আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৬ জুন ২০১৬, রবিবার |

kidarkar

নেতিবাচক খবরে দর হারিয়েছে বস্ত্র খাত

তৈরি পোশাকশেয়ারবাজার রিপোর্ট: ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনের আলাদা হয়ে যাওয়া (ব্রেক্সিট) এবং ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তির কারনে বাংলাদেশের বস্ত্র খাত হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

যার প্রভাব দেশের শেয়ারবাজারে পড়েছে। পরিণতিতে আজ প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বস্ত্র খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। শতাংশের হিসাবে যা ৭৭ শতাংশ।

জানা যায়, বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির একটি বড় বাজার হলো ইউরোপ। ব্রিটেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক বিনিয়োগকারী দেশ। বাংলাদেশে থেকে প্রতিবছর ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের মূল্যমানের পণ্য যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হয়, যেখানে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। পাশাপশি বাংলদেশে থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অপ্রচলিত পণ্যও যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হয়ে থাকে। তাছাড়া ইইউ’র হাত ধরে বাংলাদেশ ইউরোপের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। কিন্তু বাণিজ্য সংক্রান্ত সব চুক্তিই ইইউ’র সাথে। ইইউ ছেড়ে দেয়ায় ব্রিটেনের সঙ্গে বাংলাদেশকে নতুন করে বাণিজ্য চুক্তিতে আসতে হবে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অবস্থান পঞ্চম। এ অবস্থান আরো নিচে নেমে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইউএস ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (ইউএসএফআইএ)। তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন ছাড়া মার্কিন প্রতিষ্ঠানের কাছে জনপ্রিয় দুই উৎস দেশ হলো ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ। এ দুই উৎস থেকে ক্রয় প্রবৃদ্ধি আগামী দুই বছরও অব্যাহত থাকবে। তবে এর গতি হবে অনেক স্লথ।

ইউএসএফআইএর পর্যালোচনা বলছে, এখন সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসতে শুরু করেছে মার্কিন ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এ পর্যালোচনা জরিপে অংশ নেয়া উত্তরদাতাদের মাত্র ২২ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন, আগামী দুই বছরে বাংলাদেশ থেকে পোশাক ক্রয় বাড়াবেন তারা। অন্যদিকে ৬০ শতাংশের বেশি উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তারা ভিয়েতনাম থেকে ক্রয় বাড়াবেন। অথচ ২০১৪ ও ২০১৫ সালের পর্যালোচনা জরিপে যথাক্রমে ৬৫ ও ৪২ শতাংশ উত্তরদাতা বাংলাদেশ থেকে ক্রয় বাড়ানোর কথা বলেছিলেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধিতে সম্ভাবনাময় পাঁচ শীর্ষ দেশের মধ্যে আছে বাংলাদেশ। জনপ্রিয়তা অব্যাহত থাকলেও বাংলাদেশকে অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ নিয়ে প্রবল উত্সাহে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। আর চীনের বিকল্প গন্তব্য হিসেবে অবস্থান সুসংসহত করতে বাংলাদেশকে আরো প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয়ে নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তি করেছে। স্বাভাবিকভাবেই এ চুক্তির আওতায় থাকা ভিয়েতনামের কাছ থেকে ক্রয় বাড়াতে উদ্যোগী হচ্ছেন মার্কিন ক্রেতারা। বাংলাদেশ থেকে ক্রয় বাড়ানোর উত্সাহে ঘাটতির আরেকটি কারণ দেশটির অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক মন্দা। মার্কিন ক্রেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে আমাদের কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপনা ও মূল্য সক্ষমতার দিকে আরো মনোযোগ দিতে হবে বলে আমি মনে করি।’

এদিকে, তৈরি পোশাক রপ্তানি নিয়ে এতোসব নেতিবাচক খবরের প্রভাবে শেয়ারবাজারে বস্ত্র খাতের অধিকাংশ কোম্পানি শেয়ার দর হারাচ্ছে। ডিএসই-তে তালিকাভুক্ত ৪৪টি বস্ত্র খাতের কোম্পানির মধ্যে ৩৪টিরই শেয়ারদর কমেছে। ৬টি কোম্পানির শেয়ারদরে কোন পরিবর্তন হয়নি। শেয়ারদর পড়ে যাওয়ায় এ খাতের বাজার মূলধন ১.২৪ শতাংশ কমেছে।

এ প্রসঙ্গে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্রেক্সিটের কারনে বিশ্বব্যাপি অর্থনৈতিক সঙ্কট চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওই সংস্থাটির গবেষণা প্রতিবেদন আমাদের তৈরি পোশাকের জন্য অশনি সঙ্কেত। তাই বস্ত্র খাতকে ঘিরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যার প্রভাব আজ শেয়ারবাজারে পড়েছে।

শেয়ারবাজারনিউজ/আ

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.