এক দিকে, ধীরে হলেও গতি বাড়ছে দেশের অর্থনীতির চাকায়। অন্যদিকে, দেনার দায় কমাতে অংশীদারি বিক্রির পথে হাঁটছে (কিংবা তার কথা ভাবছে) ঘাড়ে ধারের বিপুল বোঝা চেপে থাকা বিভিন্ন সংস্থা।

এই পরিস্থিতিতে ভারতে মোটা মুনাফার গন্ধ পাচ্ছে প্রাইভেট ইকুইটি সংস্থাগুলি। আর সেই কারণেই ওই ধরনের সম্ভাবনাময় সংস্থা এবং প্রকল্পের উপর শ্যেন দৃষ্টি রাখছে তারা।

প্রাইভেট ইকুইটি (পিই) হল সেই সমস্ত লগ্নি সংস্থা, যারা শেয়ার বাজারের বাইরে থেকেও টাকা ঢালে বিভিন্ন সংস্থায়। কেনে অংশীদারি। রীতিমতো কৌশল ছকে, হিসেব কষে কেনা ওই শেয়ার পরে বেশি দামে বিক্রির মাধ্যমে লাভ করার চেষ্টা করে।

এ বছরে ভারতে বিভিন্ন সংস্থায় বিপুল পুঁজি ঢেলেছে এই প্রাইভেট ইকুইটি সংস্থাগুলি। ২০১৫ সালের শেষে ওই অঙ্ক দাঁড়াতে পারে ১,০৮৯ কোটি ডলারে (প্রায় ৭২,৯৬৩ কোটি টাকা)। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৬ সালে ওই অঙ্ক আরও অনেকখানি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।

এর আগে ভারতে প্রাইভেট ইকুইটি সংস্থাগুলির সব থেকে বেশি বিনিয়োগ এসেছিল ২০০৭ সালে। এমনকী ২০১৪ সালেও তা ছিল ৬০০ কোটি ডলার (প্রায় ৪০,২০০ কোটি টাকা)। সুতরাং চলতি বছরেই ওই লগ্নি বেড়েছে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার। কিন্তু তা সত্ত্বেও ২০১৬ সালে বিশেষজ্ঞরা যে ওই ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ডের সম্ভাবনা দেখছেন, তার প্রধান কারণ বহু ‘ভাল’ সংস্থার কাঁধেও এই মুহূর্তে বিপুল ঋণের বোঝা চেপে থাকা। এবং অংশীদারি বেচে তা কমাতে তাদের আগ্রহ।

যেমন সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, প্রাইভেট ইকুইটি সংস্থার মোটামুটি ৬০ কোটি ডলার (৪,০২০ কোটি টাকা) লগ্নি আসতে পারে জিভিকে গোষ্ঠীর সংস্থা জিভিকে এয়ারপোর্ট ডেভেলপার্সে। কারণ, ওই পথে হেঁটে সংস্থাটির ৪৯% অংশীদারি বিক্রির পরিকল্পনা করছে তারা। উপদেষ্টা সংস্থা আলভারেজ অ্যান্ড মার্শালসের ভারতীয় ব্যবসার সহ অধিকর্তা বিক্রম উত্তমসিংহের মতে, ‘‘কাঁধে ধারের বোঝা চেপে থাকায় এ ধরনের লগ্নি দেখা যাবে আরও
অনেক সংস্থাতেই।’’

আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতে প্রাইভেট ইকুইটি সংস্থাগুলির লগ্নির সংখ্যা যে শুধু বাড়ছে, তা-ই নয়। সেই সঙ্গে বাড়ছে ওই বিনিয়োগের গড় অঙ্কও। যেমন, এ বছর ব্রিটিশ আউটসোর্সিং সংস্থা সের্কো-র ভারতীয় ব্যবসা ৩৭.২০ কোটি ডলারে কিনেছে মার্কিন প্রাইভেট ইকুইটি বহুজাতিক ব্ল্যাকস্টোন।

অথচ কিছু দিন আগেও কোনও সংস্থা বা প্রকল্পে প্রাইভেট ইকুইটি সংস্থার লগ্নির গড় মাপ ছিল ২ থেকে ২.৩০ কোটি ডলার। সম্প্রতি দেনার বোঝা কমাতে মার্কিন সংস্থা টিপিজি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টকে নিজেদের মোবাইল টাওয়ারের ব্যবসা বিক্রি করার কথা জানিয়েছে রিলায়্যান্স কমিউনিকেশন্সও।

আগামী দু’বছরে দেনা কমাতে ১০০ কোটি ডলার তুলতে চায় জিএমআর গোষ্ঠী। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, এ জন্য প্রাইভেট ইকুইটির রাস্তায় হাঁটবে তারা। বেচবে বিমানবন্দর ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অংশীদারি। একই ভাবে, ৩০ কোটি ডলারে এসবিআই কার্ডস অ্যান্ড পেমেন্টস সার্ভিসেসে নিজেদের ৪০% শেয়ার বেচতে পারে জিই ক্যাপিটাল।

এ জন্য আগামী মাসে দর দিতে পারে বিভিন্ন প্রাইভেট ইকুইটি সংস্থা। জিই ক্যাপিটালের মুখপাত্রের অবশ্য দাবি, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে আন্তর্জাতিক কৌশলের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে।

বহু বিশেষজ্ঞ বলছেন, এ কথা ঠিক যে, এই মুহূর্তে রাজনীতির তরজায় শ্লথ হয়েছে সংস্কারের গতি। আটকে গিয়েছে জিএসটি বিল। কেন্দ্রের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে সংসদ চালানো। এমনকী সম্প্রতি বৃদ্ধির পূর্বাভাসও কমিয়ে ৭-৭.৫% করেছে কেন্দ্র। কিন্তু সব কিছু সত্ত্বেও এখনও ভারতই বিশ্বে দ্রুততম বৃদ্ধির দেশ।

দীর্ঘ মেয়াদে এই দেশের অর্থনীতি অন্যতম সম্ভাবনাময় বলে বাজি ধরছেন অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ। ফলে সেই দেশের বাজারে ধারের বোঝা কাঁধে থাকা সংস্থার অংশীদারি যদি তুলনায় সস্তায় মেলে, তাহলে তাতে মুনাফার সম্ভাবনা থাকবেই। আর ২০১৬ সালে সেই সুযোগ প্রাইভেট ইকুইটি সংস্থাগুলি হাতছাড়া করবে না বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।