আজ: বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৫ এপ্রিল ২০১৬, মঙ্গলবার |

kidarkar

মেসি-ঐশ্বরিয়ার মতো তারকা অর্থ পাচারে জড়িত

ass massiশেয়ারবাজার ডেস্ক: চীন, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরবের মতো ক্ষমতাধর দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান বা তাঁদের আত্মীয় অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত। শুধু রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানেরাই নন, বিশ্বখ্যাত ফুটবলার লিওনেল মেসি থেকে শুরু করে ভারতীয় চিত্রনায়িকা ঐশ্বরিয়া রাই- তালিকায় আছে এমন অনেকেরই নাম। আছেন অমিতাভ বচ্চনও।

শুনে কী চমকে গেলেন? সত্যি এমন ঘটনা ঘটেছে। এর চেয়ে বড় কথা হচ্ছে- এসব ব্যক্তিরা সরাসরি অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত। উত্তর আমেরিকার ক্ষুদ্র দেশ পানামার আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার ফাঁস হওয়া ১ কোটি ১৫ লাখ গোপন নথি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছে।

আফ্রিকার দরিদ্র দেশ আইভরিকোস্ট, অ্যাঙ্গোলা থেকে শুরু করে ধনী যুক্তরাজ্য- সব দেশেরই ধনীরা ৪০ বছর ধরে মোসাক ফনসেকার সহযোগিতায় অর্থ পাচার করেছে। কর ফাঁকি দিয়ে দেশের বাইরে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। বিশ্বের যেসব প্রতিষ্ঠান গোপনীয়তা রক্ষার জন্য বিখ্যাত, মোসাক ফনসেকা সেগুলোর একটি। পানামার এ প্রতিষ্ঠানের অজস্র নথি ফাঁসের এ ঘটনা ‘পানামা পেপারস’ নামে খ্যাত হয়ে উঠেছে।

সোমবার ফাঁস হওয়া এসব নথিতে বিশ্বের শতাধিক ক্ষমতাধর মানুষ বা তাঁদের নিকটাত্মীয়দের বিদেশে টাকা পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। মেক্সিকোর মাদকসম্রাট বা সন্ত্রাসী সংগঠন হিজবুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগের কারণে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কালো তালিকায় থাকা ব্যবসায়ীরাও বাদ যাননি এ তালিকা থেকে।

মোসাক ফনসেকার ওই ১ কোটি ১৫ লাখ নথি কে বা কারা ফাঁস করেছে সেটা জানা যায়নি। তবে এসব নথি প্রথমে জার্মান দৈনিক জিটডয়েচ সাইতংয়ের হাতে আসে। পত্রিকাটি সেসব নথি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিয়ে কাজ করা ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসকে (আইসিআইজে) দেয়। ১৯৭৭ থেকে ২০১৫, প্রায় ৪০ বছরের এসব নথি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার কিছু অংশ আইসিআইজে প্রকাশ করে। আগামী মে মাসে আরও নথি প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছে সংস্থাটি।

আইসিআইজের ওয়েসসাইটে থাকা প্রতিবেদনে বলা হয়, মোসাক ফনসেকার নথিতে বিশ্বের ২০০ দেশের ২ লাখ ১৪ হাজার ব্যক্তির টাকা পাচারের নথি আছে। এসব ব্যক্তির মধ্যে ১৪০ জন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং রাজনীতিকের নাম রয়েছে। এসব ব্যক্তি বিশ্বের ২১টি কর রেয়াত পাওয়া অঞ্চলে পাঠানো টাকায় গড়ে তুলেছেন তথাকথিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোসাক ফনসেকার নথিতে বলছে- বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল রাষ্ট্র চীনের দুর্নীতি শূন্যের ঘরে আনতে এর বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। অথচ তারই বড় বোনের জামাই দেং জিয়াগুয়ের নাম তালিকার একেবারে প্রথমে উঠে এসেছে। এই আবাসন ব্যবসায়ীর সম্পদের বিষয়ে ২০১২ সালে ব্লুমবার্গ নিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি ও তাঁর স্ত্রীর এ খাতে কোটি কোটি ডলারের ব্যবসা রয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ রাষ্ট্র সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ বিন আবদুল রহমান আল সৌদের নাম উঠে এসেছে তালিকায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে বাদশাহ সালমানের মন্তব্য জানতে

যুক্তরাষ্ট্রের সৌদি দূতাবাসের মাধ্যমে অনেক চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বাদশাহর পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।

রাশিয়ার শক্তিধর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাল্যকালের দুই বন্ধু আরকাদি ও বরিস রোতেনবুর্গ ভ্রাতৃদ্বয়ের নাম উঠেছে তালিকায়। দুই ভাই রাষ্ট্রায়ত্ত নানা খাতে ঠিকাদারি কাজ করে কোটি কোটি ডলার কামিয়েছেন। ২০১৪ সালে রাশিয়ার সোচি অলিম্পিক গেমসে ৭০০ কোটি ডলার দুর্নীতির দায়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

পুতিনের আরেক বন্ধু সের্গেই রোলদুগিনের নামও আছে তালিকায়। তিনি নিজেকে ‘পুতিনের প্রায় ভাইয়ের মতো’ বলে পরিচয় দেন। পুতিনের এই সংগীতজ্ঞ বন্ধুর সঙ্গে গত সপ্তাহে আইসিআইজের যোগাযোগ হয়। তিনি পাচারের বিষয়ে জবাব দিতে সময় চেয়েছেন।

তালিকায় আছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দুই ছেলে ও মেয়ের নাম। নওয়াজের দুই ছেলে হাসান ও হুসেন নওয়াজ শরিফ এবং মেয়ে মরিয়ম সফদার ইস্পাত, চিনি ও কাগজের মিলের মালিক। অবৈধ সম্পদ অর্জন, কর ফাঁকি ও অর্থ পাচারের দায়ে বাবা ও ছেলেমেয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল আগেই। তাঁদের এসব অভিযোগে দেশ থেকে বেরও করে দেওয়া হয়েছিল।

ক্ষমতায় থাকা রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান ছাড়াও সাবেক শাসক বা তাঁদের আত্মীয়দের অর্থ পাচারের নথি মিলেছে তালিকায়। এর মধ্যে আছে মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের ছেলে আলা মোবারকের নাম। ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার দুই মাসের মাথায় হোসনি মোবারক, ছেলে আলা ও গামালকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে অবশ্য মুক্তি পান মোবারকের দুই ছেলে।

বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের প্রয়াত বাবা ইয়ান ক্যামেরনের নাম এসেছে তালিকায়। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ব্যবসা করতেন ২০১০ সালে মারা যাওয়া ইয়ান ক্যামেরন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার ভাতিজা ক্লিভ খুলুবুসুজে জুমা বিদেশে অর্থ পাচার করেছিলেন। খনির মালিক এই ক্রোড়পতির ১৯টি গাড়ি আছে বলে জানা যায়।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের মামাতো দুই ভাই রামি ও হাফেজ মাখলুফের নাম মোসাক ফনসেকার তালিকায় উঠে এসেছে। তেল ও টেলিযোগাযোগ খাত নিয়ন্ত্রণ করতেন রামি। আর হাফেজের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সরঞ্জামের ব্যবসা আছে।

বিশ্ব ফুটবলের উজ্জ্বল নক্ষত্র লিওনেল মেসি ও তাঁর বাবার নাম আছে এ তালিকায়। নথি অনুযায়ী, বাবা-ছেলে মিলে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মেগা স্টার এন্টারপ্রাইজের নামে অর্থ পাচার করেছেন। এখন স্পেনে কর ফাঁকি দেওয়ার একটি অভিযোগ আছে মেসির বিরুদ্ধে।

আইসিআইজে বিশ্বের ১১০টি সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় মোসাক ফনসেকার ফাঁস হওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করেছে। এই শত সংগঠনের মধ্যে আছে ভারতের ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। পত্রিকাটি বলছে, অন্তত ৫০০ ভারতীয়র নাম মোসাক ফনসেকার তালিকায় আছে। এর মধ্যে মুম্বাই চলচ্চিত্র জগতের অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাই, তাঁর বাবা কোটেদাদি রামনা রাইকৃষ্ণ রাই, মা বৃন্দাকৃষ্ণ রাজ রাই এবং ভাই আদিত্য রাই অ্যামিক পার্টনার্স লিমিটেড নামের একটি কোম

শেয়ারবাজারনিউজ/মু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.