আজ: বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৯ জুলাই ২০১৬, মঙ্গলবার |

kidarkar

মুনাফা কমলেও ব্যাংকে ঝোঁক

Bank_ব্যাংকশেয়ারবাজার রিপোর্ট: শেয়ারবাজার তালিকাভুক্ত ৩৩ শতাংশ ব্যাংকের নীট মুনাফা কমলেও ব্যাংক কোম্পানির শেয়ারের ওপর সাধারন বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক বাড়ছে। সমাপ্ত ২০১৫ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তালিকাভুক্ত ১০টি ব্যাংকই আগের বছরের তুলনায় কম মুনাফা করেছে। অথচ ব্যাংকের শেয়ারে ভর করেই সর্বশেষ দুই কার্যদিবসে ইনডেক্স ও লেনদেন গতি পেয়েছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঈদের ছুটির পর লেনদেন শুরু হওয়ার পর থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে ঝুঁকছেন সাধারন বিনিয়োগকারীরা। এমনকি সর্বশেষ সোমবারের লেনদেন শেষে দেখা যায়, ৮৩ শতাংশ ব্যাংক কোম্পানির শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় বেড়েছে। এদিন দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে শুধু ব্যাংক কোম্পানিরই ৫ কোটি ৩১ লাখ ৪৫ হাজার ৪৭৭ টি শেয়ারের লেনদেন হয় যার বাজার মূল্য ৯৮ কোটি ৫১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। যা ডিএসই’র মোট লেনেদেনের ১৯.৮৪ শতাংশ।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন ব্যাংক কোম্পানির সর্বশেষ অর্থবছরের মুনাফার নয় বরং এক্সপোজার সংক্রান্ত নমনীয়তা আসায় চলতি অর্থবছর থেকে ব্যাংক কোম্পানির মুনাফা বাড়বে- এ প্রত্যাশা থেকেই ব্যাংক কোম্পানির ওপর বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা বাড়ছে। এ প্রসঙ্গে এমটিবি সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম মজুমদার শেয়ারবাজারনিউজ ডট কমকে বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাংক কোম্পানিগুলোর ওপর প্রত্যাশা ও আস্থা আগের তুলনায় বাড়ছে এটা ঠিক তবে কতদিন তা টিকে থাকে এটাই দেখার বিষয়’। শেয়ারদর বাড়লেও অনেকগুলো ব্যাংক কোম্পানির শেয়ারদর প্রত্যাশার অনেক নীচে অবস্থান করছে স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘বেশকিছুদিন ধরে ব্যাংক খাতে আগ্রহ বাড়লেও এটা মানতে হবে যে, অনেক ব্যাংকের শেয়ারদরই ফেসভ্যালুর নীচে রয়েছে। এটা প্রত্যাশিত নয়। বাকি অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদরই ফেসভ্যালুর আশেপাশেই রয়েছে। এদিকে, সামনে আবার ব্যাংকের ডিভিডেন্ড মৌসুম অাসাটাও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করছে’।

দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংক কোম্পানির মধ্যে ১০টি কোম্পানিরই নিট মুনাফার পরিমান আগের বছরের তুলনায় কমেছে। এর মধ্যে সিটি ব্যাংক তাদের প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ করতে পারেনি এবং আইসিবি ইসলামি ব্যাংক আগের বছরের তুলনায় লোকসানের পরিমান কমিয়েছে। আগের বছরের তুলনায় মুনাফা কম করেছে আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামি ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, রুপালি ব্যাংক, পুবালী ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক এবং এবি ব্যাংক।

আইএফআইসি ব্যাংকের ২০১৪ অর্থবছরে নিট মুনাফার পরিমান ছিল ২০৬ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা। যা ২০১৫ অর্থবছরে হয়েছে ১০৫ কোটি ৭১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। নিট মুনাফা কমেছে ১০০ কোটি ৩৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ইসলামি ব্যাংকের ২০১৪ অর্থবছরে নিট মুনাফা ছিল ৩৯৬ কোটি ৭৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। যা ২০১৫ অর্থবছরে হয়েছে ৩১৫ কোটি ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। নিট মুনাফা কমেছে ৮১ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

সাউথইস্ট ব্যাংকের ২০১৪ অর্থবছরে নিট মুনাফার পরিমান ছিল ৩৮৩ কোটি ৭২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। যা ২০১৫ অর্থবছরে হয়েছে ৩০৭ কোটি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। নিট মুনাফা কমেছে ৭৬ কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার টাকা। ঢাকা ব্যাংকের ২০১৪ অর্থবছরে নিট মুনাফার পরিমান ছিল ২০৯ কোটি ৮৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। যা ২০১৫ অর্থবছরে হয়েছে ১৫১ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। নিট মুনাফা কমেছে ৫৮ কোটি ৫৯ লাখ ২০ হাজার টাকা।

এক্সিম ব্যাংকের ২০১৪ অর্থবছরে নিট মুনাফার পরিমান ছিল ২৪৬ কোটি ৫৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। যা ২০১৫ অর্থবছরে হয়েছে ২০৮ কোটি ৬৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নিট মুনাফা কমেছে ৪১ কোটি ৯১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। রুপালি ব্যাংকের ২০১৪ অর্থবছরে নিট মুনাফার পরিমান ছিল ৪৯ কোটি ৯ লাখ ১০ হাজার টাকা। যা ২০১৫ অর্থবছরে হয়েছে ২৩ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নিট মুনাফা কমেছে ২৫ কোটি ৪৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

পুবালী ব্যাংকের ২০১৪ অর্থবছরে নিট মুনাফার পরিমান ছিল ৩১১ কোটি ৫৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। যা ২০১৫ অর্থবছরে হয়েছে ২৯৩ কোটি ৭৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা। নিট মুনাফা কমেছে ১৭ কোটি ৭৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের ২০১৪ অর্থবছরে নিট মুনাফার পরিমান ছিল ১৪৯ কোটি ৪৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। যা ২০১৫ অর্থবছরে হয়েছে ১৩৮ কোটি ৫৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। নিট মুনাফা কমেছে ১০ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২০১৪ অর্থবছরে নিট মুনাফার পরিমান ছিল ২২৪ কোটি ৫৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। যা ২০১৫ অর্থবছরে হয়েছে ২১৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। নিট মুনাফা কমেছে ৭ কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এবি ব্যাংকের ২০১৪ অর্থবছরে নিট মুনাফার পরিমান ছিল ১৪৯ কোটি ৫২ লাখ ১০ হাজার টাকা। যা ২০১৫ অর্থবছরে হয়েছে ১৪৫ কোটি ৯ হাজার টাকা। নিট মুনাফা কমেছে ৪ কোটি ৫১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

উল্লেখ্য, ২০১৪ অর্থবছরে এ খাতের কোম্পানিগুলোর মোট মুনাফার পরিমান ছিল ৫ হাজার ৫০৬ কোটি ৮১ লাখ ৭০ হাজার টাকা যা ২০১৫ অর্থবছরে বেড়ে ৫ হাজার ৫৪৭ কোটি ৬৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সে হিসাবে আলোচিত বছরে এ খাতে মুনাফা বেড়েছে ০.৭৪ শতাংশ বা ৪০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। অথচ নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংক খেলপি, ব্যাড (খারাপ) ঋণ ও এনপিএলের (নন-পারফর্মিং লোন) চাপ কমিয়ে আনতে না পারায় মুনাফার পরিমানে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি।

শেয়ারবাজারনিউজ/সো/ওহ

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.