গ্যাসের দাম বাড়লে ব্যবসার ক্ষতি হবে
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে ব্যবসা বাণিজ্যের গতি ব্যাহত হবে জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ব্যবসায়িদের সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। ডিসিসিআইয়ের পক্ষে সংগঠনটির মহাসচিব এএইচএম রেজাউল কবিরের পাঠানো এক বার্তায় এ উদ্বেগের কথা জানানো হয়।
উদ্বেগ প্রকাশ করে ডিসিসিআই জানায়, স্বল্প সময়ের ব্যবধানে আবারও গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা সম্পর্কিত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে ডিসিসিআই গভীর উদ্বিগ্ন। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাকে সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনার দাবি জানাচ্ছে ডিসিসিআই ।
এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে গ্যাসের দাম গড়ে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল।
গ্যাসের মূল্য না বাড়িয়ে বিকল্প হিসেবে ডিসিসিআই মনে করে, সরকার বিশ্ব বাজারে তেলের হ্রাসকৃত মূল্যের সুযোগ গ্রহণ করে তেল আমদানি করে, জ্বালানির অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে পারে।
সম্প্রতি গ্যাসখাতের কোম্পানিগুলো গড়ে ৮৮ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। যার মধ্যে সর্বোচ্চ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আছে গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত গ্যাসে, যা ১৪০ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩০ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ক্যাপটিভ বিদ্যুকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ৬২ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। এ খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বিদ্যমান ৬ টাকা ৭৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা ৯৫ পয়সা প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও সার উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ২ টাকা ৫৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৪১ পয়সা প্রস্তাব করা হয়েছে। এ হিসাবে, সার উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে ৭১ শতাংশ, যার ফলে কৃষিখাতের পণ্য উৎপাদনে ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনা আছে।
ডিসিসিআই মনে করে, গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত ব্যবসা-বাণিজ্যে নানামুখী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ফলে ব্যবসায় ব্যয় বৃদ্ধি পাবে এবং রপ্তানি বাধাগ্রস্থ হবে। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি ডাবল ডিজিটে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা কিনা আমাদের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হতে পারে।
ঢাকা চেম্বার মনে করে, ব্যবসা বাণিজ্য ও অর্থনীতির নানামুখী কর্মকাণ্ড মেটানোর জন্য শিল্পকারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়নি, তদুপরি সার্বিকভাবে এ মূল্য বৃদ্ধির ফলে ব্যবসায় ব্যয় আরোও বাড়বে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির ধারাকে গতিশীল রাখার জন্য সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং ভবিষ্যতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এ দেশে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করবে। ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ব্যবহারের ফলে আমাদের টেক্সটাইল, তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য খাতে ইতোমধ্যে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছে, তথাপি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি পেলে এ খাতগুলোর অগ্রগতির ধারা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গ্যাসের মূল্য পুনরায় বাড়ানো হলে তৈরি পোশাকখাত এবং অন্যান্য আমদানি বিকল্প রপ্তানি নির্ভর শিল্প পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় তাদের প্রতিযোগী সক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকার সম্ভাবনা কমে আসবে। বাণিজ্যিক পরিবহন খাতের প্রভাব পড়ার কারণে ব্যবসায় ব্যয় ও পণ্য সরবরাহ (সাপ্লাই চেইন) ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনা আছে। যার প্রভাব সাধারণ ভোক্তাশ্রেণীর ওপর গিয়ে পড়বে। এ ধরনের মূল্য বাড়ানো অনৈতিকভাবে অপব্যবহারের সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে সহায়তা করে।
গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হলে সার্বিকভাবে স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হতে পারে। এছাড়াও শিল্পায়ন, ব্যাবসায় প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতির ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে। গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর ফলে বর্তমান সরকার ঘোষিত ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া এবং ঢাকা চেম্বার কৃর্তক প্রণীত ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হওয়া লক্ষ্যমাত্রা বাধাগ্রস্ত হবে। যা কারও কাম্য নয়। তাই দেশের অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে ঢাকা চেম্বার গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনার জোর দাবি জানাচ্ছে।
শেয়ারবাজারনিউজ/আ