সুইফটের রিপোর্ট নিয়ে কেন্দ্রিয় ব্যাংকের লুকোচুরি
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেনের তথ্য-প্রযুক্তিগত সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সুইফট’এর (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ড-ওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) রিপোর্ট সম্পর্কে পরিষ্কার কিছু বলতে চাচ্ছে না কেন্দ্রিয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। চলতি মার্চের ১৭ ও ১৮ তারিখ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সুইফটের দুজন প্রতিনিধি অর্থ-আত্মসাতের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য-প্রযুক্তিগত পরিস্থিতি যাচাই করতে এ দুই প্রতিনিধি বাংলাদেশে এসেছিলেন।
সুইফটের এ দুই প্রতিনিধি শুক্রবার থেকেই কাজ শুরু করেন। ইতিমধ্যে প্রতিনিধি দুজন দেশ ছেড়ে চলে গেলেও কেন্দ্রিয় ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের রিপোর্ট বা পরামর্শ সম্পর্কে কিছুই বলে নি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, তাঁরা আবার দেশে আসবেন। সম্পূর্ণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। তাই আনুষ্ঠানিক কিছু জানানো যাচ্ছে না। মৌখিক এবং লিখিতভাবে এ প্রতিনিধিদল বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছেন এবং সিস্টেমের ত্রুটি সম্পর্কে কেন্দ্রিয় ব্যাংককে অবহিত করেছেন। এখানে সংশ্লিষ্ট কোন কোন কর্মকর্তাদের গাফিলতি পাওয়া গেছে- সে ব্যাপারে ব্যাংকের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক গনমাধ্যমগুলো বলছে, সুইফট দেশের কেন্দ্রিয় ব্যাংকের পাশাপাশি অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছে। এর পাশাপাশি সুইফটের পরামর্শক্রমে যে সকল প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছে। তাদের আশঙ্কা প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রিয় ব্যাংকের পাশাপাশি অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাকাউন্টেও হানা দিতে পারে। সুস্পষ্টভাবে কোনো কারণ এখন পর্যন্ত না উল্লেখ করলেও সুইফট মুখপাত্র আন্তর্জাতিক গনমাধ্যমগুলোর কাছে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ‘হ্যাক হওয়ার এ ঘটনা অভ্যন্তরিন পরিচালনা সংক্রান্ত ক্রুটির কারণেই ঘটেছে। সুইফটের কোর ম্যাসেজিং ব্যবস্থায় কোনো ক্রটি নেই’। এ ব্যাপারে ওয়ার্ল্ড ইনফর্মেটিক্সের প্রধান নির্বাহী রাকেশ আস্থানাও কোনো মন্তব্য করেননি। রয়টার্সকে তিনি মেইলের মাধ্যমে জানান- সোমবার এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বিবৃতি দিতে পারে।
জানা যায়, বিভিন্ন দেশে বৈদেশিক মুদ্রার লেনেদেনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত মাধ্যেম হিসেবে কাজ করে সুইফট। ফিলিপাইনের রিগাল ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বাংলাদেশের কেন্দ্রিয় ব্যাংকের রিজার্ভ আত্মসাত হওয়ার ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল পাঠায় সংস্থাটি। রিগাল ব্যাংকের মাধ্যেমে আর্ন্তজাতিক সেটেলমেন্ট মাধ্যেমে হিসেবে ব্যবহৃত ফেডারেল রিজার্ভ থেকে প্রায় ৮১ মিলিয়ন ডলার আত্মসাত করা হয়। হ্যাকাররা ৯৫১ মিলিয়ন ডলার আত্মসাতের চেষ্টা করলেও সফল হয় প্রথমত অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় তাদের সিস্টেমের কোনো ঘাটতি আছে কি না- তা যাচাই করতে আসে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমের আপগ্রেডেশন প্রয়োজন আছে কি না- সে বিষয়েও যাচাই করা হয়। তবে প্রথম থেকেই প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশে আসা এবং সিস্টেম আপগ্রেডেশন যাচাই করার প্রক্রিয়াটিকে তদন্তের অংশ হিসেবে বিবেচনা করতে নারাজ বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে ব্যাংকের মুখপাত্র এবং নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে বলেন, ‘ সুইফটের প্রতিনিধিদের সফর তদন্তের অংশ নয়। ব্যাংকের সিস্টেমে কোনো আপগ্রেডেশন প্রয়োজন আছে কি না- সেটা যাচাই করার জন্যই তারা এসেছিল।’ তবে ব্যাংকের সিস্টেম নিয়ে কাজ করবার পর এ প্রতিনিধিদল কি কি ত্রুটি পেয়েছে এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। এ বিষয়ে শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘ কাজ করার সময় কিছু পরামর্শ হয়ত তাঁরা মৌখিকভাবে দিয়েছেন আর কিছু ব্যাপার লিখিত দিয়েছে। এ বিষয়ে কিছু তথ্য প্রকাশ করার আগে আমরা আরেকবার পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে চাচ্ছি।’ সম্পূর্ণ কাজ এখনো শেষ হয়নি- জানিয়ে তিনি বলেন,‘ শিগগিরই তারা আবার আসবেন।’
এ ব্যাপারে কেন্দ্রিয় ব্যাংকের গভর্নর সচিবালয়ের মহাব্যবস্থাপক এ এ এম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সুইফটের তদন্তের বিষয়ে কোনো কিছু আমাদের কাছে আসেনি। সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বিষয়ে বলতে পারবে।’
শেয়ারবাজারনিউজ/ওহ