ফের গ্যাসের দাম বাড়ছে: উৎপাদনশীলখাতে প্রভাব পড়বে
শেয়ারবাজার ডেস্ক: গ্যাস খাতের সব কোম্পানি লাভজনক। তারপরও সব শ্রেণির গ্রাহকের ক্ষেত্রে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। এ বিষয়ে কোম্পানিগুলোর দেওয়া প্রস্তাবের ওপর আগামী ৭ আগস্ট থেকে গণশুনানি শুরু হবে বলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান এ আর খান নিশ্চিত করেছেন।
এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনিতে আমাদের দেশে গ্যাস সঙ্কট রয়েছে। যে কারনে দেশের উৎপাদনশীল খাতে স্থবিরতা রয়েছে। এ অবস্থায় গ্যাসের দাম পুনরায় বাড়ানো হলে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে।
বিইআরসির সূত্র জানায়, প্রতিদিন একটি করে কোম্পানির প্রস্তাবের ওপর শুনানি হবে। এর মধ্যে কোনো কোনো কোম্পানির শুনানিতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা অনেক বেশি হয়। এসব বিবেচনায় মিলনায়তন নির্ধারণ করে আজ সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে শুনানির সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হবে।
গত নভেম্বর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে গ্যাস খাতের কোম্পানিগুলো বিইআরসির কাছে সব শ্রেণির গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। সব শ্রেণির গ্রাহকের ক্ষেত্রে সব কোম্পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব অভিন্ন নয়। তবে গৃহস্থালি ব্যবহারের ক্ষেত্রে দুই চুলার জন্য মাসিক বিল ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণের প্রস্তাব রয়েছে বলে বিইআরসির সূত্র জানিয়েছে।
এ ছাড়া, এক চুলার জন্য ১ হাজার টাকা এবং যানবাহনে ব্যবহৃত সিএনজির দাম ৬৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এই হারে বাড়ানো হলে প্রতি ঘনমিটার সিএনজির দাম হবে প্রায় ৫৮ টাকা, যা বর্তমানে ৩৫ টাকা। বিইআরসির সূত্র জানিয়েছে, এবার সব গ্রাহক
শ্রেণির ক্ষেত্রেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। বাসাবাড়ি ও সিএনজি ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো প্রয়োজন বলে আবেদন করেছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো।
গ্যাস খাতের সব কোম্পানি লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও কোন যুক্তিতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে— জানতে চাইলে বিইআরসির সূত্র জানিয়েছে, কোম্পানিগুলো যে যুক্তি দেখিয়েছে তার মধ্যে সরকারের নতুন বেতন স্কেল অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন। এ ছাড়া এত কাল গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা যে শুল্ক ও কর সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দেওয়া হতো না, এখন থেকে তা এনবিআরকে দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও দাম বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
বিইআরসির সূত্র জানিয়েছে, বিদ্যুতের যেমন জাতীয়ভিত্তিক উৎপাদন ব্যয় নির্ধারণ করা হয়, গ্যাসের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত তেমন করা হয়নি। এবার হয়তো তা করা হবে এবং তার ভিত্তিতে দাম নির্ধারিত হবে।
এর আগে, সব গ্রাহক শ্রেণির গ্যাসের দাম সর্বশেষ বাড়ানো হয় ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে। এরপর গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবাসিকসহ কয়েকটি শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। তখন দুই চুলার বিল ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ এবং এক চুলার বিল ৪০০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হয়েছিল। বিইআরসি আইন, ২০০৩ অনুযায়ী কোনো সংস্থা এক বছরের মধ্যে দুবার দাম বাড়ানোর আবেদন করতে পারে না।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, সরকার বাসাবাড়িতে নতুন করে গ্যাস-সংযোগ তো বন্ধ করেছেই, এখন পাইপলাইন গ্যাসের ব্যবহারও নিরুৎসাহিত করতে চায়। এ ছাড়া, সিএনজির দাম বাড়ানো হবে যানবাহনে ব্যবহৃত তরল জ্বালানির (পেট্রল, অকটেন) দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার জন্য। এর আরেকটি উদ্দেশ্য দ্রুত কমে আসা দেশের গ্যাসের ওপর থেকে বাড়তি চাহিদার চাপ কমানো।
এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনে চুক্তি আজ: তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে দেশের প্রথম টার্মিনাল স্থাপনের চূড়ান্ত চুক্তি সই হবে আজ সোমবার। আজ বিকেলে পেট্রোবাংলা ও ঠিকাদারি কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি লিমিটেডের মধ্যে এই চুক্তি সই হচ্ছে।
এলএনজি টার্মিনালটি ২০১৭ সালের শেষ নাগাদ তা চালু হতে পারে।
কাতার থেকে আমদানি করা এলএনজি এই টার্মিনালের মাধ্যমে পুনরায় গ্যাসে রূপান্তর করে পাইপলাইনের মাধ্যমে বিতরণের জন্য পেট্রোবাংলার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান জিটিসিএল (গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড) মহেশখালী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৮৬ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপনের কাজ করছে। আগস্ট মাসের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে বলে জিটিসিএল সূত্র জানায়।
রশিদপুর ১০ নম্বর কূপে গ্যাস মেলেনি: সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানির পরিচালনাধীন রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্রে নতুন খনন করা ১০ নম্বর কূপে গ্যাস পাওয়া যায়নি। ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)’-এর ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপের ভিত্তিতে তাদেরই নির্ধারণ করে দেওয়া স্থানে রাশিয়ার কোম্পানি গাজপ্রম কূপটি খনন করেছে। একই জরিপ ও স্থান নির্ধারণের ভিত্তিতে সেখানে গাজপ্রম আরও দুটি কূপ খনন করবে।
শেয়ারবাজারনিউজ/আ