ডি-মিউচ্যুয়ালাইজেশন নিয়ে শঙ্কা!
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ ডি-মিউচ্যুয়ালাইজেশনের প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও শঙ্কার কথা উল্লেখ করে সতর্ক করে দিয়েছেন নিয়ন্ত্রন সংস্থার কর্তা ব্যাক্তি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. খায়রুল হোসেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) সতর্ক করে পরিষ্কার জানিয়ে দেন চলতি বছরের ডিসেম্বরের পর স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার আনার সময়সীমা আর বাড়ানো হবে না।
গতকাল শনিবার (১৬ জুলাই) ডিএসই ব্রোকাজের অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেওয়ার সময় এ হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন খায়রুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরে গিয়ে সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করলে কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না। এর ফলে বাজারের জন্য অপ্রীতিকর অবস্থা তৈরী হতে পারে’।
বিএসইসি কর্তার এ হুঁশিয়ারী বাক্যের মাধ্যেমে উঠে আসে, আড়াই বছর পার হয়ে গেলেও ডিএসই’তে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারে নিয়োগের ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হয়নি, এর পাশাপাশি এখন পর্যন্ত ডিএসই কর্তৃপক্ষ বিএসইসি’র কাছে কোনো আবেদনও করেনি। অথচ ডি-মিউচ্যুয়ালাইজেশন আইনের মধ্যে উল্লেখ ছিল যে, স্টক এক্সচেঞ্জ ডি-মিউচ্যুয়ালাইজড হওয়ার তিন বছরের মধ্যে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার নিয়োগ দিতে হবে। অন্যদিকে চেয়ারম্যান এও বলেন যে, ‘সময় বাড়ানোর আবেদন করার আগে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে হবে। নব-নিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ’।
প্রসঙ্গত, স্ট্র্যটেজিক ইনভেস্টর নিয়োগের জন্য দৃম্যমান কোনো অগ্রগতি দেখাতে না পারলেও, সম্প্রতি করে আইএসও (ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন) সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য তড়িঘড়ি শুরু করেছে। গতকাল শুক্রবার ডিএসই’তে আইএসও’র প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎকার নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, ডিএসই’র নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম মাজেদুর রহমানের পুঁজিবাজার সম্পর্কিত কোনো অভিজ্ঞতা নেই বলেও উল্লেখ করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। নতুন করে অনেক কিছু শেখার আছে- বলে নতুন এমডি’কে পরামর্শও দেন তিনি। চেয়ারম্যান বলেন, ‘ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে তাঁর বহুদিনের অভিজ্ঞতা থাকলেও তাঁর দূর্বল দিক হচ্ছে- পুঁজিবাজারে তাঁর কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তাই অনেক কিছুই তাঁকে শিখতে হবে। এর মধ্যে সংকোচের কিছু নেই। আমিও প্রতিনিয়ত অনেক কনিষ্ঠদের কাছ থেকে শিখছি’। ডিএসই’র এমন অগ্নিপরীক্ষার এ মুহূর্তে অনভিজ্ঞ কর্তা নির্বাচন করা কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
অবশ্য নতুন এমডি নতুন এ পদকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে নিজের সর্বোচ্চ ক্ষমতা কাজে লাগাবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সারাজীবনই আমি চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছি। ডিএসই’র এমডি হিসেবে আমাকে নির্বাচিত করা হয়েছে জানার পর আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। সাধারন বিনিয়োগকারীদের জন্য ডিএসই’কে আরো বিনিয়োগবান্ধব করার চেষ্টার করব’।
অন্যদিকে, ড. খায়রুল হোসেন ব্রেক্সিটের প্রভাবে দেশের বাজারে কোনো খারাপ প্রভাব না পড়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাষ না ফেলে এর পেছনের কারণ সম্পর্কে অবহিত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ না থাকার ফলে বেক্সিটের কোনো প্রভার দেশের পুঁজিবাজারে পড়েনি। খারাপ প্রভাব না পড়লেও আমাদের মনে রাখতে হবে দেশে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রয়াস নিতে হবে। এ জন্য স্ট্র্যাটেজিক ইনভেস্টর নিয়োগসহ অন্যান্য নিয়ামকগুলো ডিএসই’কেই নিশ্চিত করতে হবে’। ডিএসই, ব্রোকাজের অ্যাসোসিয়েশন বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিএসইসি আগে সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠান পরে নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ব্রোকাজের অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আহসানুল ইসলামের সঞ্চালনায় বিএসইসি কমিশনার ড. স্বপন কুমার বালা, ডিএসই চেয়ারম্যান সাবেক বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়া স্বাগত বক্তব্য প্রদাণ করেন। অন্যান্যর মধ্যে ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদের সদস্যগন ও সাধারন সদস্যগন উপস্থিত ছিলেন।
শেয়ারবাজারনিউজ/ওহ