আজ: বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ইং, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৪ মার্চ ২০১৫, শনিবার |

kidarkar

আড়ালে ওটিসির কোম্পানি: অর্থ লোপাটের মহড়া

otc-12শেয়ারবাজার রিপোর্ট: মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যে বিনিয়োগকারীদের ধোঁকা দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে পুঁজিাবাজারের বেশ কিছু কোম্পানি। এসব কোম্পানির প্রোফাইলে দেয়া তথ্য ও বাস্তবতার সাথেও পাওয়া গেছে চমকপ্রদ অসংঙ্গতি। সম্প্রতি এক অনুসন্ধানে এমন সব তথ্য উঠে এসছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যে প্রতারণার মূলে রয়েছে বাজার থেকে তালিকাচ্যুত ওটিসিতে (ওভার দ্য কাউন্টার) লেনদেন করা কোম্পানিগুলো। এর মধ্যে অনেক কোম্পানির অস্তিত্ত্ব বিলীন হয়ে গেলেও সে তথ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের জানাতে পারেনি। ২০১৪ সালে ওটিসি’র কোম্পানি পদ্মা সিমেন্ট অবলুপ্ত ঘোষণা করে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও বাকি কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগকারীদের কি হবে তা এখনও ধোঁয়াশার মধ্যেই রয়ে গেছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে সকল কোম্পানির প্রোফাইল দেয়া রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে বেশ কিছু কোম্পানির প্রোফাইলে সঠিক তথ্য দেয়া নেই বলে জানা গেছে। এছাড়া অনেক কোম্পানির ঢাকা অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে পরিচালনা পর্ষদ আড়াল হয়ে যাচ্ছে। তাই এসব কোম্পানিগুলোর যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেও বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত দেয়া যাবে কি না- তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন এসব কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা পক্ষ থেকে তাই ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা আশু পদক্ষেপ দাবি করেছেন।

ওটিসি’র অনেক কোম্পানির কোনো ধরনের তথ্যও স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে নেই।এমনকি কোম্পানির অস্তিত্ব আছে কি না-তাও জানে না স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে চিকটেক্স, এম হোসেন গার্মেন্টস ও মিতা টেক্সটাইলের বেশ কিছু তথ্য ডিএসইর ওয়েবসাইটের কোম্পানির প্রোফাইলে দেয়াই হয় না।বছরের পর বছর এসব কোম্পানির তথ্য তালিকা ফাঁকা থাকলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে কোনো উদ্যেগও নিতে দেখা যায়নি।

পুঁজিবাজারের প্রতিটি কোম্পানির প্রোফাইলে মোট শেয়ার সংখ্যাসহ পরিচালক, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, বৈদেশিক বিনিয়োগকারী, সাধারন বিনিয়োগকারী এবং সরকারের কাছে থাকা শেয়ারের সংখ্যা উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু ওটিসির চিকটেক্স, এম হোসেন গার্মেন্টস ও মিতা টেক্সটাইলের প্রোফাইলে তা উল্লেখ নেই। এছাড়া এসব কোম্পানির ই-মেইল এড্রেসও দেয়া নেই। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিভিন্ন আইন পরিপালন না করায় ২০০৯ সালের জুন মাসে কোম্পানিগুলোকে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, চিক টেক্স ১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির অনুমোদিত মুলধন ৩০ কোটি টাকা ও পরিশোধিত মুলধন রয়েছে ১২ কোটি ৫৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এদিকে তালিকাভুক্তির পর ২০০০ ও ২০০১ সালে ৫ শতাংশ এবং ২০০২ সালে মাত্র ৩ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েই দায় সেরেছে কোম্পানিটি। তারপর প্রায় ১৩ বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি।

এদিকে, ১৯৯৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এম হোসেন গার্মেন্টস ওয়াশিং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেডের অনুমোদিত মুলধন ২৫ কোটি টাকা ও পরিশোধিত মুলধন ৬ কোটি টাকা। তালিকাভুক্তির পর দীর্ঘ ২০ বছরের মধ্যে ২০০১ সালে মাত্র একবার ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েই আড়ালে থেকেছে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ।

অন্য দিকে, মিতা টেক্সটাইল লিমিটেড ১৯৯৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। দীর্ঘ ছয় বছর পর লোকসান কাটিয়ে ২০০০ সালে ৫ শতাংশ, ২০০৩ সালে ৫ শতাংশ এবং ২০০৫ সালে ৩ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়ে তাদের দায় সেরেছে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত কোম্পানিটি লোকসানের পর লোকসান দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত করেছে।

এদিকে কোম্পানিগুলোর ঢাকার অফিসে যোগাযোগ করা হলে সেখানে কাউকে পাওয়া যায় নি। উল্লেখিত ঠিকানায় কোম্পানিগুলোর অফিস নেই। কোম্পানিগুলোর পরিচালকদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কেউ কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এর মধ্যে বেশকিছু পরিচালক বাজার থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে চলে গেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে এ কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগকারীদের বিপুল পরিমাণ অর্থ আটকে রয়েছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: ওয়ালি-উল মারুফ মতিন শেয়ারবাজারনিউজ ডট কমকে বলেন, ‘বেশ কিছু কোম্পানি রয়েছে যাদের দীর্ঘ দিন চিঠি পাঠিয়েছি, কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোন ধরনের উত্তর পাওয়া যায়নি। এসব কোম্পানির কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ দিন যাবৎ আমাদের কাছে কোন তথ্য দাখিল করেনি। যার ফলে এসব কোম্পানির প্রোফাইলে এসব তথ্য নেই। এছাড়া অনেক কোম্পানি রয়েছে ওটিসিতে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে আজও পর্যন্ত সঠিক তথ্য দাখিল করাতো দূরের কথা, যোগাযোগ পর্যন্ত করেনি। তবে টানা হরতাল-অবরোধের কারণে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে সরাসরি কোন পদোক্ষেপ নিতে পারছি না। দেশের সার্বিক অবস্থা ভাল হলে সরোজমিনে গিয়ে যথাযত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে’।

 

শেয়ারবাজার/মু/ও

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.