আজ: শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৫ জুন ২০১৬, শনিবার |

kidarkar

মুনাফায় ফিরছে মার্চেন্ট ব্যাংক

merchant-bankশেয়ারবাজার রিপোর্ট: অবেশেষে মুনাফা গুনতে শুরু করেছে লোকসানের ভরে ন্যুজ দেশের মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। বেশিরভাগ মার্চেন্ট ব্যাংকই সর্বশেষ অর্থবছরে লোকসানের মধ্যে থাকলেও বেশকিছু ব্যাংক এরই মধ্যে লোকসান কাটিয়ে মুনাফার মুখ দেখা শুরু করেছে। আর এ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।

জানা যায়, সর্বশেষ অর্থবছরে ৫৫টির মধ্যে মুনাফা দেখিয়েছে ২২টি মার্চেন্ট ব্যাংক।

জানা গেছে, মার্জিন ঋণের নেগেটিভ ইকুইটির (মূলধন ঘাটতি) বিপরীতে ধার্য করা সুদকেও মুনাফায় অন্তর্ভুক্ত করছে অনেক মার্চেন্ট ব্যাংক। বাস্তবে যেখানে গ্রাহকদের দেয়া মার্জিন ঋণের আসল ফিরে পাওয়া নিয়েই দুশ্চিন্তা, সেখানে এ ঋণের ওপর ধার্য করা সুদের ভিত্তিতে মুনাফা গণনার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের বলছেন, দেশের শেয়ারবাজারে স্মরনকালের সবচেয়ে বড় ধসের আগে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বেশিরভাগই বড় অঙ্কের লোকসান করেছে। সঞ্চিতি অবলোপনের মতো পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করে বছরে বছরে এ লোকসানের ভার কমিয়ে আনছে তারা। কিছু প্রতিষ্ঠান অনাদায়ী সুদের আশা ছেড়ে দিয়েছে। কেউ কেউ আবার এখনো এগুলোকে সম্পদ মনে করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্চেন্ট ব্যাংক কর্মকর্তা, ‘মার্জিন ঋণের অনাদায়ী সুদ গ্রাহকদের কাছ থেকে কবে পাওয়া যাবে, তার কোনো অনুমানও করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় প্রায় অসম্ভব এ পাওনার ভিত্তিতে মুনাফা গণনা করে তার ওপর আবার কর দেয়াটা আমাদের দৃষ্টিতে কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। হাতে গোনো দু-একটি মার্চেন্ট ব্যাংক লোকসান সমন্বয় করে নিয়ে নতুন করে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করছে। বর্তমানে পরিচালন কর্মকাণ্ড থেকে মুনাফা করার মতো আয় খুব বেশি মার্চেন্ট ব্যাংকের নেই। অনেক মার্চেন্ট ব্যাংক তাদের পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে সুদের আয়ের ওপর নির্ভরশীল’।

শেয়ারবাজারের টানা নিম্নমুখী প্রবণতায় দীর্ঘদিন ধরেই সংকটে আছে মার্চেন্ট ব্যাংক। নিজস্ব পোর্টফোলিওতে লোকসান কারো কারো জন্য দুশ্চিন্তার কারণ। তবে বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই মূল সমস্যা মার্জিন ঋণ। জানা যায়, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর দেয়া মার্জিন ঋণ প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। ঋণাত্মক গ্রাহক ইকুইটির কারণে মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার কেনার পর বিনিয়োগকারীরা তা বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। এর ওপর প্রতিনিয়ত সুদের অঙ্ক বাড়তে থাকায় অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর দায় তার মূলধনকেও ছাড়িয়ে গেছে।

সর্বশেষ অর্থবছরে দেশের বড় মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে পেছনে ফেলে মুনাফায় শীর্ষে অবস্থান করছে এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। ২০১৫ সালে ৩১ কোটি ১১ লাখ টাকা মুনাফা দেখিয়েছে ১৫০ কোটি টাকা মূলধনের মার্চেন্ট ব্যাংকটি। বিতরণকৃত মার্জিন ঋণের বিপরীতে এ ব্যাংকের গ্রাহকের ইকুইটি ১৫.৪৭ শতাংশ। মুনাফার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা উত্তরা ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের মুনাফা হয়েছে ১৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ মার্চেন্ট ব্যাংকটির মূলধন ৫৫৭ কোটি টাকা। তৃতীয় স্থানে থাকা ইসি সিকিউরিটিজ গেল বছর ১৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। এছাড়া আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ১১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, এবি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, এমটিবি ক্যাপিটাল ৮ কোটি ৩ লাখ টাকা, সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্স লিমিটেড ৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা, অগ্রণী ইকুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা, গ্রীনডেল্টা ক্যাপিটাল ১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা, আলফা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি ১ কোটি ৬ লাখ টাকা, রেস পোর্টফোলিও অ্যান্ড ইস্যু ম্যানেজমেন্ট ৭১ লাখ টাকা, গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ৬৯ লাখ টাকা, প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট ৫৮ লাখ টাকা, ব্যানকো ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ৪০ লাখ টাকা, এফএএস ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ৩০ লাখ টাকা, আইএল ক্যাপিটাল ২৮ লাখ টাকা, আইআইডিএফসি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ২০ লাখ টাকা, এএফসি ক্যাপিটাল ১২ লাখ টাকা এবং বিজনেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড ১১ লাখ টাকা মুনাফা করেছে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গেল বছর কোনো মুনাফা দেখায়নি ৩০০ কোটি টাকা মূলধনের ট্রাস্ট ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। এ মার্চেন্ট ব্যাংকটির বিতরণকৃত মার্জিন ঋণে গ্রাহকের ইকুইটি ৬২.৮১ শতাংশ। মার্জিন ঋণ সংকটের কারণে মুনাফা কিংবা লোকসান না দেখানো আরো একটি মার্চেন্ট ব্যাংক হলো বিএলআই ক্যাপিটাল লিমিটেড।

অন্যদিকে মার্জিন ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি ও পোর্টফোলিও বিনিয়োগে দক্ষতা না দেখাতে পারায় লোকসান দেখানো মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যালায়েন্স ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেড, ইউনিক্যাপ ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, যমুনা ব্যাংক ক্যাপিটাল লিমিটেড, লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্ট, এক্সিম ইসলামী ইনভেস্টমেন্ট, এমটিবি ক্যাপিটাল, সোনালী ইনভেস্টমেন্ট, এনবিএল ক্যাপিটাল, জনতা ক্যাপিটাল, সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল ও ব্র্যাক ইপিএল ও বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো।

শেয়ারবাজারনিউজ/ওহ

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.