প্রাতিষ্ঠানিক সক্রিয়তায় সূচকের পতন ঠেকানো সম্ভব হয়েছে
শেয়ারবাজর রিপোর্ট: প্রফিট টেকিং এর জন্য স্বল্প মেয়াদি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপ অব্যাহত থাকার কারণে দিনভর পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থান পতন ঘটে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের চেষ্টায় দিনশেষে সূচক বেড়েছে।
উল্লেখ্য, প্রফিট টেকিং এর জন্য গতকাল সোমবার দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে সূচকের পতন ঘটেছিল। এর আগে বৃহষ্পতি ও রোববার নিয়ন্ত্রক সংস্থাদের প্রচেষ্টায় পুঁজিবাজারে সূচকের ব্যাপক উত্থান ঘটেছিল। তাই স্বল্প মেয়াদি বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতার কারণে পুঁজিবাজারের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) এক শীর্ষ কর্মকর্তার সাথে আলাপ কালে জানা জায়, স্বল্প মেয়াদি বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতার কারণে পুঁজিবাজারে বিক্রয় চাপ বেড়েছে। তাই গতকালের পতনের পর আজও সূচকে নেতিবাচক প্রভাব বিরাজ করছিল। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হওয়ায় আজ সূচকের পতন ঠেকানো সম্ভব হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের একাধিক নেতার সাথে আলাপ করে জানা যায়, বর্তমানে কোম্পানিগুলোর প্রান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশের মৌসুম চলছে। আর অধিকাংশ কোম্পানিরই প্রান্তিক প্রতিবেদনে মুনাফা বেড়েছে। আর এমন খবরে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর উর্ধ্বমুখী হচ্ছে। কিন্তু এক শ্রেণীর বিনিয়োগকারীর মধ্যে স্বল্প সময়ের মধ্যে এ মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতা রয়েছে। এতে শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে যাওয়ায় বাজারের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। যার প্রভাব সূচকে পড়ছে। তাই পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে প্রয়োজন দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগ।
অপরদিকে পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগকে উৎসাহী করতে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ বাজেট প্রস্তাবে এক জুলাই, ২০১৬ থেকে শেয়ার বিক্রয়লব্ধ মূলধনী লাভের উপর নিম্নোক্ত হারে কর ধার্য করা যেতে পারে। যেমন শেয়ার ধারনকাল এক বছর পর্যন্ত হলে কর হার ৫ শতাংশ এবং শেয়ার ধারনকাল এক বছরের অধিক হলে করহার শূণ্য শতাংশ করা যেতে পারে বলে দাবী জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ড. আবু আহমেদ শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে বলেন, পুঁজিবাজারে অধিকাংশ কোম্পানি ডিভিডেন্ড হিসেবে শেয়ারহোল্ডারদের স্টক ডিভিডেন্ড দিচ্ছে। আর বর্তমানে ডিভিডেন্ড ও এজিএমের মৌসুম চলছে। তাই বোনাস হিসেবে পাওয়া শেয়ার বিক্রির হিড়িক লেগেছে। এতে বাজার থেকে মোটা অঙ্কের টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। অথচ এ বোনাস শেয়ার কোম্পানি ও পুঁজিবাজারের কোন উপকারে আসেনা। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত বোনাস শেয়ার ইস্যুতে কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকের শেয়ার বিক্রিতে কমপক্ষে তিন বছরের লকইন রাখা।
সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উধ্বমুখী প্রবণতায় শেষ হয় লেনদেন। এর ফলে ১ দিনের পতন শেষে ফের উত্থানে ফিরলো বাজার। এদিন শুরুতে উত্থান-পতন থাকলেও শেষভাগে ঘুরে দাঁড়ায় বাজার। মঙ্গলবার সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার অংকে লেনদেন কমেছে। দিনশেষে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৩০ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ০.৯২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৪৩৩০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১০৬৬ পয়েন্টে এবং ডিএসই–৩০ সূচক ১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৬৮১ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩২১ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৩৯টির, কমেছে ১৩১ টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫১ টির। আর দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ৪৩০ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
এর আগে সোমবার ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ১০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ৪৩২৯ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১০৬৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই–৩০ সূচক ৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৬৭৯ পয়েন্টে। ওই দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৯৩ কোটি ৯৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৬৩ কোটি ২৬ লাখ ৩৪ হাজার টাকা বা ১২.৮১ শতাংশ।
এদিকে দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সাধারণ সূচক ৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৮০৯৩ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৩৯টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১১২টির, কমেছে ৯৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৮টির। আজ সিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ৪০ লাখ ৭১ হাজার টাকা।
শেয়ারবাজারনিউজ/মু