সিকিউরিটিজ প্রমোশনের শেয়ার কেলেঙ্কারির রায়ের সময় ধার্য
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: সিকিউরিটিজ প্রমোশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের আলোচিত শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলার রায় ঘোষণার সময় নির্ধারন করেছেন আদালত। ১৯৯৮ সালের আলোচিত এ কেলেঙ্কারির দায়ে নামক ব্রোকারেজ হাউজটিসহ তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল বিচারক হুমায়ুন কবীর আগামী ২০ এপ্রিল এ মামলায় রায়ের সময় ধার্য করেন।
ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা যায়, পূর্ব নির্ধারিত দিনে গতকাল ট্রাইব্যুনালে মামলাটির বাদীপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্যানেল আইনজীবী মো. মাসুদ রানা খান। যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষনার জন্য আগামী ২০ এপ্রিল নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে ৬ এপ্রিল বিএসইসির পক্ষ থেকে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষনার জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদনে জানানো হয়। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে ১০ এপ্রিল সাক্ষ্যগ্রহন সমাপ্ত ঘোষনা করেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ১২ এপ্রিল নির্ধারন করা হয়েছিলো। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল মামলাটির যুক্তিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিএসইসির প্যানেল আইনজীবী মো: মাসুদ রানা খান বলেন, ‘মামলাটিতে আগামি ২০ এপ্রিল রায় ঘোষনার জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।আমি মনে করি, সমস্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে আসামীদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ ছিলো তা প্রমান করতে পেরেছি। আশা করি ট্রাইব্যুনালের রায় আমরাদের পক্ষেই আসব’।
সূত্র জানায়, মামলাটিতে নিযুক্ত হওয়া নতুন বাদী বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুর রহমানের জবানবন্দী গ্রহণের মাধ্যমে দীর্ঘ ১১ বছর পর গত ১৪ মার্চ বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলাটির বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। ওইদিন মামলাটির অন্যতম সাক্ষি ডিএসইর সাবেক প্রধান অর্থ কর্মকর্তা শুভ্র কান্তি চৌধুরীর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২১ মার্চ নির্ধারণ করা হয়। আর এ নির্ধারিত দিনে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন শুভ্র কান্তি চৌধুরী। এদিকে পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২২ মার্চ নির্ধারণ করা হয়েছিলো। তবে কমিশনের পক্ষ থেকে সাক্ষি নির্ধারণ করে না দেয়ায় সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটির পরবর্তী শুনানির জন্য ২৩ মার্চ নির্ধারণ করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। এ নির্ধারিত দিনেও সাক্ষি চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএসইসি। ওইদিন ট্রাইব্যুনালের কাছে ফের সময় চেয়ে আবেদন করলে পরবর্তী বিচারের জন্য ৩০ মার্চ নির্ধারন হয়। তবে একাধিকবার তারিখ নির্ধারণ করা হলেও সাক্ষি নির্ধারণ করতে ব্যার্থ হয় বিএসইসি।
অন্যদিকে, বাদী নিয়ে জটিলতার কারণে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুর রহমান মামলার নতুন বাদী হিসেবে নিযুক্ত হন। এর পরবর্তি সাক্ষ্য গ্রহনের জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি সময় ধার্য করা হয়েছিল। তবে ২৫ ফেব্রুয়ারি এ মামলার শুনানির দিনে কমিশনের প্যানেল আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুর রহমানের পরিবর্তে মামলাটিতে নতুন করে বাদী করা হয় বিএসইসির উপ-পরিচালক জিয়াউর রহমানকে। তার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২ মার্চ পূর্ব নির্ধারিত ছিলো। তবে ওইদিন জিয়াউর রহমান বাদী হিসেবে মামলাটি সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে না পারায় তার পরিবর্তে ফের বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুর রহমানকে বাদী হিসেবে বহাল রাখা হয়। অবশ্য মাহবুবুর রহমানের জবানবন্দী গ্রহনের জন্য ১০ মার্চ নির্ধারন করা হয়েছিলো। কিন্তু এ নির্ধারিত দিনে তিনি ট্রাইব্যুনলে অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে মামলাটির পরবর্তী শুনানির জন্য ফের ১৪ মার্চ ধার্য্য করা হলে নতুন বাদীর জবানবন্দী গ্রহনের মাধ্যমে ওইদিনই মামলাটির বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির দায়ে ২০০৪ সালে বিএসইসির পক্ষে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছিলেন কমিশনের তৎকালীন সদস্য মোহাম্মদ আলী খান ও তৎকালীন পরিচালক মো. মিজানুর রহমান। দীর্ঘ ১১ বছর ঝুলে থাকার পর চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয় এবং যার মামলা নং ০২/২০১৬। সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ওইদিনই মামলাটির বাদী মোহাম্মদ আলী খান ও পরিচালক মিজানুর রহমানের নামে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছিল। তবে তাদের বর্তমান অবস্থান না জানায় এবং তারা ট্রাইব্যুনালে হাজির করা না হওয়ায় তা বাতিল করা হয়।
সিকিউরিটিজ প্রমোশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডসহ এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন কোম্পানির তৎকালীন চেয়ারম্যান শেলী রহমান ও সৈয়দ মহিবুর রহমান। মামলাটি শুরু থেকেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ব্যক্তি আসামি দুজনেই পলাতক রয়েছেন।
মামলাটির অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কোম্পানিটির অস্বাভাবিক লেনদেন তদন্তে ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই তদন্ত কমিটিতে খায়রুল আনাম খান ও শুভ্র কান্তি চৌধুরীকে সদস্য করা হয়। তবে খায়রুল আনাম খানের মৃত্যুর পর তার স্থানে ফরহাদ খানকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র ফুটে ওঠে। যা ১৯৬৯ সালের সিকিউরিটিজ অধ্যাদেশের ১৭ ধারার (ই) (২) উপ-ধারায় অবৈধ। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশের মাধ্যমে এ অনিয়ম করেছেন। যা প্রমান সাপেক্ষে, ১৭ ধারা লঙ্ঘনের ফলে ২৪ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
শেয়ারবাজারনিউজ/ওহ/আহা