আজ: বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৩ অগাস্ট ২০১৬, বুধবার |

kidarkar

সিডিবিএল ফি: চূড়ান্ত সংশোধনীতে যে সব সেবা মাশুল কমেছে

cdbl (1)শেয়ারবাজার রিপোর্ট: স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সিকিউরিটিজ লেনদেনের ওপর সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সেবা মাশুল কমিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গতকাল কমিশন সভায় ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর চূড়ান্ত সংশোধনী অনুমোদন হয়েছে। মাত্র এক জায়গায় পরিবর্তন এনে সংশোধনীর সাম্প্রতিক খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

গতকাল ৫৮১তম কমিশন সভা শেষে নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএসইসি জানায়, ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা ২০০৩-এর সংশোধনীর চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে, যা শিগগিরই বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ২৯ জুন ৫৭৯তম কমিশন সভায় বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব রক্ষণাবেক্ষণসহ সিডিবিএলের অন্যান্য ফি কমাতে ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর শিডিউল ৪-এর খসড়া সংশোধনী অনুমোদন করে বিএসইসি। সংশোধনীতে নতুন ইনস্ট্রুমেন্ট সংযোজনসহ বিভিন্ন ফি পুনর্বিন্যস্ত করা হয়। পাশাপাশি বিও হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের বার্ষিক ফিও ৫০ টাকা কমানো হয়। জনমত জরিপ শেষে সংশোধনীটি চূড়ান্ত করা হয়। কমিশন সূত্র জানায়, খসড়ায় মার্কেট মেকারদের ইটিএফ ও বেমেয়াদি ফান্ড লেনদেনের ক্ষেত্রে সিডিবিএল ফি প্রতি লাখে সাড়ে ১২ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হলেও শেষ পর্যন্ত তা সাড়ে ৭ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। খসড়ার এই এক জায়গায় পরিবর্তন এনে সংশোধনীটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।

বর্তমানে বিও হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের ফি হিসেবে বছরে ৫০০ টাকা নেয় সিডিবিএল। সংশোধনীতে তা ৫০ টাকা কমিয়ে ৪৫০ টাকা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি বিও হিসাবের ফি থেকে সরকার ২০০ টাকা, সিডিবিএল ১০০, সংশ্লিষ্ট ডিপি ১০০ ও বিএসইসি ৫০ টাকা পাবে। আগে বিও হিসাবের বার্ষিক ফি থেকে সিডিবিএল ১৫০ টাকা পেত।

বর্তমানে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর কাছ থেকে শেয়ারের ক্রয় ও বিক্রয়মূল্যের ওপর প্রতি ১ লাখে ১৫ টাকা হারে সেবা মাশুল নেয় সিডিবিএল। সংশোধনীতে এ হার সাড়ে ১২ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। প্রত্যাহার করা হয়েছে ন্যূনতম ফিও। এদিকে সেকেন্ডারি বাজারে ইটিএফ ইউনিট ও বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট লেনদেনের ক্ষেত্রেও একই হারে ফি গুনতে হবে ব্রোকারদের। এক্ষেত্রে ফান্ডের নিট সম্পদমূল্যের ভিত্তিতে ফি নির্ধারণ হবে। তবে মার্কেট মেকারদের ইটিএফ ও বেমেয়াদি ফান্ড লেনদেনের ক্ষেত্রে সিডিবিএল ফি সাড়ে ১২ টাকার বদলে প্রতি লাখে সাড়ে ৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে করপোরেট বন্ড, ডিবেঞ্চার ও অন্যান্য ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজে প্রতি লেনদেনে ২৫ টাকা ও সরকারি সিকিউরিটিজে ১০ টাকা হারে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। স্মল ক্যাপ প্লাটফর্মে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের বাজারমূল্যের ভিত্তিতে প্রতি লাখে ফি হবে ৩ টাকা। তবে মার্কেট মেকারদের স্মল ক্যাপ প্লাটফর্মে লেনদেনের ক্ষেত্রে কোনো ফি নেয়া হবে না।

এছাড়া সংশোধনীতে একটি বিও হিসাব থেকে অন্য বিও হিসাবে শেয়ার স্থানান্তরের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ফি উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বিও হিসাব থেকে সিকিউরিটিজ ডেবিট/ক্রেডিট হলে তাৎক্ষণিকভাবে হিসাবধারীকে এসএমএস দেবে সিডিবিএল, এটিও ফি মুক্ত থাকবে।

বর্তমানে কাগুজে শেয়ার বা মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট ইলেকট্রনিকে রূপান্তরের (ডিমেট) ক্ষেত্রে বাজারমূল্যের ওপর প্রতি ১ লাখ টাকায় ১৫ টাকা হারে চার্জ নিচ্ছে সিডিবিএল। বিএসইসি’র সংশোধনীতে এ হার বহাল থাকলেও তা সিকিউরিটিজের অভিহিত মূল্যের ভিত্তিতে ফি নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন চার্জ বহাল থাকছে। আর ডিমেট থেকে কাগুজে শেয়ারে রূপান্তর (রিমেট) ফি প্রতি শেয়ারে ১০ পয়সা হারে অথবা সর্বনিম্ন ১০০ টাকা বহাল থাকছে। অবশ্য শেয়ার ডিমেটের জন্য ভারতের ডিপোজিটরি প্রতিষ্ঠান কোনো চার্জ নেয় না।

সংশোধনীতে ইটিএফ (এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড), ওপেন এন্ড মিউচুয়াল ফান্ড, করপোরেট বন্ড/ডিবেঞ্চার ও অন্যান্য ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজের ডিমেট করার ক্ষেত্রে প্রতি লাখে সাড়ে ৭ টাকা হারে সিডিবিএলের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। স্মল ক্যাপ প্লাটফর্মে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের ক্ষেত্রে এ হার ৩ টাকা। এসব ফি অভিহিত মূল্যের ভিত্তিতে নেয়া হবে।

ইস্যুকৃত যোগ্য সিকিউরিটিজের অভিহিত মূল্যের ওপর বার্ষিক ফির ক্ষেত্রে বর্তমান হার বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ২০ কোটি টাকার বেশি বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড ও ইটিএফ ফান্ডের জন্য বার্ষিক ফি ৪০ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। স্মল ক্যাপ প্লাটফর্মে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের ক্ষেত্রে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত বার্ষিক ফি ৫ হাজার টাকা, ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত ১০ হাজার ও ২০ কোটির ঊর্ধ্বে হলে ২০ হাজার টাকা বার্ষিক ফি দিতে হবে। আর সরকারি সিকিউরিটিজের ক্ষেত্রে বার্ষিক ফি ৫ হাজার টাকা। নতুন ইস্যু বা আইপিওতে আগের হারই বহাল রাখা হয়েছে।

এর আগে ২০১৫ সালের ১ জুলাই সিডিবিএলের পরিচালনা পর্ষদ তাদের সেবার মাশুল কমায়। এর পর এক বছরের ব্যবধানে তা আরো অন্তত ১৫ শতাংশ কমাল কমিশন।

ব্রোকারেজ হাউজগুলো দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছিল, তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের লেনদেন নিষ্পত্তি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান সিডিবিএল তাদের গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত সেবা মাশুল নিচ্ছে। এছাড়া শেয়ারের বাজারমূল্যের পরিবর্তে শেয়ার সংখ্যার ভিত্তিতে সেবা মাশুল নির্ধারণেরও দাবি জানিয়ে আসছিল স্টক এক্সচেঞ্জের এসব সদস্য প্রতিষ্ঠান। সিডিবিএলের পর্ষদ ব্রোকারেজ হাউজগুলোর এ দাবি বিবেচনা না করলেও ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে সেবা মাশুলের হার কিছুটা কমায়। এতে শেয়ার লেনদেনে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ব্যয় কিছুটা কমে। তবে বাজারমূল্যভিত্তিক সেবা মাশুল নির্ধারণ না হওয়ায় তা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এখনো বেশি বলে অভিযোগ রয়ে যায়। সংশোধনীতে অবশ্য বাজারমূল্যভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণের কথা বলা হয়নি।

প্রসঙ্গত, কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে ইলেকট্রনিক শেয়ার বিতরণ, লেনদেন-পরবর্তী মালিকানা স্থানান্তর ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০০০ সালের ২০ আগস্ট স্টক এক্সচেঞ্জ, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও দেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় সিডিবিএল গঠন করা হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন অধিকাংশ তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইলেকট্রনিক শেয়ারে রূপান্তর না হওয়ায় সিডিবিএলের আয় নিয়ে সংশয় ছিল। প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী করতে বিশ্বব্যাপী প্রচলিত নিয়মের বাইরে গিয়ে শেয়ার সংখ্যার পরিবর্তে শেয়ারের বাজারমূল্যের ভিত্তিতে এর সেবা মাশুল নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়। গত ১৫ বছরে বাজারের আকার ও প্রকৃতিতে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। সিডিবিএলের আর্থিক ভিত্তিও অনেক শক্তিশালী হয়েছে। এ সময়ে শেয়ারহোল্ডারদের সর্বোচ্চ ১৩০ শতাংশ পর্যন্ত লভ্যাংশও দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

শেয়ারবাজারনিউজ/আ

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.