আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৯ জুন ২০১৬, রবিবার |

kidarkar

মার্চেন্ট ব্যাংকের সম্পদ সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা

merchant-bankশেয়ারবাজার রিপোর্ট: দেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সম্পদের পরিমান সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকায় এসে দাড়িয়েছে। ইস্যু ব্যবস্থাপনা, পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা, অবলেখন ও করপোরেট পরামর্শসেবার মাধ্যেমে ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠানগুলো। জানা যায়, বর্তমানে ৫৫টি প্রতিষ্ঠানের মার্চেন্ট ব্যাংকের নিবন্ধন রয়েছে। এর মধ্যে চারটি বাদে সব প্রতিষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গ মার্চেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স রয়েছে। তবে কার্যক্রম রয়েছে ৩৮টি মার্চেন্ট ব্যাংকের, যাদের সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে ১২ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা।

১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজার) বিধিমালা তৈরির পর মার্চেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের জন্য বিএসইসির নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হয়। এর আগে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), প্রগতি ইন্স্যুরেন্সসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) কাজ করত। বিধিমালা তৈরির পর থেকে মার্চেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স আবশ্যক করে দেয় বিএসইসি। ইস্যু ব্যবস্থাপনা, পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা, অবলেখন ও করপোরেট পরামর্শসেবা পরিচালনার অনুমোদন দিয়ে এসব লাইসেন্স দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে। মার্জিন ঋণ ইস্যুতে বেশ কঠিন সময় পার করলেও নিয়মিত কার্যক্রমে রয়েছে, এমন ৩৮টি মার্চেন্ট ব্যাংকের সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা।

মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সম্পদশালী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে উত্তরা ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। ১৯৯৫ সালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে উত্তরা ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯৮ সালে মার্চেন্ট ব্যাংকের লাইসেন্স পায় তারা। চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানটির মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। এ সময়ে উত্তরা ফিন্যান্সের মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫৫৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। মার্জিন ঋণের কারণে কোম্পানিটি বড় ধরনের সংকটের মধ্যে রয়েছে। গেল এপ্রিল পর্যন্ত তারা মার্জিন ঋণ বিতরণ করেছে ২০৪ কোটি টাকার। লোকসানের কারণে গ্রাহক হিসেবে ঋণাত্মক ইকুইটি প্রদর্শন করায় চাপে আছে প্রতিষ্ঠানটি।

সম্পদের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট। রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবির সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০০০ সালে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট গঠন হয় এবং ২০০১ সালে বিএসইসি থেকে নিবন্ধন পায়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯০০ কোটি টাকা। মার্জিন ঋণ বিতরণে শীর্ষ স্থানে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ৮০১ কোটি টাকা মার্জিন ঋণ বিতরণ করেছে। ২০০৩ সালে এবি ব্যাংক মার্চেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। ২০১০ সালে সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এবি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে মার্চেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম স্থানান্তর হয়। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানটির সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৫০ কোটি টাকায়। প্রতিষ্ঠানটি ৭০১ কোটি টাকার মার্জিন ঋণ বিতরণ করেছে। ৭৬৬ কোটি টাকার সম্পদ নিয়ে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে অগ্রণী ইকুয়িটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির মূলধনের পরিমাণ ৪০০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারবাজারে নিজস্ব বিনিয়োগ রয়েছে ৭১৩ কোটি টাকা, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

পঞ্চম অবস্থানে থাকা প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্টের মোট সম্পদ রয়েছে ৬৯৭ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি মার্জিন ঋণ বিতরণ করেছে ৫৬৬ কোটি টাকা। আর নিজস্ব বিনিয়োগ রয়েছে ১২৩ কোটি টাকা। সম্পদের দিক দিয়ে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস লিমিটেড। গত এপ্রিল পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানটির সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে ৫৫১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। মার্চেন্ট ব্যাংকটির ২৯১ কোটি ৮১ লাখ টাকা মার্জিন ঋণ বিতরণ করেছে। বিতরণকৃত ঋণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ঋণাত্মক হয়ে পড়ায় প্রতিষ্ঠানটি গত বছর ১০ কোটি ২৯ লাখ টাকা লোকসানের মুখে পড়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান জনতা ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের মোট সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে ৫৩৪ কোটি টাকা। সম্পদের দিক দিয়ে সপ্তম অবস্থানে থাকা মার্চেন্ট ব্যাংকটির মার্জিন ঋণে গ্রাহকদের ইকুইটি ঋণাত্মক। শেয়ারবাজারে প্রতিষ্ঠানটি ২৯১ কোটি ৮১ লাখ টাকা মার্জিন ঋণ বিতরণ করেছে। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি সাড়ে ৮ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে।

অষ্টম অবস্থানে থাকা ইউনিক্যাপ ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের মোট সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে ৫২৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ৫২৩ কোটি টাকার মার্জিন ঋণ বিতরণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। মার্জিন ঋণে গ্রাহক ইকুইটি অংশের ২০ শতাংশই ঋণাত্মক। প্রায় ৫০০ কোটি টাকার সম্পদ নিয়ে নবম অবস্থানে রয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। আর দশম অবস্থানে থাকা ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে ৪৮২ কোটি টাকা। মার্জিন ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়া প্রতিষ্ঠানটি গত বছর ৩৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে।

এছাড়া বিএলআই ক্যাপিটাল, প্রাইম ফিন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট, লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্টস, বানকো ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, সোনালী ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সম্পদ ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে রয়েছে। দেশের প্রথম মার্চেন্ট ব্যাংক হিসেবে এএএ কনসালট্যান্টস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজরস লিমিটেড ১৯৯১ সাল থেকে মার্চেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির সম্পদের পরিমাণ মাত্র ২০ কোটি ৫১ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এছাড়া অ্যালায়েন্স ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড ৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, এএফসি ক্যাপিটাল ১৩ কোটি ৬৩ লাখ, এফএএস ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ২২ কোটি ৪৫ লাখ, রেস পোর্টফোলিও অ্যান্ড ইস্যু ম্যানেজমেন্ট ২২ কোটি ৭১ লাখ টাকা, আইএল ক্যাপিটালের ২৭ কোটি ২২ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে।

শেয়ারবাজারনিউজ/ওহ

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.