উপাস্থাপনকালে আসামী পক্ষের আইনজীবী বোরহান উদ্দিন ট্রাইব্যুনালকে বলেছিলেন, ‘আসামির বিরুদ্ধে একাধিক ব্রোকারেজ হাউসে একই দিনে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা ঘটনাকালীন আইনত কোনো বাধা ছিল না। এ ছাড়া আসামি শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করে কত টাকা আয় করেছেন তার কোনো তথ্য দিতে পারেনি। যে রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে মামলা করা হয়েছে তাতে সার্ভেল্যান্স রিপোর্টও নাই।’
এ সময় ট্রাইব্যুনালে বিএসইসি’র আইনজীবী মাসুদ খান রানা ও আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. বোরহান উদ্দিন ও এসএম আবুল কালাম উপস্থিত ছিলেন।
গত জুনে কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর এটি ট্রাইব্যুনালের পঞ্চম রায়। এর মধ্যে দুটি মামলায় আসামিরা বেকসুর খালাস পেয়েছেন। এর আগে অক্টোবর মাসে প্লেসমেন্ট শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলার আসামি সাত্তারুজ্জামান শামীম বেকসুর খালাস পেয়েছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আসামি কুতুবউদ্দিনের বিরুদ্ধে ২০০২ সালে নিম্ন আদালতে এ মামলা দায়ের করেছিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ২০১৫ সালের জুন মাসে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর অন্যান্য মামলার সঙ্গে এ মামলাটিও ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়।
এ মামলার বাদী ও বিএসইসির পরিচালক মাহবুবে রহমান চৌধুরীর সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে ৫ অক্টোবর ট্রাইবুন্যালে এ মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। এ মামলায় বাদী পক্ষে মোট ৫ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। এরা হলেন- বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম, পরিচালক মাহবুবে রহমান চৌধুরী, উপ-পরিচালক এ এস এম মাহমুদুল হাসান, সহকারী পরিচালক রকিবুর রহমান ও ডিএসইর সাবেক প্রধান অর্থকর্মকর্তা শুভ্র কান্তি চৌধুরী।
মামলায় মাহবুবে রহমান চৌধুরী ও শুভ্র কান্তি চৌধুরী নির্ধারিত সময়ে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিলেও অপর ৩ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ নিয়ে এক ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। তিন দফায় সময় নিয়েও সাক্ষ্য নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হয় বিএসইসি। পরবর্তীতে সাক্ষ্যগ্রহণ ক্লোজড করে বিএসইসি। কিন্তু সাক্ষ্যগ্রহণ ক্লোজড করার পর নতুন ৩ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করে বিএসইসি। পরে ট্রাইব্যুনাল আবেদন মঞ্জুর করেন এবং ২৪ নভেম্বর ৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়।
৩ সাক্ষীর মধ্যে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম সাক্ষী দেওয়ার জন্য ১ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালে গিয়েছিলেন। কিন্তু মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত না হওয়ায় তার সাক্ষ্যকে ‘আননেসেসারি’ বলে মন্তব্য করেছিলেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক। কিন্তু তারপরও আশরাফুল ইসলামকে পরবর্তীতে সাক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করে বিএসইসি।
কিন্তু এসব সাক্ষীর সাক্ষ্য আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২০০০ সালের জুন থেকে জুলাই পর্যন্ত সাবিনকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কিছু কর্মকর্তা ব্যক্তিগত অসৎ উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন ব্রোকারস হাউসে শেয়ার লেনদেন করতেন। একই দিনে বিভিন্ন ব্রোকারস হাউসে শেয়ার কিনতেন এবং একই শেয়ার অন্য ব্রোকারস হাউসের মাধ্যমে বিক্রয় করতেন। তিনি ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে সাবিনকোর ‘আনসিল’ ফান্ড ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটির জন্য শেয়ার কিনতেন।
শেয়ারবাজারনিউজ/অ/মু