যেভাবে হয় মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণা
শেয়ারবাজার ডেস্ক: কম সময়ে লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মোবাইল ব্যাংকিং। এ নিয়ে প্রতারণারও মুখোমুখি হয়েছেন অনেক গ্রাহক। এ নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ডিএমপি’র মুখপাত্র অনলাইন পোর্টাল ডিএমপি নিউজ একটি খবর প্রকাশ করেছে।
খবরটি হুবহু তুলে ধরা হল।
প্রতারণার গল্পটা:
আশিক কাজ করতো আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে। গরীব বাবা-মার একমাত্র সন্তান ও। প্রতিমাসে তাই বাবা-মাকে বেতনের অর্ধেকটাই পাঠায় সে। গত রবিবার ও পাঁচ হাজার টাকা পাঠায়ে ছিল সে। কিন্তু টাকাটা প্লাসে মাইনাসে পুরোটাই মাইনাস হয়ে গেছে। কী ভাবে হলো এটা? জানতে চাইলে আশিক বলেন- আমি টাকাটা পাঠানোর একটু পরেই আমার বাবার ফোনে এক ব্যক্তি ফোন করে বলে যে উনি একজন বিকাশ দোকানন্দার। তার দোকান থেকে একটু আগে ভুল করে তার নম্বরে ৫০০০/- টাকা চলে গেছে। বাবা বললেন দাঁড়ান আমি দেখে জানাচ্ছি। ওই লোক টাকাটা ফেরৎ পাঠানোর জন্য কান্না জড়িত কন্ঠে খুব অনুরোধ করেন ঐ ব্যক্তি। বাবা ফোন রাখার সাথে সাথে আর একটি মেসেজ যায় বাবার মোবাইলে। বাবা ব্যালেন্স চেক না করেই মার কাছে থাকা ৫০০০/- পুনরায় বিকাশ করে দেন ওই মোবাইল নম্বরে।
কীভাবে চলে এই প্রতারণা? প্রতারক মিজানের ভাষ্য:
সম্প্রতি বিকাশের মাধ্যমে প্রতারণার কারণে একটি চক্রকে আটক করে ডিবি পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে সে চক্রেরই একজন মিজানুর রহমান তাদের প্রতারণার কৌশল ও কাজের ধরণ নিয়ে দিয়েছেন বেশ কিছু তথ্য। গল্পটি প্রতারক মিজানুরের মুখেই শোনা যাক। উল্লেখ্য মিজানের বাড়ী ফরিদপুর জেলার মধুখালী জেলার ডুমাইল গ্রামে।
আমাদের একজন লিডার আছে। তার নাম খায়ের চৌধুরী। তার অধীনেই কাজ করি আমরা। আমাদের দলের সদস্য সংখ্যা ২০-২৫ জন। যারা সব সময় যেসব দোকানে থেকে বিকাশ হয় সেসব দোকানের আশপাশে ঘুরাফিরা করি। কোন ব্যক্তি বিকাশ করতে এলে কৌশলে যে নম্বরে বিকাশ করা হচ্ছে সে নম্বরটি জেনে তৎক্ষনাৎ লিডার খায়েরকে ফোনে ঐ নম্বরটি জানিয়ে দেই। তিনি প্রথমে ঐ নম্বরে ফোন করে কাতর স্বরে বলেন- ভাই একটু আগে আপনার ফোনে ভুলে আট হাজার টাকা চলে গেছে। একটু দয়া করে ব্যালেন্স চেক করুন। একটু পরেই আবার ঐ ব্যক্তিকে ফোন করে বলা হয় ব্যালেন্স চেক করেছেন। তিনি তখন বলেন-না আমার ফোনে তো পাঁচ হাজার টাকাই এসেছে। ভুল করে কোন টাকা তো আসেনি”। ব্যস কেল্লাফতে। আমাদের আসলে এতটুকুই জানা দরকার। অ্যামাউন্ট জানার সাথে সাথে ওই নম্বরে ভূয়া ফরওয়ার্ডকৃত আট হাজার টাকার একটি এসএমএস চলে যাবে। পরে আবার তাকে লিডার ফোন দিয়ে বলবে-ভাই দয়া করে এখন একটু ব্যালেন্স চেক করুন। পরে দ্বিতীয় বারের মেসেজ দেখে ওই টার্গেটকৃত ব্যক্তি ব্যালেন্স চেক না করেই বলেন-হ্যাঁ তিন হাজার টাকা বেশী এসেছে। তখন অনেক আকুতি মিনতি করে ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়-ভাই আমি একজন গরীব বিকাশ দোকানদার। দয়া করে টাকাটা ফেরৎ দিন। না হলে আমার অনেক ক্ষতি হবে। তখন টার্গেটকৃত ব্যক্তি ব্যালেন্স চেক না করেই সাথে সাথে কথিত তিন হাজার টাকা পুনরায় প্রতারকের মোবাইলে বিকাশ করে দেন। এভাবেই চলে প্রতারণা।
বিকাশে টাকা পাঠানোর সময় যেসব বিষয় লক্ষণীয় :
১। অবশ্যই ভালো ও বিশ্বস্ত বিকাশ এজেন্ট থেকে টাকা পাঠান।
২। টাকা পাঠানোর সময় লক্ষ্য রাখুন পাশের কেউ আপনাকে অনুসরণ করছে কিনা। এক্ষেত্রে একটু সাবধান হোন।
৪। দ্বিতীয়বার কোন মেসেজ আসলে সেটি যাচাই করুন এবং ব্যালেন্স চেক করুন।
৩। আপনার প্রেরিত টাকার অংক সাথে সাথে বা টাকা পাঠানোর আগে প্রাপককে জানিয়ে দিন।
৫। কোন ব্যক্তি বিকাশের টাকা ভাঙ্গাতে আসলে সে ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হোন প্রয়োজনে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি রেখে দিন।
৬। প্রতিটি লেনদেনের পর বিকাশ থেকে প্রেরিত মেসেজের মাধ্যমে পাওয়া ব্যালেন্স ইনফরমেশন এবং আপনার কাঙ্খিত ব্যালেন্সের মিল আছে কিনা তা যাচাই করে নিন।
৭। লটারী জেতা,পুরস্কার বা প্রতিযোগিতা এই ধরণের কোন মেসেজ বা ফোন কলে সাড়া দিবেন না। এ ধরণের কোন মেসেজ আসলে তৎক্ষণাত সংশ্লিষ্ট কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠানের হেল্প সেন্টারে যোগাযোগ করে এ তথ্য জানিয়ে দিন।
৮। খেয়াল রাখতে হবে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠালে মেসেজের উপরে অবশ্যই bkash লেখা থাকবে। কিন্তু ফরোয়ার্ডকৃত মেসেজে কখনোই bkash লেখা থাকে না।
মোবাইল ব্যাংকিং-এ প্রতারিত হলে কী করবেন :
মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে কেউ প্রতারিত হয়ে থাকলে প্রতারণাকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরাসরি থানায় অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। এছাড়া সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের চালু হওয়া Hello CT এ্যাপস এ গিয়ে সাইবার ক্রাইম অথবা আন্তঃদেশীয় অপরাধ/জালিয়াতি অপশনে ঢুকে আপনার অভিযোগটি সরাসরি লিখে পাঠিয়ে দিন। পুলিশ অভিযোগটি আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নিবে। মনে রাখতে হবে, মোবাইল ব্যাংকিং এ প্রতারণা ঠেকাতে আপনার একটুখানী সচেতনতাই যথেষ্ট।
শেয়ারবাজারনিউজ/ওহ