আজ: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৬, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট কোম্পানি চলতি বছরেই বাস্তবায়ন করবে বিএসইসি

BSECশেয়ারবাজার রিপোর্ট : বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর আদলে ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট কোম্পানি গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এজন্য ইতিমধ্যেই ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট কোম্পানি সংক্রান্ত তিন সদস্যের কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে বিএসইসি। আইনের খসড়ার উপর সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মতামতও নেয়া হয়েছে। তবে আইন প্রণয়ন সময়সাপেক্ষ হওয়ার কারণে বর্তমানে ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট কোম্পানি গঠনের বিষয়ে নতুন আইন প্রণয়ন না করেও বিধিমালার মাধ্যমেই এটি গঠন করা যায় কি না সে বিষয়ে কাজ চলছে। তবে আইন নাকি বিধিমালার আওতায় ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট কোম্পানি গঠন করা হবে সেটি এখনো চূড়ান্ত না হলেও চলতি বছরের মধ্যেই এটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে বিএসইসির এবং সে লক্ষ্যেই তারা কাজ করছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, দেশের পুঁজিবাজারে ভবিষ্যতে ফিউচার ট্রেডসহ ডেরিভেটিভ ও কমোডিটি মার্কেট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বিএসইসির। আর এসকল নতুন ফিচার চালু করার জন্য সিডিবিএল বা স্টক এক্সচেঞ্জের ওপর এককভাবে নির্ভর না করে স্বতন্ত্র ক্লিয়ারিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছে বিএসইসি। এ কারণে ২০১৪ সালের ৪ মার্চ বিএসইসির ৫১২ তম কমিশন সভায় নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমানকে আহব্বায়ক করে নির্বাহী পরিচালক মাহাবুবুল আলম-সদস্য ও পরিচালক প্রদীপ কুমার বসাক-সদস্য সচিব এর সমন্বয়ে তিন সদস্যের ক্লিয়ারিং কর্পোরেশন সংক্রান্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের ক্লিয়ারিং কর্পোরেশন পর্যবেক্ষন করতে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি দেশ সফর করেছে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের ৬ অক্টোবর বিএসইসির ৫৫৫ তম কমিশন সভায় ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট কোম্পানি গঠন সংক্রান্ত আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে। তাছাড়া ইতিমধ্যেই খসড়া আইনের স্টেক হোল্ডারদের মতামত নেয়া হয়েছে।

এদিকে ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট কোম্পানি গঠন সংক্রান্ত আইনের খসড়া অনুয়ায়ী, নতুন কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাছাড়া নতুন কোম্পানির ক্ষেত্রে ডিএসই ও সিএসই দুই স্টক এক্সচেঞ্জ মিলে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে পারবে। তবে এককভাবে কোন স্টক এক্সচেঞ্জের সর্বোচ্চ শেয়ার ৪৯ শতাংশের বেশি হবে না। তাছাড়া গঠিত কোম্পানিটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর তিন মাসের মধ্যেই দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে লেনদেন নিষ্পত্তি কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে হবে। সেইসাথে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন নিষ্পত্তির সুরক্ষা তহবিলও গঠিত নতুন কোম্পানিতে স্থানান্তরিত হবে। বর্তমানে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে সম্মিলিতভাবে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার লেনদেন সুরক্ষা তহবিল রয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জ ব্যতীত সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং কৌশলগত বিনিয়োগকারীরাও নতুন এ কোম্পানির শেয়ার ধারন করতে পারবে। এক্ষেত্রে একাধিক ব্যাংক সম্মিলিতভাবে গঠিত কোম্পানির ১০ শতাংশ মালিকানা ধারণ করতে পারবে। তবে এককভাবে কোনো ব্যাংক সর্বোচ্চ ২ শতাংশ শেয়ার ধারন করতে পারবে। একইভাবে বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্মিলিতভাবে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ এবং এককভাবে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ শেয়ার ধারন করতে পারবে। তাছাড়া সিডিবিএল এবং কৌশলগত বিনিয়োগকারী প্রত্যেকেই নতুন কোম্পানির সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ শেয়ার ধারন করতে পারবে। ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ১১ জর রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়া আইনে। এক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ অর্থাৎ ৬ জন স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে মনোনীত হবেন। এর বাইরে শেয়ারধারীদের মধ্য থেকে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে ২ জন এবং অন্যান্য শেয়ারধারীদের মধ্য থেকে ২ জনসহ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদাধিকার বলে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে মনোনীত হবেন।

উল্লেখ্য,লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য স্বতন্ত্র কোম্পানি গঠিত হলে  পুঁজিবাজারে লেনদেন-সংক্রান্ত ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসবে। বর্তমানে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেনের বিপরীতে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ‘জিম্মাদার’ হিসেবে কাজ করছে। যদি কোনো কারণে ব্রোকারেজ হাউস লেনদেন নিষ্পত্তিতে অক্ষম হয় তাহলে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউসের পক্ষে স্টক এক্সচেঞ্জ নিজে লেনদেন নিষ্পত্তির দায়িত্ব পালন করে থাকে। যা স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য একধরনের ঝুঁকি। সেইসাথে ভবিষ্যতে স্টক এক্সচেঞ্জে ফিউচার ট্রেডসহ ডেরিভেটিভ ও কমোডিটি মার্কেট চালুর হলে এ ঝুঁকির পরিমান আরো বাড়বে। মূলত এ কারণেই পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য স্বতন্ত্র কোম্পানি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে।

ক্লিয়ারিং কোম্পানি গঠনের উদ্যোগ সম্পর্কে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে বলেন, দেশের পুঁজিবাজারে স্বতন্ত্র ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট কোম্পানি গঠন করা হলে এটি লেনদেন ব্যবস্থাকে আরো সহজ করবে। বর্তমানে টি+২ অর্থাৎ দুইদিনে লেনদেন সম্পন্ন হয়ে থাকে। আর ক্লিয়ারিং কোম্পানি হলে একদিনেই লেনদেন সম্পন্ন হয়ে যাবে।

শেয়ারবাজারনিউজ/অ/মু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.