মাত্র ২.৬২ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্তরা প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছেন
শেয়ারবাজার রিপোর্ট : শেয়ারবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ৯ লাখ ৫৪ হাজার ৯৮৮ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মাত্র ২ দশমিক ৬২ শতাংশ অর্থাৎ ২৪ হাজার ৯৮৮ জন সরকারের দেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ৯০০ কোটি টাকার পুন:অর্থায়ন স্কীম থেকে স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা পেয়েছেন। অথচ চলতি বছরের আগস্ট মাসে এ পুন:অর্থায়ন স্কীমের তৃতীয় কিস্তির মেয়াদ শেষ হবে। কিন্তু এখনও অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী এ ঋণ সুবিধা পায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকাররা।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মার্চেন্ট ব্যাংকাররা শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে জানিয়েছেন, সরকারের দেওয়া কঠিন শর্তের কারণে ৯০০ কোটি টাকার পুন:অর্থায়ন স্কীম থেকে অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী সহায়তা নেয়নি।
তারা আরও বলেন, ২০১০-২০১১ সালে শেযারবাজারে মহাধসের কারণে সংশ্লিষ্ট সব বিনিয়োগকারীই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সর্বস্ব হারাতে হয়েছে। এর মধ্যে যারা মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন ন্যাগেটিভ ইক্যুইটির কারণে তারা দীর্ঘদিন ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। এ অবস্থায় অনেকেই কঠিন শর্তে সরকার থেকে পুনরায় ঋণ নিতে আগ্রহী নন।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক এবং মুখপাত্র মো: সাইফুর রহমান শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে বলেন, সরকারের দেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ সুবিধা পেতে আমরা সময় নির্ধারণ করে দিয়েছি। এছাড়া এ বিষয়ে আমরা পর্যাপ্ত প্রচারণাও করেছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা আবেদন করেছেন তারা পুন:অর্থায়নের সুবিধা পাবেন আর যারা আবেদন করেননি তারা এ সুবিধা পাচ্ছেন না।
ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) সূত্রে জানা যায়, ২০১০-২০১১ সালে মহাধসে ৯ লাখ ৫৪ হাজার ৯৮৮ জন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী (এখানে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বলতে ১০ লাখ টাকার কম বিনিয়োগ যারা করেছেন) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫ পর্যন্ত ২৮ মাসে ২৪ হাজার ৯৮৮ জন ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে পুন:অর্থায়ন স্কীম থেকে ৬৩৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ১৮ হাজার ১০২ জন ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে ৪২৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে ১৫টি ব্রোকারেজ হাউজের মাধ্যমে ৬ হাজার ৮৮৬ জন ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে ২১২ কোটি ৫ লাখ টাকা ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যা মোট ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীর মাত্র ২ দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ এখনও নয় লাখ ৩০ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী সরকারের দেওয়া পুন:অর্থায়ন স্কীম থেকে ঋণ সুবিধা পায়নি।
আইসিবি সূত্রে আরও জানা যায়, সম্প্রতি এক হাজার ১৭৬ জন ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে ৪২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ঋণ সুবিধা দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে আইসিবি। এছাড়া আরও এক হাজার ৬৬১ ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর পুন:অর্থায়ন স্কীম থেকে ৬৫ কোটি দুই লাখ টাকা ঋণ সুবিধা প্রাপ্তির আবেদন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
বিএসইসি থেকে জানা যায়, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫ পর্যন্ত ৩২টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২৭৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা ঋণ আদায় হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছ থেকে ২০৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ১৪টি ব্রোকারেজ হাউজ থেকে ৭০ কোটি ৩১ লাখ টাকা ঋণ আদায় হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সরকারের দেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ৯০০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা তহবিলের প্রথম কিস্তি গত ২৬ আগস্ট, ২০১৩ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংক আইসিবি’র কাছে পাঠিয়েছে। বাকী দুই কিস্তি ২০১৫ সালের জানুয়ারি এবং জুলাই মাসে ছাড় করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক তিন কিস্তিতে ৯০০ কোটি টাকা ৫ শতাংশ সুদে আইসিবিকে দিয়েছে। এর থেকে ৭ শতাংশ সুদে আইসিবি মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে অর্থায়ন করছে। আর চুক্তি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকারেজ হাউজগুলো ৯ শতাংশ সুদে ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থায়ন করছে।
শেয়ারবাজারনিউজ/আ