আজ: শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১২ মে ২০১৬, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

অনৈতিকভাবে ৪০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে বিএসআরএমের করপোরেট উদ্যোক্তা

BSRM_sharebazarnewsশেয়ারবাজার রিপোর্ট: প্রকৌশল খাতের বিএসআরএম লিমিটেডের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান এইচ আকবর আলী এন্ড কো লি: আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বোনাস শেয়ার বিক্রি করে পুঁজিবাজার থেকে প্রায় ৪০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। আর বোনাস শেয়ার বিক্রির চাপে কোম্পানিটির শেয়ারদর ২১ শতাংশ কমেছে। আর এতে কোম্পানির অন্য শেয়ারহোল্ডাররা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গত ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ৫৬০তম কমিশন সভায় পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালক এবং ৫ শতাংশ বা তার অধিক শেয়ার ধারকদের ক্ষেত্রে তালিকাভুক্তির পরে ঘোষিত এবং প্রাপ্ত বোনাস শেয়ার প্রসপেক্টাস প্রকাশের তারিখ থেকে দুই বছর লক-ইন (শেয়ার বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা) থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে বিএসআরএম পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ২৭ এপ্রিল, ২০১৫ তারিখ থেকে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরু হয়। কিন্তু আইনটি কোম্পানিটি তালিকাভুক্তি হওয়ার পর জারি হয়েছে। তাই বিএসআরএম লিমিটেড এই আইনের আওতার বাইরে রয়েছে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিএসআরএমের উদ্যোক্তা বোনাস শেয়ার বিক্রি করে প্রায় ৪০ কোটি টাকা পুঁজিবাজার থেকে নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিএসইসি’র মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো: সাইফুর রহমান বলেন, বিএসআরএম লিমিটেড এ আইনের আওতার মধ্যে পড়বে না। কারণ আইনটি জারি হওয়ার আগে বিএসআরএম লি: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে।

গত তিন বছরে আইপিও, বোনাস শেয়ার বিক্রয় এবং মার্জারপূর্বক অতিরিক্ত শেয়ার ইস্যু করে উদ্যোক্তা কর্তৃক সেই শেয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে বাজার থেকে কী পরিমাণ অর্থ বের হয়ে গেছে, তার কি হিসাব কারো কাছে আছে? ব্যাংকিং সেক্টরের বোনাস শেয়ার ইস্যু করার একটা যুক্তি আছে বটে। কারণ ব্যাসেল-২ ও ব্যাসেল-৩-এর শর্তাবলি মানতে হলে ব্যাংকগুলোকে টায়ার ওয়ান ক্যাপিটাল বাড়াতে হবে। কিন্তু বাজারে নতুন আসা অন্য খাতের কোম্পানিগুলোকে কেন এত বোনাস শেয়ার ইস্যু করতে হবে? এসব কোম্পানির কি ব্যবসা এতই বেড়ে যাচ্ছে যে, তাদের ইক্যুইটি ক্যাপিটালকে আইপিও ইস্যুর মাধ্যমে এক বছরের মধ্যে বাড়াতে হবে। আসল উদ্দেশ্য অন্যটা। সেটা হলো, উদ্যোক্তা কর্তৃক বোনাস হিসেবে প্রাপ্ত শেয়ারগুলোকে বিক্রয় করা। গত তিন বছরে উদ্যোক্তারা কত শত কোটি টাকার বোনাস শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে অর্থ বাইরে নিয়ে গেছে, তার কি কোনো হিসাব কর্তৃপক্ষের কাছে আছে? তাহলে কর্তৃপক্ষ কি একটা ভুল করছে না অবাধে বোনাস শেয়ার ইস্যু করার অনুমতি দিয়ে এবং সেই শেয়ারকে আবার বাজারে বিক্রি করতে দিয়ে? কর্তৃপক্ষের নির্লিপ্ততার সুযোগ কিছু চালাক উদ্যোক্তা ঠিকই গ্রহণ করে চলেছে। একবার তারা উচ্চমূল্যে আইপিও ছেড়েছে, এর পর বোনাস শেয়ারের নামে লাখ লাখ কাগুজে শেয়ার সৃষ্টি করে সেগুলোকে বাজারে বিক্রি করে শুধু তারাই ধনী হয়েছে। ধনী হওয়ার এই সহজ পথ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদেরকে প্রতারণার এই কথিত অনুমোদিত পথ যত দিন বিএসইসি বন্ধ না করবে, তত দিনই শেয়ারবাজারের এ অবস্থা চলতে থাকবে। কারণ হলো, এই পথে অনেক বেশি অর্থ বাজার থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। বোনাস শেয়ার বিক্রি থেকে লব্ধ অর্থ কোম্পানির ব্যবসার কোনো কাজে আসে না। ওই অর্থ ব্যক্তির হিসাবে চলে যায়।

এর আগে কোম্পানিটি ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ ক্যাশ এবং ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে। যা গত ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ তারিখে ডিএসই’র ওয়েবসাইটে প্রকাশ হয়। গত ৩০ মার্চ, ২০১৬ তারিখে কোম্পানিটির অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) ঘোষিত ডিভিডেন্ড অনুমোদন হয়।

ডিএসই সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ এপ্রিল, ২০১৬ তারিখে বিএসআরএম লিমিটেডের করপোরেট উদ্যোক্তা এইচ আকবর আলী এন্ড কো লি: বোনাস ডিভিডেন্ড হিসেবে পাওয়া ২৬ লাখ ২৭ হাজার ১১টি শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেয়। উদ্যোক্তা এ প্রতিষ্ঠানটির কাছে বিএসআরএম লি:য়ের ২ কোটি ৮৮ লাখ ৯৭ হাজার ১২৭টি শেয়ার রয়েছে। যা বিএসআরএম লি:য়ের মোট শেয়ারের ১৪.৮১ শতাংশ।

গতকাল বুধবার (১১ মে, ২০১৬) ডিএসই ওয়েবসাইটে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানটি বোনাস শেয়ার বিক্রি সম্পন্ন করেছে বলে ঘোষণা দেয়। এ সময়ের মধ্যে ডিএসই-তে কোম্পানির শেয়ার দর ১৬৬ টাকা থেকে ৩৫ টাকা অর্থাৎ ২১ শতাংশ কমে ১৩১ টাকায় নেমে আসে। গড়ে ১৪৯ টাকা করে শেয়ার দর ধরা হলে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানটি ২৬ লাখ ২৭ হাজার ১১টি বোনাস শেয়ার বিক্রি করে মোট ৩৯ কোটি ১৪ লাখ ২৪ হাজার টাকা পুঁজিবাজার থেকে তুলে নেয়।

অন্যদিকে শেয়ার দর কমে যাওয়ার কারণ ডিএসই জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে শেয়ার দর কমার কারণ জানা নেই বলে জানানো হয়।

এর আগে, ডিভিডেন্ড ঘোষণার সময়ে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ারদর ১১৬ টাকা থেকে ৮৮ টাকা অর্থাৎ ৭৬ শতাংশ বেড়ে ২০৪ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। আর এ বিষয়ে বিএসইসি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

শেয়ারবাজারনিউজ/আ

 

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.