আজ: শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

৩১ জুলাই ২০১৬, রবিবার |

kidarkar

ঋণের চাপে ইউরোপের ব্যাংকগুলো

andreaশেয়ারবাজার ডেস্ক: লেহম্যান ব্রাদার্সের পতনের জেরে বিশ্বজুড়ে ব্যাংক দ্রবণ শুরু হয়। পতনশীল ব্যাংক বাঁচাতে গিয়ে বিপন্ন হয় আয়ারল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ। এখন পর্যন্ত এসব দেশের অর্থনীতি পুরোপুরি সেরে ওঠেনি। দ্রবণের আট বছর পরও ইউরোপের অনেক ব্যাংক নিয়মিত আদায় না হওয়া ঋণের ভারে চাপা পড়ে আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সবশেষ স্ট্রেস টেস্টে বিষয়টি উঠে এসেছে। খবর রয়টার্স।

ইউরোপিয়ান ব্যাংকিং অথোরিটি (ইবিএ) পরিচালিত এ স্ট্রেস টেস্টে ইতালি, আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও অস্ট্রিয়ার ব্যাংকগুলো সবচেয়ে খারাপ করেছে। ইবিএ বলেছে, ইউরোপের অর্থনীতিকে শক্তি জোগাতে মহাদেশের ব্যাংকগুলোকে আরো কাজ করতে হবে।

ইইউভুক্ত দেশগুলোর ৫১টি ব্যাংকের ওপর এ স্ট্রেস টেস্ট পরিচালিত হয়। ২০০৭-২০০৯ সময়কালের আর্থিক সংকটের পর ইইউ অঞ্চলের ব্যাংকিং খাতে এটি তৃতীয় স্ট্রেস টেস্ট। এবারে কোনো পাস অথবা ফেল মার্ক ছিল না। আগামী তিন বছর ইইউর ইকোনমিক আউটপুট ভিত্তিরেখার ৭ দশমিক ১ শতাংশ নিচে থাকলে অথবা সুদ আয় ২০ শতাংশ হ্রাস পেলে ব্যাংকগুলোর কী অবস্থা হতে পারে, স্ট্রেস টেস্টে তা দেখা হয়েছে।

এবারের স্ট্রেস টেস্টে সবচেয়ে দুর্বল প্রতিপন্ন হয়েছে ১২টি ব্যাংক। এর মধ্যে রয়েছে ইতালির মন্তে দে পাসকি, ইউনিক্রেডিট, অস্ট্রিয়ার রাইফেইজেন, স্পেনের বাংকো পপুলার, ব্রিটেনের বার্কলেস, রয়্যাল ব্যাংক অব স্কটল্যান্ড (আরবিএস), জার্মানির ডয়েচে ব্যাংক ও কমার্জব্যাংক।

ইবিএ চেয়ারম্যান আন্দ্রেয়া এনরিয়া বলেছেন, ব্যাংকগুলো সর্বাত্মকভাবে পুঁজি বৃদ্ধি করলেও পুরোপুরি সুস্থ বলা যাবে না। এখনো অনেক কিছু করার আছে।

তিন বছর ধরে ইকোনমিক আউটপুট ভিত্তিরেখার ৭ দশমিক ১ শতাংশ নিচে থাকলে যে অবস্থা হবে, তাতে সবচেয়ে খারাপ দৃশ্যমান হয়েছে ইতালির তৃতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা মন্তে দে পাসকি। উল্লিখিত দৃশ্যপটে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো এ ব্যাংকটির কোর ইকুইটি ক্যাপিটাল রেশিও হবে মাইনাস ২ দশমিক ৪৪।

স্ট্রেস টেস্টের ফলাফল বেরোনোর কয়েক মিনিট আগে মন্তে দে পাসকি কর্তৃপক্ষ একটি ভালো খবর দিয়েছে। ইতালির ব্যাংকটি নিয়মিত আদায় হয় না, এমন পোর্টফোলিওর পুরোটাই বিক্রি চূড়ান্ত করেছে। পাশাপাশি ব্যাংকটি ৫০০ কোটি ইউরো (প্রায় ৫৫৯ কোটি ডলার) পুঁজি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করার কথা জানিয়েছে।

ইবিএর স্ট্রেস টেস্টের সার্বিক ফলাফলে বিশ্লেষকরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। প্রাইসওয়াটারহাউজকুপারসের (পিডব্লিউসি) অ্যান্থনি ক্রিজিঙ্গা বলেছেন, কয়েকটি ব্যাংক স্পস্টত খারাপ করেছে। তবে ইউরোপের ব্যাংকগুলো আরেকটি সংকট মোকাবেলার ক্ষমতা রাখে, এ কথা জানতে পারা স্বস্তিদায়ক।

কেপিএমজির স্টিভেন হল বলেছেন, প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায় ইউরোপের ব্যাংকগুলোর ক্ষতি সইতে পারার ক্ষমতা আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে ব্যাংকগুলোর মুনাফা সক্ষমতা এবং ব্যাংকের প্রতি ইকুইটি বিনিয়োগকারীদের অনীহার কারণে উদ্বেগ থেকে যায়।

এবারের স্ট্রেস টেস্টে ইবিএ প্রথমবারের মতো ব্যাংকের আচরণিক ঝুঁকির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছে। সম্ভাব্য জরিমানা ও বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যয় হিসাব করে টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়।

ইবিএ জানিয়েছে, আচরণিক ঝুঁকির মোট ব্যয় ছিল ৭১ বিলিয়ন ইউরো (৭ হাজার ৯৩৪ কোটি ডলার)। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ব্যাংকের গৃহীত ঋণের ব্যয় এবং প্রদত্ত ঋণের বিপরীতে লোকসান থেকে। স্ট্রেস টেস্টে অন্তর্ভুক্ত ৫১টি ব্যাংকে ঋণ-সংশ্লিষ্ট ক্ষতির মোট পরিমাণ ৩৫০ বিলিয়ন ইউরো (৩৯ হাজার ১১১ কোটি ডলার)।

ইবিএর স্ট্রেস টেস্টের ফলাফল প্রকাশের দিন ব্যাংক দ্রবণ-সংশ্লিষ্ট আরেকটি খবর এসেছে। আট বছর আগের ওই ঘটনায় আয়ারল্যান্ডে শুক্রবার তিনজন পদস্থ ব্যাংকারের সাজা হয়েছে। ব্যাংক দ্রবণের জের ধরে ব্যাংকারের সাজা হওয়ার এটাই প্রথম ঘটনা। এর আগে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলো বিপুল পরিমাণ অর্থদণ্ড দিলেও পদস্থ কোনো কর্মকর্তাকে জেলে যেতে হয়নি।

২০০৮ সালের দ্রবণে বন্ধ হয়ে যায় অ্যাংলো আইরিশ ব্যাংক ও বীমা কোম্পানি আইরিশ লাইফ অ্যান্ড পার্মানেন্ট। আইরিশ লাইফের সাবেক সিইও ডেনিস কেসি, অ্যাংলো আইরিশের সাবেক পরিচালক (অর্থ) উইল ম্যাকআটির ও একই ব্যাংকের ক্যাপিটাল মার্কেটস বিভাগের সাবেক প্রধান জন বোয়িকে আদালত শুক্রবার বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন।

সাজাপ্রাপ্তরা ২০০৮ সালের মার্চ-সেপ্টেম্বর সময়কালে অ্যাংলো আইরিশ ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ভালো দেখাতে ৭২০ কোটি ইউরো (৮০৫ কোটি ডলার) বৃত্তাকার লেনদেন চক্রান্ত করেছিলেন।

শেয়ারবাজারনিউজ/মু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.