পাঁচ বছরে ইস্যুই করেনি ১৬ ইস্যু ম্যানেজার
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: ইস্যু ম্যানেজমেন্টের জন্য মার্চেন্ট ব্যাংকের লাইসেন্স নিয়েও বিগত পাঁচ বছরে একটি ইস্যুও জমা দেয়নি ১৬ মার্চেন্ট ব্যাংক। সিকিউরিটিজ আইনানুযায়ী প্রতি তিন বছরে একটি ইস্যু জমা দেওয়ার বাধ্য-বাধকতা থাকলেও দীর্ঘ সময় ধরে ইস্যু করতে পারছে না এসব কোম্পানি। এমনকি এর মধ্যে ৬ ইস্যু ম্যানেজার প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কোনো ইস্যু ম্যানেজমেন্ট করতে পারেনি।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে জানা যায়, ইস্যু ম্যানেজারের লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও ইস্যু করতে পারছে না এমন মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর তালিকা তৈরী করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। এর মধ্যে ১৬টি মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েছে যেগুলো ২০১১ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে ২০১৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত কোনো ইস্যু বিএসইসি’তে জমা দিতে পারেনি।
পুঁজিবাজারে ২০১০ সালের বড় ধরনের ধ্বসের পর থেকে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো নাজুক অবস্থায় রয়েছে। অধিকাংশ কোম্পানির ইক্যুইটি নেগেটিভে থাকায় নতুন করে মার্জিন ঋণ প্রদান বা আন্ডার-রাইটিংয়ের ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখিন হচ্ছে কোম্পানিগুলো। নাজুক অবস্থায় থাকা মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সাথে পাল্লা দিয়ে নতুন করে আসা কোম্পানিগুলোও আইনের নমনীয়তা নেওয়ার সুযোগ খুঁজছে। পাঁচ বছরে ইস্যু জমা না দেওয়া ১৬ কোম্পানির মধ্যে ১৩টি কোম্পানিই পুঁজিবাজারে ধ্বস শুরু হওয়ার পর লাইসেন্স নিয়েছে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোম্পানিগুলো কোনো ইস্যুই জমা দেয়নি।
জানা যায়, সরাসরি স্বীকার না করলেও আয়ের হিসাব করেই ইস্যু ম্যানেজমেন্ট করছে না কোম্পানিগুলো। ইস্যু ম্যানেজমেন্টে তুলনামুল বেশি খাটনিতে কম আয় হওয়ার কারণে এদিকে মার্চেন্ট ব্যাংকাররা ঝুঁকছেন না। এর পাশাপাশি রয়েছে দক্ষ জনবলের অভাব। পাবলিক ইস্যু রুলসের অধীনে কাজ করার মত দক্ষ কর্মী অধিকাংশ মার্চেন্ট ব্যাংকেই নেই। আর এ ধরনের দক্ষ কর্মীদের পেছনে কোম্পানির বেশি খরচ করে কম মুনাফা করতে আগ্রহী নন। আর এ কারণে আইনেরও তোয়াক্কা করছে না এসব কোম্পানির কর্তৃপক্ষ।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো ইস্যু জমা না দেওয়া মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো হচ্ছে- এআইবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, বিডি ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল হোল্ডিং, বিএলআই ক্যাপিটাল লিমিটেড, ইবিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, এফএএস (ফাস) ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড ও এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। এসব মার্চেন্ট ব্যাংকের সাথে সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্স, কসমোপোলিটন ফাইন্যান্স, এক্সিম ইসলামি ইনভেস্টমেন্ট, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, যমুনা ব্যাংক ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট, রেস পোর্টফোলিও ইস্যু ম্যানেজমেন্ট ও রুপালী ইনভেস্টমেন্ট পুঁজিবাজারে ধ্বসের প্রারম্ভিক পর্যায় বা এর পরে ইস্যু ম্যানেজারের লাইসেন্স পেয়েছে। বিগত পাঁচ বছরে ইস্যু জমা না দেওয়া বাকি তিন মার্চেন্ট ব্যাংক হচ্ছে- অগ্রনী ইক্যুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ইসি সিকিউরিটিজ লিমিটেড ও এনডিবি ক্যাপিটাল লিমিটেড।
এ প্রসঙ্গে বিএসইসি মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো: সাইফুর রহমান শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে বলেন, বেশ কিছু মার্চেন্ট ব্যাংক আইন অনুযায়ী গত তিন বছরে ন্যুনতম একটি আইপিও আবেদন কমিশনে জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এর জন্য এসব মার্চেন্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে। পুঁজিবাজারের বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে বিএসইসি’র অপর এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আইপিও ইস্যুতে কাজ করার চেয়ে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট এবং আন্ডাররাইটংয়ে বেশী আগ্রহী। কারণ আইপিও-তে কাজ করার ক্ষেত্রে সময় বেশি লাগার পাশাপাশি দায়-দায়িত্বও অনেক বেশি। তাছাড়া আইপিও-তে অনেক শর্ত থাকায় অধিকাংশ কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহী নয়। তাই আইপিও-তে কাজ করতে না পারা মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে আইনের আওতায় আনার ক্ষেত্রে এ বিষয়গওলোও বিবেচনা করা হবে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে ৫৫টি মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে ৫১টি ফুল ফ্লেজড মার্চেন্ট ব্যাংকিংয়ের কাজ করছে।
শেয়ারবাজারনিউজ/ওহ