আজ: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৭ জুন ২০১৬, মঙ্গলবার |

kidarkar

নেগেটিভ ইক্যুইটির দায় পড়ছে ব্যাংকের ঘাড়ে

Exposure_এক্সপোজারশেয়ারবাজার রিপোর্ট: এক প্রতিষ্ঠানের ঘাড় থেকে দায় সরিয়ে আরেক প্রতিষ্ঠানের ঘাড়ে দায় দিয়ে দায়িত্ব সারছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকের সাবসিডিয়ারির মূলধন ও বিনিয়োগ প্যারেন্ট কোম্পানির মালিকানা থেকে বের করায় ব্যাংক কোম্পানির ওপর ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

পুঁজিবাজার এক্সপোজার ইস্যুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে ইক্যুইটি ইনভেষ্টমেন্ট বা পেইড আপকে পুঁজিবাজার এক্সপোজার হিসেবে গন্য করা হচ্ছে না। আর সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে দেয়া মূলধন SOLO ভিত্তিতে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসাব করা হবে না, হিসাব করা হবে কনসোলিডেটেড বা সমন্বিত ভিত্তিতে, ফলে সাবসিডিয়ারীর দায় যাচ্ছে মূল ব্যাংকের ওপর। অথচ এ বিনিয়োগে ব্যাংকে কোনো নিয়ন্ত্রন থাকছে না। ইক্যুইটি নেগেটিবে থাকার ফলে সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলো অদূর ভবিষ্যতে কোনো ধরনের ডিভিডেন্ড দিতে পারবে কি না- তা নিয়েও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সংশয় রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে এএফসি ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব এইচ মজুমদার শেয়ারবাজারনিউজ ডট কমকে বলেন, ‘কেন্দ্রিয় ব্যাংকের এ নোটিফিকেশন বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই না। এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে যথেষ্ট সময় প্রয়োজন। একই সাথে এসব সাবসিডিয়ারি কোম্পানি থেকে মূল কোম্পানি অদূর ভবিষ্যতে কোনো মুনাফা করতে পারবে কি না- তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এক্সপোজার সমন্বয়ের সময়সীমা ২০২০ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করা ছাড়া পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যার কোনো সমাধান আসবে বলে আমার মনে হয় না’।

একই সাথে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্ত অবশ্যই পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক হবে। কেননা প্যারেন্ট কোম্পানির কাছ থেকে সাবসিডিয়ারীর পাওয়া পেইড আপ এখন আর পুঁজিবাজার এক্সপোজার হিসেবে দেখা হবে না। অতএব বাজার এক্সপোজার বিষয়ে একদিকে স্বস্তির দিকে এগিয়ে গেছে। অন্যদিকে প্যারেন্ট কোম্পানির কাছ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রয়োজনে সাবসিডিয়ারী কর্তৃক নেয়া লোনের অর্থ পেইড আপ হিসেবে দেখাতে পারবে। ফলে উক্ত লোনের বিপরীতে কোন সুদ প্রদান করতে হবে না। যদি সাবসিডিয়ারী মুনাফা করে তবেই প্যারেন্ট কোম্পানি ডিভিডেন্ড পাবে। এতে সাবডিয়ারীর দায় কমে যাবে।  

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক তার মূলধনের (পরিশোধিত মূলধন, স্ট্যাটিউটরি রিজার্ভ, রিটেইনড আর্নিং ও শেয়ার প্রিমিয়ামের যোগফল) সলো পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারত, আর এখন থেকে তা কনসোলিডেটেড পদ্ধতিতে ৫০ শতাংশে পৌছেছে।সাবসিডিয়ারীগুলোতে ইক্যুইটি ইনভেস্ট ছাড়াও প্যারেন্ট ব্যাংক থেকে আরো কিছু অর্থ ঋণ নেয় সাবসিডিয়ারীরা। যার বেশির ভাগই বিনিয়োগকারীদের মার্জিন লোন হিসেবে প্রদান করা হয়। অন্যদিকে, যাদেরকে মার্জিন লোন দেয়া হয়েছে তারা প্রায় সবাই নেগেটিভ ইক্যুইটিতে অবস্থান করছে। ফলে ঋণ দিয়ে সাবসিডিয়ারী একে তো মুনাফা করতে পারছে না , তার ওপর রয়েছে মাদার কোম্পানির কাছ থেকে নেয়া ঋণের সুদ। যার ফলে সাবসিডিয়ারী গুলো রয়েছে উভয় সংকটে।

গত ২০ ডিসেম্বর ২০১৫ কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক সার্কুলারে বলা হয়, ২০১৬ থেকে তফসিলি ব্যাংকসমূহ কর্তৃক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে প্রদত্ত মূলধনের বিপরীতে ধারণকৃত ইক্যুইটি শেয়ার SOLO ভিত্তিতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হিসাবয়ানের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত হবে না। সে হিসেবে কনসোলিডেটেড বা সমন্বিত ভিত্তিতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হিসেবে অর্ন্তভূক্ত হবে।

ধরা যাক, সাবসিডিয়ারী তার প্যারেন্ট কোম্পানি থেকে ১ শত কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন পেয়েছে। তারপর সে প্যারেন্ট কোম্পানি থেকে আরো ২ শত কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যার সুদ প্রতিমাসে পরিশোধ করতে হয়। এ ছাড়াও, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক তার মূলধনের (পরিশোধিত মূলধন, স্ট্যাটিউটরি রিজার্ভ, রিটেইনড আর্নিং ও শেয়ার প্রিমিয়ামের যোগফল) সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারতো। আর সেখানে সাবসিডিয়ারীতে বিনিয়োগও ২৫ শতাংশের ভিতরেই পড়বে।

আর নতুন এ নোটিফিকেশনের ফলে এখন সাবসিডিয়ারী যে সুবিধা পাবে তা হচ্ছে: সাবসিডিয়ারীর ১ শত কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের পাশাপাশি ঋণ হিসেবে নেয়া ২ শত কোটি টাকাও পরিশোধিত মূলধনে পরিনত করতে পারবে। যার সুদ আর গুনতে হবে না বরং সেই টাকা থেকে প্রাপ্ত আয় প্যারেন্ট কোম্পানি ডিভিডেন্ড হিসেবে পাবে। আর মার্জিন লোনগুলো মাদার কোম্পানির প্রদত্ত ঋণ হিসেবে গন্য করা হবে। সর্বোপরি সাবসিডিয়ারীতে মোট বিনিয়োগ মাদার কোম্পানির পেইডআপের ৫০ শতাংশের বেশি হবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থার জন্য অনেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকে দায়ী করে থাকেন। তারা হয়তো জানেন না যে, গত ২০০০ হাজার সালের ১৯শে অক্টোবর প্রকাশিত ৩১৫-আইন/২০০ অনুযায়ী ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ থেকে মার্চেন্ট ব্যাংকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। যার ফলে মার্চেন্ট ব্যাংকের ওপর আমাদের কোন নির্দেশনা দেয়া সম্ভব হয়নি। এখন এ নোটিফিকেশনের ফলে সাবসিডিয়ারীগুলোকে কনসোলিডেটেড পদ্ধতিতে হিসেব করাতে মূল ব্যাংকের অংশ হিসেবে আমরা কাস্টমার ভাবতে পারব। তা ছাড়া আমার মনে হয় টাকার অংকের পরিধিও অনেকটা বেড়েছে। ব্যাংকের সাবসিডিয়ারী হিসেবে মার্চেন্ট ব্যাংক সহ অন্যান্যরা আরো স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারবে।

ধারণা করা হচ্ছে বর্তমানে ব্যাংকগুলোর সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোতে ইক্যুইটি ইনভেষ্টমেন্ট রয়েছে সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সার্কুলার অনুযায়ী এখন থেকে এই ৬ হাজার কোটি টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ থাকছে।

শেয়ারবাজারনিউজ/রু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.