মার্জিন রুলস ৩(৫) এর কার্যকারিতা স্থগিত: ঋণ পরিশোধের চাপে থাকছেন না বিনিয়োগকারীরা
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: মার্জিন রুলস, ১৯৯৯ এর রুলস ৩(৫) এর কার্যকারিতা আরো এক বছর স্থগিত করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আইনটির কার্যকারিতা আগামী ১ জানুয়ারি ২০১৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। সোমবার ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত কমিশনের ৫৬০তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আর কমিশনের এ সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে আগামী এক বছর ঋণ পরিশোধের চাপে থাকছেন না বিনিয়োগকারীরা। যা বাজারের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, মার্জিন রুলস, ১৯৯৯ এর রুলস ৩ (৫) ধারায় বলা হয়েছে, যখনই ইক্যুইটি ক্লায়েন্টের মার্জিন অ্যাকাউন্ট ডেবিট ব্যালেন্সের ১৫০ শতাংশের নিচে নেমে আসে তখন হাউজগুলো ঋণ সমন্বয়ের জন্য ক্লায়েন্টকে অবহিত করবে। যাতে কোনোভাবেই ইক্যুইটি মার্জিন ঋণের ১৫০ শতাংশের কম না হয়। হাউজ কর্তৃপক্ষের ক্লায়েন্টের প্রতি এ সংক্রান্ত চিঠির ৩ দিনের মধ্যে নগদ অর্থ কিংবা মার্জিনেবল সিকিউরিটিজ দিয়ে অতিরিক্ত ঋণ সমন্বয় করবে। যে পর্যন্ত ইক্যুইটি সন্তোষজনক অবস্থায় না আসে সে পর্যন্ত ক্লায়েন্টের লেনদেন বন্ধ থাকবে। ধরা যাক, কোনো বিনিয়োগকারীর ১ লাখ টাকা ডিপোজিটের বিপরীতে আরও ১ লাখ টাকা মার্জিন লোন সুবিধাসহ মোট ২ লাখ টাকার শেয়ারে কিনেছে। বাজার মন্দার কারণে তার বর্তমান শেয়ারের মূল্য ৫০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে তার ইক্যুইটির ডেবিট ব্যালেন্স মার্জিন লোন থেকে ১৫০ শতাংশ কমে গেছে। মার্জিন রুলসের উল্লেখিত ধারা অনুযায়ী হাউজ কর্তৃপক্ষ তাকে চিঠির মাধ্যমে অতিরিক্ত ঋণ পরিশোধের চাপ প্রয়োগ করার পাশাপাশি লেনদেন বন্ধ করে দেবে।
এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজ হাউজের বেঁধে দেয়া সময় মতো বিনিয়োগকারীরা ঋণ পরিশোধ বা সমন্বয় না করে তাহলে তাদের পোর্টফলিওতে থাকা শেয়ার জোরপূর্বক বিক্রি (ফোর্সসেল) করে তাদের পাওনা বুঝে নিতে পারবেন।
কিন্তু বাজার মন্দাবাজার পরিস্থিতিতে এ আইন বহাল থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা নি:স্ব হয়ে যাবেন। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সামগ্রিক পুঁজিবাজারে। এ কারণে এ আইনটি এখন পর্যন্ত কয়েক দফায় স্থগিত করে রেখেছে বিএসইসি।
সর্বপ্রথম ২০১৩ সালের ৪ মার্চ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষ থেকে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে মাইনাসে থাকা পোর্টফলিও পুনর্বিন্যাস এবং ১৯৯৯ সালের মার্জিন রুলসের ৩(৫) ধারা স্থগিত করার দাবি জানানো হয়। তাই ওই বছরের ৯ এপ্রিল বিএসইসির ৪৭৫তম সভায় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ, পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা বিবেচনা এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) আবেদনের প্রেক্ষিতে মার্জিন রুলস,১৯৯৯ এর রুলস ৩(৫) এর কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়। অর্থাৎ যেসব বিনিয়োগকারীর পোর্টফলিওর ইক্যুইটিতে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত মাইনাস রয়েছে বা মার্জিন লোন তার ইক্যুইটির ডেবিট ব্যালেন্সের ১৫০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে তাদের ঋণ পরিশোধের চাপ স্থগিত করে লেনদেনের সুযোগ করে দেয়া হয়। সর্বপ্রথমে এ সুবিধা ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখ পর্যন্ত রাখা হয়।
পরবর্তীতে এ সময় শেষ হলে পুঁজিবাজারের অবস্থা মন্দা থাকায় এ সুবিধার মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখ থেকে ৩১ মার্চ ২০১৪ তারিখ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। পরবর্তীতে গত ৩১ মার্চ পুঁজিবাজার তথা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এর মেয়াদ আরও ৬ মাস পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত এই আইন স্থগিত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। পরবর্তীতে এ আইন স্থগিতের সময় আরও ৬ মাস বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। তারপর আরো দুই দফায় (৬ মাস করে) এ আইন স্থগিতের সময় ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।
এদিকে বর্তমান বাজার পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের দিক চিন্তা করে মার্জিন রুলস, ১৯৯৯ এর ৩(৫) এর কার্যকারিতা আরো এক বছর বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
শেয়ারবাজারনিউজ/ম.সা