সালভোর মহাকেলেঙ্কারী পর্ব:২, নেই কর্পোরেট গভর্নেন্স, লাভের গুড় খাচ্ছে পিপড়া
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: শেয়ারবাজার রিপোর্ট: আইপিও’র অর্থ দিয়ে উৎপাদন না বাড়িয়ে ব্যাংকে এফডিআর করে রাখা, মালিকানায় থাকা ব্যাক্তিদের কোম্পানিতে নিয়োগ দেয়া, দুই স্টক এক্সচেঞ্জে দুই ধরনের প্রসপেক্টাস দাখিল, ভুয়া রিসিট দেখিয়ে সম্পদ বাড়ানো, কর ফাঁকি, ভুয়া আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিসহ কি কেলেঙ্কারী করেনি সালভো কেমিক্যালে!
আইপিও পর্ব শেষ হওয়ার পরপরই কোম্পানির পরিচালকদের অধিকাংশই নিজ মালিকানাধীন শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে গেছেন। যেখানে, আইপিও পরবর্তি সময়ে কোম্পানির পরিচালকদের মালিকানায় মোট শেয়ারের পরিমান ছিল ৬৪.৫৪ শতাংশ, সেখানে তালিকাভুক্তির চার বছরে এসে কোম্পানিতে পরিচালকদের মালিকানাধীন শেয়ারের পরিমান কমে ২২.৬৯ শতাংশে নেমে এসেছে। স্বাধীন পরিচালকের বাহিরে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক রয়েছেন মাত্র দুজন। যারা পরস্পর স্বামী-স্ত্রী। আইপিওতে আসার সময় কোম্পানিতে পরিচালক ছিলেন ৮জন। যার ৬ জনই পরবর্তি সময়ে শেয়ার বিক্রি করে পর্ষদ থেকে বের হয়ে এসেছেন। এমনকি অনুমোদন দেওয়ার সময় ওই ৬ পরিচালকের কারো শেয়ারের পরিমান আইনানুযায়ী ২ শতাংশ ছিল না।
কর্পোরেট গভর্নেন্স গাইডলাইন অনুযায়ী, কোনো কোম্পানির উদ্যোক্তা বা পরিচালক একই কোম্পানির কোনো লাভজনক পদে কর্মরত থাকতে পারবেন না। কিন্তু সালভোর সে সময়কার পরিচালক লিটন কুমার রায় বর্তমানে কোম্পানির প্রধান হিসাবরক্ষন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। কোম্পানির বিপণন বিভাগের পরিচালক খন্দকার আমিনুর রহমানও নিজ পদেই রয়েছেন। তাঁরা উভয়ই কোম্পানির উদ্যোক্তা। কর্পোরেট গভর্নেন্স গাইডলাইনের আওতায় কোম্পানির কোনো উদ্যোক্তা পরিচালক কোম্পানির লাভজনক কোনো পদে থাকতে পারবেন না। অথচ সালভো কেমিক্যাল এ আইনের কোনো তোয়াক্কাই করছে না। এর পাশাপাশি আইপিও পরবর্তি সময়ে কোম্পানির পরিচালকদের মধ্যে সাইদা করিম ও খন্দকার আমিনুর রহমান একাধারে কোম্পানির পরিচালক ও বেতনভুক্ত কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এদিকে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষনে দেখা যায়, যে সময় কোম্পানিকে আইপিওর অনুমোদন দেওয়া হয় সে সময় কোম্পানির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্যেও পরিমান ছিল মাত্র ১০.৮৫ টাকা। বর্তমানে কোম্পানির নেট অ্যাসেট ভ্যালুর পরিমান মাত্র ১১.৭৪ টাকা। এত অনিয়মের মধ্যে কোম্পানি এ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি। অন্যদিকে কোম্পানির ঋণের পরিমান স্থিতিশীল না হয়ে উল্টো বর্তমানে দীর্ঘমেয়াদী ঋণের পরিমান দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৬৬ লাখ ১০ হাজার টাকা ও সল্পমেয়াদী ঋণের পরিমান দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
কর ফাঁকির অভিযোগও রয়েছে কোম্পানির বিরুদ্ধে। সালভো কেমিক্যাল এবং এর সাবসিডিয়ারি কোম্পানি সালভো অ্যালকালি লিমিটেড উভয় কোম্পানির বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগে মামলা চলছে। আয়কর কমিশনার করা সালভো কেমিক্যালের বিরুদ্ধে চলা মামলার রেফারেন্স নম্বর ১১৯/২০১৬ ও সালভো অ্যালকালির মামলার রেফারেন্স নম্বর ৮৯/২০১৬। উভয় মামলাই হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।
এর মধ্যেই বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সালভো কেমিক্যালকে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে এবং কোম্পানি আগামী ৩ বছর মূলধন বাড়াতে পারবে না মর্মে শাস্তি প্রদান করে।
অন্যদিকে সাধারন বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের টাকায় লাভের গুড় খাচ্ছে পিঁপড়া। এদিকে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে নানা ছলছাতুরির অভিযোগ রয়েছে। কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদনে অ্যাকাউন্টস রিসিভেবল বা কোম্পানি যাদের কাছে টাকা পাবে বলে উল্লেখ করেছে কার্যত তাদের কারো কাছেই সালভো কেমিক্যাল কোনো টাকা পাবে না।
আসাদ ট্রেডিং, আরিয়ান কেমিক্যাল, ফ্রেন্ডস কেমিক্যাল, এইচ কে এন্টারপ্রাইজ, ঝর্না কেমিক্যাল, মিতা কেমিক্যালসহ আরো বেশি প্রতিষ্ঠানের নাম কোম্পানি তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে যাদের কাছে কয়েক কোটি টাকা সালভো কেমিক্যাল পাবে। কিন্তু বাস্তবে এদের কারো কাছেই কোম্পানি কোনো টাকা পাবে না। হিসাব মিলানোর সুবিধার্থে কোম্পানি এক্ষেত্রে ছলছাতুরির আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে পণ্য আনা নেয়ার ক্ষেত্রে যে গাড়ী ব্যবহার করা হয় সেখানে থেকে ব্যক্তিগতভাবে কমিশনের বিনিময়ে কোম্পানির অধিক খরচ দেখিয়ে কোম্পানির চীফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার লিটন কুমার রায় নিজের পকেট ভারি করছে বলে জানা গেছে।
শেয়ারবাজারনিউজ/ওহ/ম.সা