স্থিতিশীলতা ফেরানোই বড় চ্যালেঞ্জ
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: পুঁজিবাজারে দরপতনে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে দেশের দুই শেয়ারবাজার। একদিন কিছুটা আলোর মুখ দেখলেও অন্যদিন অস্বস্তিতে ভুগছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ, মানববন্ধন, রাজনৈতিক অঙ্গণে শেয়ারবাজার ইস্যূতে তুলকালাম, দায়িত্বশীলদের সমন্বয়হীনতা ইত্যাদি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে দ্বিগুণ। অন্যদিকে শেয়ারবাজারের এরকম পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিও বিপাকে পড়েছে। তাই শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানোই বর্তমান সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ২০১০ অর্থবছরের শেষ এবং ২০১১ অর্থবছরের শুরু থেকেই শেয়ারবাজারে ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যাপক দরপতন হয়। মধ্যখানে কিছুদিন ভালো অবস্থানে থাকলেও বর্তমানে আবার চলছে অস্থিরতা। ক্রমান্বয়ে কমছে লেনদেনের পরিমাণ। জানা যায়, গত ৫ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে বাজারে সূচক ছিল ৮৯১৮ পয়েন্ট। সেখানে বর্তমানে বাজারের সূচকের অবস্থান ৪৫৬০ পয়েন্টে। অর্থাৎ গত ৫ বছরে বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বোনাস শেয়ার,রাইট শেয়ার,নতুন কোম্পানির আইপিও আসার পরও সূচক কমেছে ৪৩৫৮ পয়েন্ট। অন্যদিকে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২৪৯ কোটি টাকার বেশি। সেখানে বর্তমানে লেনদেনের পরিমাণ সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ লেনদেনের পরিমাণ কমেছে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লেনদেন কম হওয়ার নেপথ্যে তারল্য সংকট প্রধান ইস্যূ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এ তারল্য সংকট কাটাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা প্রধান উৎস হলেও বাজারে তাদের তেমন অবদান লক্ষ্য করা যায়নি।
বাজারের বর্তমান অবস্থা এবং সরকারি পদক্ষেপের ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এম বাকী খলিলী শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে জানান, ব্যবস্থাপনাটাই এখন হ-য-ব-র-ল। সরকারের উচিত ছিল বাজার নিযন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসইসির সাথে আলোচনা করেই বিভিন্ন সিদ্ধান নেয়া। কিন্ত তা করা হচ্ছে বলে আমরা দেখতে পারছি না। এ ব্যাপারে সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা থাকলেও এসব বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে যাওয়ার কোনোই অর্থ হয়না। এখানে সরকারের সমন্বয়ের অভাব আছে, যেমনটি আছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যে। সরকারের কাছে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। এই পুঁজিবাজার নিয়ে সরকারের পদক্ষেপ বিশেষ করে মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসনের কার্যক্রম হাস্যকর। বাজারকে স্বাভাবিক করতে সমন্বয় জরুরি। মুদ্রানীতি ও আর্থিক নীতির মধ্যে একটা সমন্বয় খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
তিনি আরো বলেন, পুঁজিবাজারের ব্যাপারে একটা রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করা হয়। আর এটা যাতে করতে না পারে সে জন্যই বিএসইসি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু তারা সে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে চরম আস্থার সঙ্কট, যার কারণেই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বা মার্কেট মেকাররা বাজারে ফিরতে সাহস পাচ্ছেন না। তারা বিনিয়োগ খোয়াতে চান না। তিনি বলেন, দু-একটা জিনিস দিয়ে এই বাজারের ব্যাপক পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। শুধু স্পন্সর ডিরেক্টরদের দিয়ে বাজারের উন্নয়ন সম্ভব হবে না। বাজার ঊর্ধ্বমুখী হবে ঠিকই। কিন্তু তা বেশিক্ষণ ধরে রাখা যাবে না। এ জন্য আইসিবির মতো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারে আনতে হবে। তাদের বিনিয়োগ আবার বাজারে আনতে হবে। তারা এখন চরম ভয়ে আছে। সাধারণ মানুষের আমানতের টাকা তারা বাজারে বিনিয়োগ করে খোয়াতে চায় না। তাই বাজার স্থিতিশীল করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
শেয়ারবাজারনিউজ/ম.সা