আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২১ জুন ২০১৬, মঙ্গলবার |

kidarkar

ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগে কর রেয়াত কমেছে: শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা

NBR_SharebazarNewsশেয়ারবাজার রিপোর্ট : মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর লক্ষ্যে নতুন অর্থ আইনে আয়ের বিপরীতে রেয়াত সুবিধার আওতাধীন ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের নির্ধারিত সীমা কমানোর পাশাপাশি রেয়াতের হারও কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তাই আগামী অর্থবছর থেকে শেয়ারবাজারসহ সব খাতে ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের জন্য কর রেয়াত সুবিধা কমছে। এতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ব্যক্তিখাতে করযোগ্য আয়ের বিনিয়োগসীমা ২০ শতাংশ ও কর রেয়াত সুবিধা বিনিয়োগভেদে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে করযোগ্য ব্যক্তি তার আয়ের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত (সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা) এনবিআর অনুমোদিত যেকোনো খাতে বিনিয়োগে ১৫ শতাংশ হারে কর রেয়াত সুবিধা পান। ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত ব্যক্তির মোট আয়ের ২০ শতাংশ বিনিয়োগের বিপরীতে ১০ শতাংশ আয়কর রেয়াত মিলত। তবে এটি পরিবর্তন করে গত দুই অর্থবছর করদাতাদের বিনিয়োগের বিপরীতে সুবিধা কিছুটা বাড়ানো হয়। ফলে এ খাত থেকে প্রতি বছর এনবিআরের রাজস্ব আয় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা কমে যায়।

এবার রেয়াত সুবিধা কমানোর প্রস্তাব সম্পর্কে এনবিআর বলছে, মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর লক্ষ্যে এ আইনে আবার পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন আইন অনুযায়ী, করযোগ্য আয়ের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগে কর রেয়াতের সুযোগ কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হচ্ছে। অন্যদিকে এর ওপর আয়কর রেয়াত ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০, ১২ ও ১৫ শতাংশ হারে তিনটি স্লাবে ভাগ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে এনবিআরের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিনিয়োগ উৎসাহিত করার জন্য দুই বছর আগে রেয়াত সুবিধা বাড়ানো হলেও কার্যত তা বিনিয়োগ বাড়ায়নি। বরং এ কারণে গত দুই বছর সরকারের রাজস্ব কমেছে। সর্বশেষ অর্থবছরে সরকার এখান থেকে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব কম পেয়েছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই আইনটি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিনিয়োগসীমা ও কর রেয়াত সুবিধা কমানোর কারণে কম আয়ের করদাতাদের তেমন সমস্যা হবে না। কারণ নতুন নিয়মে তিনটি স্লাব থাকায় সব শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দিয়েই রাজস্ব আহরণ বাড়ানো যাবে।

নতুন আইন অনুযায়ী, একজন করদাতা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের বিপরীতে ২০ শতাংশ হারে তথা ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে ১৫ শতাংশ কর রেয়াত সুবিধা পাবেন। অর্থাৎ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করলে তিনি ৩০ হাজার টাকা কর রেয়াত সুবিধা পাবেন। আগের আইনে একজন করদাতা ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগে ৩০ শতাংশ রেয়াত সুবিধার আওতায় ৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ৪৫ হাজার টাকা রেয়াত পেতেন।

নতুন আইনে কর রেয়াতের আরো দুটি স্লাব নির্ধারণ করায় বড় বিনিয়োগকারীদের কর রেয়াত সুবিধা আরো কমবে। নতুন আইনে একজন বিনিয়োগকারী সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা আয়ে ২০ শতাংশ হিসেবে ৬ লাখ টাকা বিনিয়োগে প্রথম ২ লাখে ১৫ শতাংশ ও বাকি ৪ লাখে ১২ শতাংশ রেয়াত সুবিধা পাবেন। সে হিসেবে তিনি প্রথম ২ লাখে ১৫ শতাংশ হারে ৩০ হাজার টাকা ও পরের ৪ লাখে ১২ শতাংশ হারে ৪৮ হাজার টাকাসহ মোট ৭৮ হাজার টাকা কর রেয়াত সুবিধা পাবেন। আগের হিসেবে ওই বিনিয়োগকারী ৩০ শতাংশ হারে বিনিয়োগের সুযোগ পেতেন ৯ লাখ টাকা ও রেয়াত সুবিধা পেতেন ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকার।

পরের স্লাবে যদি করদাতার আয় ৩০ লাখের বেশি হয়, সেক্ষেত্রে প্রথম ২ লাখের ওপর ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ টাকার ওপর ১২ শতাংশ এবং অবশিষ্ট অঙ্কের বিনিয়োগের ওপর ১০ শতাংশ কর রেয়াত মিলবে। তবে দেড় কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগে এ রেয়াত সুবিধা নেয়া যাবে না। কোনো ব্যক্তির মোট আয় ৬০ লাখ টাকা হলে নতুন আইনে ২০ শতাংশ হিসেবে ১২ লাখ টাকা বিনিয়োগে আয়কর রেয়াত পাবেন। এর মধ্যে প্রথম ২ লাখের ওপর ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখের ওপর ১২ শতাংশ এবং পরবর্তী ৬ লাখের ওপর ১০ শতাংশ হারে আয়কর রেয়াত পাবেন। অর্থাৎ তুলনামূলক বেশি আয়ের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের রেয়াত কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে আগের নিয়মে ওই ব্যক্তি ১৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা রেয়াত সুবিধা পেলেও নতুন আইনে তিনি ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা পর্যন্ত কর রেয়াত সুবিধা পাবেন।

ব্যক্তিশ্রেণীর কর রেয়াত সুবিধা কমিয়ে দেয়ায় তা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বিনিয়োগে রেয়াত সুবিধা কমিয়ে দেয়ার এ প্রস্তাব সঠিক হয়নি। শেয়ারবাজার ও সঞ্চয়পত্রসহ যেকোনো স্থানে বিনিয়োগে বিশেষ সুবিধা পাওয়ায় অনেকেই টাকা ব্যাংকে না রেখে বাজারে বিনিয়োগ করত। কর রেয়াত সুবিধার এ হার কমিয়ে দেয়ায় অনেকেই বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হবেন।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খায়রুল বাশার এ প্রসঙ্গে বলেন, শেয়ারবাজারের অবস্থা এমনিতেই ভালো না। ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা আগের চেয়ে অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছেন। আমরা আশা করব, বাজারের স্বার্থে এনবিআর রেয়াত সুবিধা কমাবে না।

শেয়ারবাজারনিউজ/আ/ম.সা

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.