আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৮ মার্চ ২০১৬, মঙ্গলবার |

kidarkar

মীর কাসেমের ফাঁসির রায় বহাল

mir kasemশেয়ারবাজার ডেস্ক: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা র ফাঁসির রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এই রায় দেন।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেমকে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে গঠন করা ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে ১০টি প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে তাঁকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। বাকি আটটি (২,৩, ৪,৬, ৭,৯, ১০ ও ১৪ নম্বর) অভিযোগে তাঁকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আপিলে সাতটি অভিযোগে (২,৩, ৭,৯, ১০,১১ ও ১৪ নম্বর) মীর কাসেমের সাজা বহাল রেখেছেন সর্বোচ্চ আদালত। এর মধ্যে ১১ নম্বর অভিযোগে তাঁর মৃত্যুদণ্ড বহাল রয়েছে। আর তিনটি অভিযোগ (৪,৬, ১২ নম্বর) থেকে তাঁকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এর মধ্যে ১২ নম্বর অভিযোগে তাঁকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর আপিল করেন মীর কাসেম। গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই আপিলের শুনানি শুরু হয়, শেষ হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি। পরে রায় ঘোষণার জন্য ৮ মার্চ তারিখ ধার্য করেন আদালত।
২০১২ সালের ১৭ জুন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মীর কাসেমকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ২০১৩ সালের ১৬ মে রাষ্ট্রপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। ওই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়। এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে তদন্ত কর্মকর্তাসহ ২৪ জন ও আসামিপক্ষে তিনজন সাক্ষ্য দেন। চূড়ান্ত যুক্তি উপস্থাপন শেষে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনালে ফাঁসির আদেশ পাওয়া ১১ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর কোনো এক দিন মীর কাসেমের নির্দেশে আলবদররা মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ করে। এরপর তাঁকে ডালিম হোটেলে বন্দী রেখে নির্যাতন ও ২৮ নভেম্বর হত্যা করা হয়। পরে ডালিম হোটেলে নির্যাতনে নিহত আরও পাঁচজনের সঙ্গে জসিমের লাশ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। ১২ নম্বর অভিযোগ অনুসারে, একাত্তরের নভেম্বরে মীর কাসেমের নির্দেশে আলবদররা চট্টগ্রামের হাজারী গলি থেকে রঞ্জিত দাস ও টুন্টু সেনকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। পরে তাঁদের হত্যা করে লাশ গুম করা হয়।

যেভাবে উত্থান: মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতা মীর কাসেম একাত্তরে ছিলেন দলটির ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের চট্টগ্রাম শহর শাখার সভাপতি। ট্রাইব্যুনালের রায় অনুসারে, একই সঙ্গে তিনি একাত্তরের কুখ্যাত গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান ছিলেন। তাঁর নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধকালে চট্টগ্রাম শহরের আন্দরকিল্লা এলাকার ডালিম হোটেলে স্থাপিত হয় আলবদর বাহিনীর ক্যাম্প ও নির্যাতন কেন্দ্র। একাত্তরে চট্টগ্রামে এই ডালিম হোটেলকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হতো সব ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ, যার তত্ত্বাবধানে ছিলেন আলবদর নেতা মীর কাসেম আলী। মুক্তিযুদ্ধের সময় ডালিম হোটেল মানুষের কাছে পরিচিতি পায় হত্যাপুরী হিসেবে, আর নৃশংসতার জন্য মীর কাসেমের পরিচয় হয় ‘বাঙালি খান’।

মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৭ সালে ইসলামী ছাত্র সংঘ নাম বদল করে ছাত্রশিবির নামে রাজনীতি শুরু করে। মীর কাসেম ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ওই সময় থেকে তিনি জামায়াতের রাজনীতিকে শক্তিশালী করতে দলটির অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্ত করার জন্য উদ্যোগ নিতে শুরু করেন। ১৯৮০ সালে তিনি রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী নামের একটি বিদেশি বেসরকারি সংস্থার এদেশীয় পরিচালক হন। এ ছাড়া তিনি দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান, ইবনে সিনা ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য। ধীরে ধীরে তিনি জামায়াতের অর্থের অন্যতম জোগানদাতায় পরিণত হন।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/মু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.