বিএসইসি’র প্রতি অসন্তুষ্ট অর্থমন্ত্রণালয়: জুনের মধ্যে ইটিএফ ও ডেরিভেটিভস বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশ
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: বার্ষিক কর্মসম্পাদনা চুক্তির অধীনে এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) সংক্রান্ত বিধিমালা এবং ফাইন্যান্সিয়াল ডেরিভেটিভস নীতিমালা প্রণয়নের কাজে ধীরগতির জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ওপর সন্তুষ্ট নয় অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সরকারের সাথে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী ডেরিভেটিভ নীতিমালা এবং ইটিএফ বিধিমালা আগামী ২২ জুনের মধ্যে প্রণয়ন করার নির্দেশ দিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
সম্প্রতি, সহকারি সচিব মো: মখফার উদ্দীন খোকন স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে বিএসইসি’কে এমন নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি সংস্থাটির ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ফাইন্যান্সিয়াল ডেরিভেটিভস সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নের বিষয়ে আগামী ২০১৭ সালের শেষ পর্যন্ত সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া, ইটিএফ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নের কাজের অগ্রগতি তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। অপরদিকে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সাথে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের স্বাক্ষরিত চুক্তিমতে ডেরিভেটিভস সংক্রান্ত নীতিমালা এবং ইটিএফ সংক্রান্ত বিধিমালা আগামি ২২ জুন, ২০১৬ তারিখের মধ্যে গেজেটে প্রকাশের শর্ত রয়েছে। তাই চুক্তির সময়ের মধ্যে বিএসইসি’কে ফাইন্যান্সিয়াল ডেরিভেটিভস সংক্রান্ত নীতিমালা এবং ইটিএফ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
এছাড়া, বার্ষিক কর্মসম্পাদনা চুক্তির অধীনে এ দুটি বিধিমালা প্রনয়নসহ চলতি অর্থবছরের মধ্যে নূন্যতম ১০টি প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন এবং ক্ষুদ্র ও নারী বিনিয়োগকারীদের প্রশিক্ষন প্রদান সংক্রান্ত শর্ত রয়েছে।
জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বরে ইটিএফ বিধিমালা তৈরির জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে কমিশন। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক হাসান মাহমুদকে প্রধান করে ওই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর অন্য দুই সদস্য হলেন সংস্থার পরিচালক শফিউল আজম ও উপপরিচালক লুৎফুল কবীর। কমিটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকবেন বিএসইসির কমিশনার হেলালউদ্দিন নিজামী। বহির্বিশ্বের স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে ইটিএফ কিভাবে পরিচালিত হয় সে বিষয়ে বাস্তব জ্ঞান অর্জনের জন্য শিগগিরই কমিটিসহ ডিএসই এবং সিডিবিএল এর কর্মকর্তাদের হংকং এবং ফিলিপাইনের স্টক এক্সচেঞ্জ পরিদর্শনের জন্য পাঠাবে বিএসইসি। এরপর কমিটি ইটিএফ নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছে বিএসইসি’র একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
অপরদিকে ফাইন্যান্সিয়াল ডেরিবেটিভস সম্পর্কে বিএসইসি’র একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ডেরিভেটিবস নীতিমালা প্রণয়নের বিষয়ে এখনও চূড়ান্তভাবে কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গত, ইটিএফ এক প্রকার বেমেয়াদি (ওপেন এন্ড) সামষ্টিক বিনিয়োগ তহবিল। বেমেয়াদি হলেও এ ফান্ডের ইউনিট সেকেন্ডারি বাজারে লেনদেন করা যায়। মিউচ্যুয়াল ফান্ড থেকে এর কিছু পৃথক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডের তহবিল দিয়ে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত যেকোনো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা যায়। আর ইটিএফ শুধু শেয়ারবাজারের সূচক, সূচকভুক্ত কোম্পানির শেয়ার বা পূর্বনির্দিষ্ট খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হয়। সাধারণত যেসব বিনিয়োগকারী নির্ধারিত সূচকে অন্তর্ভুক্ত সব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে চান, কিন্তু সক্ষমতা নেই এবং যেসব প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী পোর্টফোলিও খরচ কমাতে চান, তারাই ইটিএফ ফান্ডে বিনিয়োগ করে থাকেন। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ইটিএফ এর অর্থ সংগ্রহ করা যায় না। বাজারে শুধু বড় ব্লক ইস্যু করতে পারে, যা ‘ক্রিয়েশন ইউনিট’ নামে পরিচিত। সাধারণত ব্যাংক, ব্রোকার-ডিলার, ট্রেডিং হাউজ এবং ইনস্টিটিউশনাল ফার্ম বা বিশেষজ্ঞ দ্বারা অনুমোদিত অংশগ্রহণকারীরা ইটিএফের ক্রিয়েশন ইউনিট নিতে পারবেন। ক্রিয়েশন ইউনিট কেনার পর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এর পৃথকীকরণ করতে পারবেন এবং সেগুলো সেকেন্ডারি বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের উদ্যোক্তা বা সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি নির্দিষ্ট পরিমাণ তহবিল নিয়ে এ ফান্ড চালু করতে পারবেন।
শেয়ারবাজারনিউজ/আহা/ওহ