এই কমিশন দিয়ে বিনিয়োগকারীদের কি উপকার হয়েছে ?
বিনিয়োগকারীদের কথা চিন্তা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১১ সালের ২৩শে নভেম্বর স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষনা করে। এক বছরের মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজের ২০টি দফা বাস্থবায়ান করার কথা থাকলেও বর্তমানে বিএসইসি দীর্ঘ ৫ বৎসরে মাত্র ৩৮% শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে। বাকী ৬২% শতাংশ কেন বাস্তবায়ন করতে পারেননি সে সম্পর্কে বিনিয়োগকারীরা অবগত নন। এই কমিশন শুধু ইস্যুয়ার কোম্পানীর সাথে তাদের সখ্যতা বজায় রেখে চলেছেন; বিনিয়োগকারীদের কথা একবারও চিন্তা করেন না। এই কমিশন ২০১১ সালে যখন দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তখন সূচক ছিল ৬,৮৫০। বর্তমানে সূচক কত তা আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন। আমাদের প্রশ্ন এই কমিশন দিয়ে বিনিয়োগকারীদের কি উপকার হয়েছে?
বিগত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখ এর (পাবলিক ইস্যু) রুলসে প্রিমিয়াম নিয়ে আইপিওতে আসা কোম্পানিগুলোর জন্য বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তলনের সিদ্ধান্ত দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যার অর্থ হলো শেয়ার হোল্ডারদের অবশিষ্ট রক্ত চুষে নেওয়ার সবচেয়ে বড় পাঁয়তারা।
আমাদের দাবী হলো এ পর্যন্ত যে সমস্ত কোম্পানী অতিরিক্ত প্রিমিয়াম ডাইরেক্ট লিষ্টিং বা বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে কারসাজির মাধ্যমে বাজার থেকে অনৈতিকভাবে লূটে নেওয়া অর্থ অনতিবিলম্বে বিনিয়োগকারীদের ফেরৎ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
আমরা বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বাজারকে চলমান অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিএসইসি-কে প্রথম থেকেই বেশকিছু প্রস্তাব দিয়েছিলাম।
আমরা বলেছিলাম বৃটিশ উপনিবেশবাদের আইন-কানুন দিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের কোম্পানী আইন চলতে পারে না এবং কোম্পানি আইন ও ব্যাংকিং আইন পরিবর্তন করতে হবে। একটি কোম্পানী তার প্রয়োজনে বাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করতে আসে। আর আসার সময় ঐ সমস্ত কোম্পানী ভুল তথ্য দিয়ে থাকে। এবং বলে থাকে বাজার থেকে টাকা উত্তোলনের পরে তার ব্যবসা সম্প্রসারিত হবে। প্রচুর মুনাফা হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। তাদের প্রফপেক্টাস দিয়ে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে টাকা উত্তোলন করে থাকেন। টাকা উত্তোলনের কিছুদিন পরেই কোম্পানীর লোকসান হয়েছে বলে আর কোন ডিভিডেন্ড দেয় না, তারা বলে ‘নো ডিভিডেন্ড’। কিছুদিন পরে ঐ কোম্পানী জেড ক্যাটাগরীতে চলে যায়। পর্যায়ক্রমে ওটিসি মার্কেটে একদিন কোম্পানী দেউলিয়া হয়ে যায়। যেমন (পদ্মা সিমেন্ট)।
আমাদের প্রস্তাবনা হলো যে সমস্ত কোম্পানীর বাজার থেকে টাকা উত্তোলন করবে ঐ সমস্ত কোম্পানীকে বাধ্যতামূলক ভাবে ১৫% ডিভিডেন্ড দিতে হবে। ব্যাংকিং কোম্পানী আইন এর বিধান হলো কোন কোম্পানী ব্যাংক থেকে টাকা সংগ্রহ বা ঋণ নিলে তাকে সুদ+আসল= সুদআসল+ চক্রবৃদ্ধি হিসাবে টাকা পরিশোধ করতে হয়। তা না হলে ব্যাংক তার ঐ সম্পত্তি নিলাম করে তার টাকা আদায় করে নেয়। বিশ্ব পুঁজিবাদ সাম্রাজ্যবাদী কূট-কৌশলীরা যুগে যুগে সাধারণ মানুষকে ধোকা দেওয়ার জন্য এই অভিনব পদ্ধতি বের করে কোম্পানী আইনের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষকে ধোকা দেওয়ার জন্য ডিভিডেন্ড প্রথা চালু করে যুগে যুগে মানুষকে ঠকিয়ে আসছে। কোন কোম্পানী যদি টাকা উত্তোলনের পর নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে তার জন্য কোন জবাবদিহিতার প্রয়োজন নেই, তা হতে পারে না। তাই নো ডিভিডেন্ড বলতে কোন কথা থাকবে না। কোম্পানীগুলো অর্থ উত্তোলনের সময় অধিক মুনাফা হবে বলে প্রসপেক্টাসে উল্লেখ করেছে। তাই তাকে বাধ্যতামূলকভাবে কমপক্ষে ১৫% ডিভিডেন্ড দিতে হবে। এর ফলে শেয়ারের বিভাজন থাকবে না। জেড ক্যাটাগরি, ওটিসি মার্কেট থাকবে না। কোম্পানীগুলো আর্থিক প্রতিবেদন অস্বচ্ছ ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্ট দিতে সাহস পাবে না। বিএসইসি যখন একটি কোম্পানীকে অনুমোদন দেন তখন তো বলে না এই কোম্পানী মৌলভিত্তি বা ঐ কোম্পানী মৌলভিত্তিক নয়। তাহলে এখন কেন বলছেন মৌলভিত্তিক ও অমৌলভিত্তিক। এই ধরনের প্রতারণা বন্ধ করুন। কোম্পানী আইন এর ধারা পরিবর্তন করুন। টাকা নেওয়ার ব্যাপারে একটি স্বাধীন দেশে দুই ধরনের আইন চলতে দেওয়া যায় না।
এ.কে.এম. মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী
সভাপতি
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ