অব্যাহত দরপতন: দৃষ্টি এখন এক্সপোজারে
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: সূচকের ক্রমাগত পতনে দেশের পুঁজিবাজার এখন পরিণত হচ্ছে অাতঙ্কের অন্য নামে। স্থিতিশীলতা আসবে- সংশ্লিষ্টদের এ আশাবাদে বিনিয়োগ করে এখন প্রতিদিনই পুঁজি হারাচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী কিংবা ট্রেক হোল্ডার থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, সবার চোখ এখন ব্যাংকের এক্সপোজার সমন্বয়ের সময় বাড়ানোর দিকে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে ব্যাংক কোম্পানিগুলোর এক্সপোজার সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়টি চূড়ান্ত না হওয়ার কারনেই আস্থা ফিরে পাচ্ছেন না ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। শিগগিরই এ আইনের সংশোধন করা না হলে ব্যাংকগুলোকে বড় অঙ্কের শেয়ার বিক্রি করে দিতে হবে। এ আশঙ্কা থেকে অনেক ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা সিকিউরিটিজ হাউজ বা মার্চেন্ট ব্যাংকের আগেই আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। বিনিয়োগকারীদের সেল-প্রেসারের কারনেই সূচকের নিম্নগতি দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। নীতি-নির্ধারনী মহলের আশ্বাস দিয়েও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো যাচ্ছে না।
বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক ও ভীতি প্রসঙ্গে ফখরুল ইসলাম সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ফখরুল ইসলাম শেয়ারবাজারনিউজ ডট কমকে বলেন, ‘ব্যাংকের এক্সপোজার সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ানো হচ্ছে এমন আশ্বাস বিভিন্ন শীর্ষ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে দেওয়া হলেও দৃশ্যমান কোনো উন্নতি না দেখাতে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। এর মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিটেন্স নিয়ে যে অনিয়ম উঠে এসেছে তাতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আরো ভীতির সঞ্চার হয়েছে। এমন জটিল একটা পরিস্থিতির মধ্যে কেন্দ্রিয় ব্যাংক পুঁজিবাজারের জন্য অত্যাবশ্যকিয় পদক্ষেপ নেবে কি না- সে ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা স্বল্পতা তৈরী হচ্ছে’।
অন্যদিকে আরেক সিকিউরিটিজ হাউজ নির্বাহী এমটিবি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘এক্সপোজার ইস্যুতে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক এখন প্রায় চরমে পৌঁছেছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আগে এখন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাই শেয়ার বিক্রি করছে। তাদের মধ্যে এ ধারনা তৈরী হয়েছে যে- ব্যাংকগুলো বিপুল পরিমানের শেয়ার বিক্রি করলে বাজারে সেল-প্রেসার বাড়বে এবং শেয়ারদর আরো অবমূল্যায়িত হবে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে আসা আশ্বাস বিনিয়োগকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও কোনো কাজ হচ্ছে না’।
অন্যদিকে, বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকেও পাওয়া গেছে একই ধরনের অভিমত। এক্সপোজার ইস্যুতে আস্থা না পাওয়াতেই বাজারে তাদের অংশগ্রহন কমছে বলে স্বীকার করেছেন তাঁরা। এর পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে উচ্চহারে প্রিমিয়াম দিয়ে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) অনুমোদন ও বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালকদের অনৈতিক শেয়ার লেনদেন। একদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিনিয়োগকারীদের মনোভাবের বিপরীতে গিয়ে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আইপিও অনুমোদন দিচ্ছে। অন্যদিকে, আত্মীয়-স্বজনদের নামে উপহার হিসেবে দেওয়া শেয়ারের লেনদেন হওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের কারনেও বাজারে শেয়ারদর প্রভাবিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক ট্রেক কর্মকর্তা।
বিতর্কের বেড়াজালে পড়ে গত পাঁচ কার্যদিবসে দেশের উভয় পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের ক্রমাগত পতন হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
শেয়ারবাজারনিউজ/ওহ/আহা/ম.সা