শেয়ারবাজারে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগে কর রেয়াত পাওয়া যাবে
শেয়ারবাজার রিপোর্ট : ২০১৬ সালের প্রস্তাবিত অর্থ আইনে করযোগ্য আয়ের ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগে রেয়াত সুবিধার প্রস্তাব করা হয়েছিল। শুরুতে রেয়াত সুবিধা কমিয়ে আনার প্রস্তাব করা হলেও সংশ্লিষ্টদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত এ বিনিয়োগসীমা ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। তবে এ সুবিধার আওতায় বিনিয়োগে কর রেয়াতের হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। রোববার বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত ২০১৬ সালের চূড়ান্ত অর্থ আইন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
চূড়ান্ত অর্থ আইন অনুযায়ী, শেয়ারবাজার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংকসহ যেকোনো স্থানে বিনিয়োগে একজন করযোগ্য ব্যক্তি মোট আয়ের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কর রেয়াত সুবিধা পাবেন। তবে বিনিয়োগের পরিমাণভেদে রেয়াতের হার ১৫-১০ শতাংশ হতে পারে। ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে ১৫ শতাংশ, ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে ১২ শতাংশ ও ৩০ লাখ টাকার বেশি সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে ১০ শতাংশ পর্যন্ত রেয়াত সুবিধা দেয়া হয়েছে। গত অর্থবছর পর্যন্ত এ রেয়াত সুবিধার আওতাধীন বিনিয়োগসীমা ছিল ৩০ শতাংশ ও রেয়াতের হার ছিল ১৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে তা কমিয়ে বিনিয়োগসীমা ২০ শতাংশ ও রেয়াতের হার অবস্থাভেদে ১০ শতাংশ পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছিল।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত ব্যক্তির মোট আয়ের ২০ শতাংশ বিনিয়োগের বিপরীতে ১০ শতাংশ আয়কর রেয়াত মিলত। বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে এটি পরিবর্তন করে গত দুই অর্থবছর করদাতাদের বিনিয়োগের বিপরীতে এ সুবিধা কিছুটা বাড়ানো হয়েছিল। বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত হারে না বাড়ায় চলতি অর্থবছর থেকে তা আবার আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে করদাতাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চূড়ান্ত অর্থবিলে তা আবারো কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।
এ বিষয়ে এনবিআরের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে বলেন, বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য দুই বছর আগে এ সুযোগ দেয়া হলেও কার্যত তা বিনিয়োগ বাড়ায়নি। বরং এ কারণে গত দুই বছর সরকারের রাজস্ব কমেছে। সর্বশেষ অর্থবছরে সরকার এখান থেকে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বিষয়টি মাথায় রেখেই আইন সংশোধন করে রেয়াত সুবিধা ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছিল। তবে চূড়ান্ত অর্থ আইনে বিনিয়োগের বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করে তা ২৫ শতাংশ পর্যন্ত করা হয়েছে।
নতুন আইন অনুযায়ী, একজন করদাতা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের বিপরীতে ২৫ শতাংশ হারে তথা ২ লাখ ৫০ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে ১৫ শতাংশ কর রেয়াত সুবিধা পাবেন। অর্থাৎ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগে তিনি ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা কর রেয়াত সুবিধা পাবেন। প্রস্তাবিত আইনে ১০ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে ২০ শতাংশ রেয়াত সুবিধার আওতায় ২ লাখ টাকা বিনিয়োগে ৩০ হাজার টাকা রেয়াত সুবিধার প্রস্তাব করা হয়েছিল।
নতুন আইনের অন্য দুটি স্লাবে একজন বিনিয়োগকারী সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা আয়ে ২৫ শতাংশ হিসেবে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগের প্রথম ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ১৫ শতাংশ হারে এবং বাকি ৫ লাখ টাকায় ১২ শতাংশ কর রেয়াত সুবিধা পাবেন। এক্ষেত্রে তিনি প্রথম ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার বিপরীতে ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা ও পরবর্তী ৫ লাখে ৬০ হাজার টাকাসহ মোট ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা কর রেয়াত সুবিধা পাবেন। প্রস্তাবিত আইনে সমপরিমাণ আয়ের বিপরীতে বিনিয়োগে রেয়াত ছিল ৭৮ হাজার টাকা।
পরের স্লাবে যদি করদাতার আয় ৩০ লাখ টাকার বেশি হয়, সেক্ষেত্রে প্রথম ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগে ওপর ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকার ওপর ১২ শতাংশ ও অবশিষ্ট অঙ্কের বিনিয়োগের ওপর ১০ শতাংশ কর রেয়াত মিলবে। তবে দেড় কোটি টাকার বেশি আয়ের বিপরীতে বিনিয়োগে এ রেয়াত সুবিধা নেয়া যাবে না। চূড়ান্ত আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির মোট আয় সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা হলে ২৫ শতাংশ হিসেবে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত রেয়াত সুবিধায় বিনিয়োগ করা যাবে; প্রস্তাবিত আইনে যা ছিল ৩০ লাখ টাকা। এ স্লাবে প্রস্তাবিত আইনে ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগে ৩ লাখ ২২ হাজার টাকা রেয়াত সুবিধা দেয়া হয়েছিল। তবে চূড়ান্ত আইনে এ বিনিয়োগ সুবিধা ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা হওয়ায় রেয়াতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।
প্রসঙ্গত, ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত করযোগ্য আয়ে ৩০ শতাংশ হারে ১৫ শতাংশ কর রেয়াত সুবিধা দেয়া হয়েছিল। এতে একজন বিনিয়োগকারী সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কর রেয়াত সুবিধা পেতেন।
শেয়ারবাজারনিউজ/আ