ইউয়ানের পতনের সম্ভাবনায় হেজ তহবিলের বিনিয়োগ
শেয়ারবাজার ডেস্ক: ইউয়ানের বিরুদ্ধে নতুন যুদ্ধ শুরু করেছেন মার্কিন হেজ ফান্ড উদ্যোক্তারা। এর মাধ্যমে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির বিপরীতে ওয়াল স্ট্রিটের শো ডাউন শুরু হয়েছে। শীর্ষস্থানীয় হেজ প্রতিষ্ঠানগুলো ইউয়ানের দরপতনের পক্ষে বিপুল অর্থ লগ্নি করেছে। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
ইউয়ান ও হংকং ডলারের পতন হলে লাভবান হবে এমন খাতে ব্যাপক হারে বিনিয়োগ করেছে হেম্যান ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট। ডালাসভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির তহবিলের ৮৩ শতাংশই বর্তমানে এসব খাতে নিয়োজিত। ইউয়ানের বিরুদ্ধে এ বাজির জন্য অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও ধার চাইছে হেম্যান ক্যাপিটাল। প্রতিষ্ঠানটি এক্ষেত্রে আরো বেশ কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। হেম্যান ক্যাপিটালের কর্ণধার কাইলা ব্যাস আগামী তিন বছরে ইউয়ানের ৪০ শতাংশ দরপতনের আশা করছেন। ফলে বিগত দশকের সাবপ্রাইম ক্রাইসিসের চেয়ে বড় মাত্রার ধস হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ইউয়ানের পতনের পক্ষে বিনিয়োগ করেছেন স্ট্যানলি ড্রাকেনমিলার ও ডেভিড টেপার। প্রভাবশালী এ দুই হেজ ব্যবস্থাপক বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছেন বলে তাদের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে। ডেভিড আইনহর্নের গ্রিনলাইট ক্যাপিটালও ইউয়ানের বিপক্ষে বাজি ধরেছে।
ইউয়ানের দুর্বলতা দেখে বিনিয়োগকারীরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণ পুঁজি প্রত্যাহার করেছেন। চীনের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বিশ্বে সর্বোচ্চ। এরই মধ্যে তা সংকুচিত হতে শুরু করেছে। হেজ ফান্ড উদ্যোক্তারা মনে করছেন, পুঁজির বহিঃপ্রবাহ ঠেকাতে চীন ইউয়ানের আরো অবমূল্যায়ন করবে।
অন্যান্য মুদ্রার তুলনায় ইউয়ানের বিপক্ষে এমন বাজি কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। বাজার নয়, চীন সরকারই ইউয়ানের মূল্য নির্ধারণ করে। রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতিতে চীনা কর্তৃপক্ষের হাতে পরিস্থিতির প্রয়োজনে প্রয়োগের মতো বেশকিছু হাতিয়ার রয়েছে। গত মাসে ইউয়ানের দরপতন শুরু হয়। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো তখন হংকংয়ে এত ইউয়ান কিনেছিল যে, সেখানে ওভারনাইট বরোয়িং কস্ট ৬৬ শতাংশ বেড়ে যায় এবং মুদ্রাটি রাতারাতি ঊর্ধ্বগামী হয়।
গত বছর চীনা ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণার পর ইউয়ানের বিপক্ষে বিনিয়োগে মনস্থির করে হেম্যান ক্যাপিটাল। প্রতিষ্ঠানটি দেখতে পায়, চীনের ব্যাংকগুলোয় ঋণের স্ফীতি হচ্ছে খুব দ্রুত। মোট ঋণের ২ শতাংশ বকেয়া। হেম্যানের বিশ্লেষকরা দেখেন, চীনে বকেয়া ঋণের আকার উত্তরোত্তর বাড়বে এবং একপর্যায়ে চীন সরকারকে এসব প্রতিষ্ঠানে তহবিল জোগাতে হবে। ২০০৭-০৮ সালের আর্থিক সংকটের সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকার সে দেশের ব্যাংকগুলোকে এমন প্রণোদনা দেয়ায় ডলারের মান নেমে গিয়েছিল। চীনের ক্ষেত্রেও বিষয়টি অবধারিত বলে হেম্যানের বিশ্লেষকরা তখনই স্থির করেন।
স্ট্যানলি ড্রাকেনমিলার তার একসময়ের সহযোগী জ্যাক শ্রিবারের তহবিলও ইউয়ান ছেড়ে অন্য মুদ্রায় লগ্নি করেছেন। শ্রিবারের পয়েন্টস্টেট ক্যাপিটাল এলপির প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার এ খাতে বিনিয়োগ হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। গত আগস্টে ইউয়ান শর্টিং থেকে পয়েন্টস্টেট ১৫ শতাংশ মুনাফা করেছে। এ বছর জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে ইউয়ান শর্টিংয়ে ৫ শতাংশ মুনাফা হয়েছে বলে সূত্রটি জানায়।
পুট ও পুট স্প্রেড— দুভাবেই শর্টিং হচ্ছে ইউয়ান। সংশ্লিষ্টরা জানান, মুদ্রাটির বিপক্ষে লগ্নি করে লাভবান প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে স্কগিন ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ও কারলাইল গ্রুপের ইমার্জিং সভরেইন গ্রুপ।
কমোডিটি রফতানিকারক ও এশীয় দেশগুলোর মুদ্রার পতনে লাভবান হবে এমন খাতে বিনিয়োগ করেছেন জর্জ সরোস। সদ্যসমাপ্ত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম সম্মেলনে তিনি ‘চীনা অর্থনীতির পক্ষে কোনো মতেই ভূপতিত হওয়া এড়ানো সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছিলেন। সরোস ম্যানেজমেন্ট ফান্ডের মুখপাত্র অবশ্য কোম্পানির মুদ্রাঝুড়ির বর্তমান গঠন সম্পর্কে জানাতে রাজি হননি।
ইউয়ানের পতনের পক্ষে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির শিকার হবেন বলে চীন জানিয়েছে। সরোসের বক্তব্যের দুদিন পর রাষ্ট্রায়ত্ত সিনহুয়া সংবাদ সংস্থার মন্তব্য প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘যেসব হুজুগে বিনিয়োগকারী ইউয়ানের বিরুদ্ধে লগ্নি করছেন, তাদের বিপুল লোকসান ভোগ করতে হবে। কারণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা চীনা মুদ্রার মূল্য স্থিতিশীল করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
শেয়ারবাজারনিউজ