প্রিমিয়াম নিয়ে কি খেলটাই দেখালো বিনিয়োগকারীরা!
শেয়ারবাজার ডেস্ক: প্রিমিয়াম বন্ধের জন্য বিনিয়োগকারীরা অনেক আন্দোলন করেছেন। রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিনিয়োগকারীরা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদও করেছেন। যার ফলস্বরুপ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে প্রিমিয়াম নেয়ার সুযোগ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু এবি ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় সেই বিনিয়োগকারীরাই কি খেলটাই না দেখালো!
গতকাল ১২ জুলাই সেনামালঞ্চ কনফারেন্স সেন্টারে অনুষ্ঠিত এবি ব্যাংকের ৩৪তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অন্যতম মূল এজেন্ডা ছিল রাইট শেয়ারের অনুমোদন। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে প্রিমিয়ামসহ রাইট শেয়ারের অনুমোদন নেয়ার জন্য সর্বোচ্চ কৌশলে ছিলেন। প্রিমিয়াম বন্ধে বিনিয়োগকারীদের সফল আন্দোলনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে সেই বিতর্কিত প্রিমিয়াম দিতে রাজি হয়ে গেল বিনিয়োগকারীরা। আর তাতেই জয় হলো ব্যাংকটির পর্ষদের কৌশলের। আর ব্যাংকটির অনৈতিক কৌশল ও হীন স্বার্থের কাছে হার মেনে প্রিমিয়ামসহই ৫টি সাধারণ শেয়ারের বিপরীতে ৪টি রাইট শেয়ার ছাড়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে শেয়ারহোল্ডাররা। আর্থিক সঙ্গতি না থাকলেও ব্যাংকটি প্রতিটি শেয়ারের জন্য প্রিমিয়াম নির্ধারণ করেছে ২.৫০ টাকা।
তবে বিনিয়োগকারীরা অনুমোদন করলেও ব্যাংকটির পর্ষদ বিতর্কের ভয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। অর্থাৎ প্রিমিয়াম না নিয়ে ফেসভ্যালু ১০ টাকাতেই রাইট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান-উর-রশিদ চৌধুরি বলেন, অনেক ষড়যন্ত্র ও অত্যাচারের মধ্যেও আমরা আন্দোলন করে ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে প্রিমিয়াম বন্ধ করতে বিএসইসি-কে বাধ্য করতে পেরেছি। তারপরও দেখা যাচ্ছে আইনি দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কিছু কোম্পানি রাইট শেয়ার ইস্যুতে-ও প্রিমিয়াম নিচ্ছে। আর এতে সাহায্য করছে কতিপয় দুষ্কৃতকারী দালাল শ্রেণীর বিনিয়োগকারী। কোম্পানিগুলো তাদের এসব অন্যায়কে বৈধ করার জন্যই এই দালালদের পুষছে। আমরা যদি হীন স্বার্থ ত্যাগ করে এক না হতে পারি তবে এসব কোম্পানি আমাদের মাথায় সবসময় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাবে।
ব্যাংকটির এখনও বিএসইসি’র অনুমোদন নেয়া বাকী রয়েছে।
এদিকে এজিএমে কোম্পানির চেয়ারম্যান এম ওহিদুল হক বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দাকে স্বীকার করে বলেন, ‘ব্যবসায় অনিশ্চয়তা, সুদের হারের ক্রমাবনতি ও বড় ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতাই আগামীতে এবি ব্যাংকের বড় চ্যালেঞ্জ। তবে যোগ্য ম্যানেজমেন্ট আর শেয়ারহোল্ডারদের সমর্থন থাকায় এ মন্দা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান।
ব্যাংকটির বর্তমান আর্থিক হালচাল: নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০১৫ অর্থ বছরে এবি ব্যাংকের সমন্বিত নিট মুনাফা হয়েছে ১৪৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, আগের বছর যা ছিল ১৪৯ কোটি ৫২ লাখ ১০ হাজার টাকা। গেল বছর ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২.৪২ টাকা। অর্থাৎ চেয়ারম্যান মুখে যাই বলুক বাস্তবে কোন প্রতিফলন নেই।
যদিও প্রথম প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির আয় সামান্য বেড়েছে। (জানুয়ারি-মার্চ) প্রান্তিকে ব্যাংকটির ইপিএস দাঁড়িয়েছে ১.০৮ টাকা, আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ৯৬ পয়সা। ৩১ মার্চ ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ৪০.৮৭ টাকা।
বর্তমানে ব্যাংকটির শেয়ারদর ১৬.২০ টাকা। রাইট শেয়ার ইস্যু হলে থিওরিটিক্যাল এডজাস্টমেন্টের পর ব্যাংকটির শেয়ারদর আরও কমবে। সুতরাং ১২.৫০ টাকা করে রাইট শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের খুব বেশি মুনাফা হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কারণ ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা ভাল না থাকায় অর্থাৎ সঞ্চিতিতে ঘাটতি থাকায় গত দুই বছর ধরে ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে পারছে না। ক্যাশের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানটি নাম মাত্র অর্থাৎ গত দুই বছরে সাড়ে ১২ শতাংশ করে স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে। এমন অবস্থায় এ কোম্পানিটর শেয়ার বিনিয়োগকারীদের জন্য খুব একটা লাভ জনক অবস্থায় নেই।
এদিকে ব্যাংকটির উদ্যোক্তা ও পরিচালক সর্বনিম্ন শেয়ারধারনেও ব্যর্থ হয়েছে। ব্যাংকটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকেরা সম্মিলিতভাবে আইনানুযায়ী ৩০ শতাংশের স্থলে মাত্র ১৩.৯০ শতাংশ শেয়ারধারন করছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে বেশি ৫৭.২০ শতাংশ শেয়ার ধারন করছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। সরকারের কাছে রয়েছে ০.৫৭ শতাংশ শেয়ার, বিদেশি বা অনিবাসী বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ১.৫০ শতাংশ শেয়ার। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ২৬.৮৩ শতাংশ শেয়ার।
শেয়ারবাজারনিউজ/আ