বিশ্ববাজারে তোলপাড়
শেয়ারবাজার ডেস্ক: ঐতিহাসিক গণভোটে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ত্যাগের সিদ্ধান্তে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে বিশ্ববাজার। যুক্তরাজ্যের মুদ্রা পাউন্ড স্টার্লিংয়ের মূল্যমান ৩১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে গতকাল শুক্রবার। ঝাঁকুনি খেয়েছে এশিয়ার বড় বড় পুঁজিবাজারের সূচক আর তেলের দামও।
লন্ডনের একটি ব্রোকারেজ কোম্পানিতে এক উদ্বিগ্ন কর্মীর হতাশা l ছবি: রয়টার্সবৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত গণভোটে যুক্তরাজ্যের ২৮ রাষ্ট্রের জোট ইইউ ছাড়ার পক্ষে ভোট পড়ে প্রায় ৫২ শতাংশ। গতকাল সকালে ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই পড়তি লক্ষ করা যায় বিশ্ববাজারে। বড় প্রভাব পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারেও। ওয়াল স্ট্রিটে গতকাল লেনদেন শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে ডাউ জোনস সূচক ৫০৫ পয়েন্ট কমে যায়। গত জানুয়ারি মাসের পর এক দিনে এটিই বড় পতন। ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের ব্যাপক দরপতন হয়েছে। ১৯৮৫ সালের পর থেকে এটিই পাউন্ডের সর্বনিম্ন মূল্যমান। গতকাল সকালে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের শুরুতেই সূচক ৮ শতাংশ পড়ে যায়।
অবশ্য ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর মার্ক কার্নেই বলেছেন, এই ধাক্কা সাময়িক। বাজারের অস্থিরতা মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ২৫০ বিলিয়ন পাউন্ডের বেশি অর্থ দিতে প্রস্তুত।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর বাজারের এ ধরনের অস্থিতিশীলতা আর লক্ষ করা যায়নি।
ভোটের আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আশঙ্কা করেছিল, ব্রেক্সিট (ইইউ থেকে ব্রিটেনের এক্সিট অর্থাৎ বেরিয়ে যাওয়ার সংক্ষিপ্ত নাম) হলে তা হবে বিশ্ববাজারে বড় ধরনের আঘাত। এ আশঙ্কা সত্যি হয়েছে। অনেক বিশ্লেষক এটিকে বৈশ্বিক বাজারব্যবস্থার জন্য ‘ভূকম্পন’ হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন।
যুক্তরাজ্যের ইইউতে না থাকার পক্ষে রায়ে শুধু ইউরোপে নয়, পতন ঘটেছে এশিয়ার পুঁজিবাজারেও। গতকাল জাপানের স্টক এক্সচেঞ্জ সূচক নিক্কেই-২২৫ ৭ দশমিক ৯ শতাংশ কমে ১৪ হাজার ৯৫২ দশমিক শূন্য ২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ২০১১ সালে সুনামির পর এটিই এক দিনে সবচেয়ে বেশি দরপতনের রেকর্ড। দক্ষিণ কোরিয়ায় সূচক কোসপি ৩ দশমিক ১ শতাংশ কমে ১ হাজার ৯২৫ দশমিক ২৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
চীনের সাংহাই কম্পোজিট সূচক ১ দশমিক ৩ শতাংশ কমে ২ হাজার ৮৫৩ দশমিক ৯৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে হংকং স্টক এক্সচেঞ্জ হ্যাং সেং-এর সূচক ৪ দশমিক ২ শতাংশ কমে ২০ হাজার শূন্য শূন্য ৫ দশমিক ৬২ পয়েন্টে পৌঁছেছে।
ভারতের মুম্বাইয়ের সেনসেক্স সূচক ৩ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ২৬ হাজার ২২ দশমিক ৬০ পয়েন্ট হয়। অস্ট্রেলিয়ার স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক ৩ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ৫ হাজার ১০০ পয়েন্টে নেমে আসে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামেরও বড় ধরনের পতন ঘটে গতকাল। এক দিনেই তেলের দাম কমে যায় ৬ শতাংশের বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আপাতত বিভিন্ন দেশের আন্তসীমান্ত বাণিজ্য ও চাহিদা কমে যাবে।
বিশ্বনেতারাসহ বিশ্লেষকদের আশঙ্কা ছিল, ব্রেক্সিট হলে তা বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য কঠিন সময় নিয়ে আসবে। তাঁদের সেই আশঙ্কাই এখন রূঢ় বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।
শেয়ারবাজারনিউজ/আ