টগর গাছে জবা দেখিয়ে প্রতারণা, পলাতক যুবক
শেয়ারবাজার ডেস্ক: টগর গাছে লাল টুকটুকে জবা!
গত পাঁচ-সাত দিন ওই গাছ দেখতেই গমগম করছিল বর্ধমানের দাঁইহাটের বাগটিকরা বকুলতলা। দু’দিকে হাত দু’য়েক করে বেড়ার মাঝে ফুট দু’য়েক উঁচু সে গাছ। পাশে রাখা বাক্সে মা কালীর নামে (মায়ের পায়ের জবা) প্রণামিও পড়ছিল ভালই। বাগড়া দিলেন এলাকার কয়েকজন কলেজ ছাত্র। তাঁদের সৌজন্যেই জানা গেল, প্রাকৃতিক বা দৈব কাণ্ড নয়, জবা-রহস্যের পিছনে রয়েছে তার। টগর গাছের কাণ্ডে আগে থেকে ঢুকিয়ে রাখা সেই তারে জবা ফুল গেঁথে চলছিল ঠকানো।
মঙ্গলবার (৭ জুন) সকালে সে কেরামতি ফাঁস হয়ে যেতেই গোপাল পণ্ডিতের বাড়িতে জড়ো হল জনতা। দু-চার ঘা পিঠে পড়ে। দুদ্দাড়িয়ে সপরিবার বাড়ি ছেড়ে পালালেন গোপাল।
অদ্ভুত দর্শন শিশু এবং পশু দেখিয়ে টাকা তোলার চল বাংলার গ্রামে-গঞ্জে নতুন নয়। চার হাতের ‘দেবী’র দর্শনী বাবদ, ছ’পেয়ে গরু-ছাগল নিয়ে আশীর্বাদের নামে চলে টাকা তোলা। দাঁইহাটের বছর বত্রিশের গোপাল পণ্ডিত সেখানে গাছ দিয়ে ‘ভেল্কি’ দেখানোয় অভিযুক্ত। গাছ দেখার সময় সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটে। মাঝে আধ ঘণ্টার বিরতি। ফের ‘শো’ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। কোনও কোনও দিন রাত পর্যন্ত চলত গাছ দেখানো।
বাড়ির একপাশে চায়ের দোকান গোপালের। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, সেই দোকানের আড়ালে মদ-গাঁজার কারবার চালানো হয়। পুলিশে অভিযোগও হয়েছে। তবে কাজ হয়নি। দিন সাতেক আগে গোপাল, তাঁর মা মীরা পণ্ডিত ও দিদি টগরি পড়শিদের ডেকে দেখান, তাঁদের ‘অদ্ভুত’ গাছ। বলতে থাকেন, ‘‘মা কালীর কৃপায় আমাদের টগর গাছে এ বার জবা ফুটেছে।’’ একটু-একটু করে চাউর হয়ে যায় সে কথা।
সাদা টগরের পাশে একই গাছে লাল জবা দেখে অনেকেরই চক্ষুচড়কগাছ। ইতিমধ্যে এসে পড়ে ঢাকি। হাজির হন পুরোহিত। তাঁকে দেখা যায়, টগর গাছে চন্দনের ফোঁটা দিতে। শুরু হয় আরতি। সব মিলিয়ে হইহই কাণ্ড, রইরই ব্যাপার।
আর বেড়ার ব্যবধান থেকে শ’য়ে শ’য়ে লোক গাছের উদ্দেশে প্রণাম ঠুকে দশ-কুড়ি-পঞ্চাশ টাকা ছুড়তে শুরু করেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের হিসেবে, শুধু গত রবি আর সোমবার কিছু না হলেও গড়ে অন্তত শ’পাঁচেক করে লোক হয়েছে পণ্ডিত বাড়িতে।
বেশ চলছিল। কিন্তু সন্দেহ হয় এলাকার কিছু কলেজ পড়ুয়ার। তাঁরাই এ দিন সাতসকালে হানা দেন পণ্ডিত বাড়িতে। বাড়ির লোকেদের কথা না শুনে বেড়া ভেঙে গাছের কাছে গিয়ে সোজা তুলে ফেলেন তিনটে জবা ফুল। ফাঁস হয়ে যায় ‘রহস্য’। টগর গাছটি টব সমেত মাটিতে আছড়ে ফেলা হয়।
একই রকম ‘কায়দা করা’ আর একটি টগর গাছে জবা ফুল বসিয়ে এলাকাবাসীকে সচেতনও করেন ওই কলেজ ছাত্রেরা। তাঁদের দাবি, বেড়া দিয়ে গাছ ঘিরে কাউকে কাছে ঘেঁষতে দিত না গোপালরা। গাছের উপর থেকে মশারি বিছিয়ে রাখা হয়েছিল। গাছের সামনে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে দেওয়া হতো না কাউকে। আর ভোরবেলা বা দুপুরে বাড়ির দরজা বন্ধ করে তারে নতুন করে জবা ফুল গেঁথে দেওয়া হচ্ছিল। জবা-রহস্য সামনে আসতেই গোপালকে একপ্রস্ত মারধর করা হয়। খবর যায় পুলিশে। তবে পুলিশ আসছে খবর পেয়েই গোপাল সপরিবার পালান।
গোপালের বাড়ি থেকে ১৫ বোতল মদ বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। দাঁইহাট ফাঁড়ির আইসি আবুল আরশাদ বলেন, ‘‘প্রতারণা এবং অবৈধ মদের ব্যবসা করার অভিযোগে খোঁজ চলছে গোপালদের।’’
শেয়ারবাজারনিউজ/আ