৫ বছরেও বিএসইসির নির্দেশনা পালন করতে পারেনি ২১ কোম্পানি
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: তালিকাভুক্ত প্রতিটি কোম্পানিতে পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। গত ৫ বছর আগে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এরকম নির্দেশনা দিলেও ২১ কোম্পানি সে নির্দেশনা পরিপালন করতে পারেনি। অন্যদিকে বিএসইসি নিজেও এসব ব্যর্থ কোম্পানির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
তথানুসন্ধানে জানা যায়, ২০১০ সালের দেশের শেয়ারবাজারে মহা পতনের পর ২০১১ সালে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরায় ফিরে পেতে এবং তাদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য এ নির্দেশ জারি করে বিএসইসি। নির্দেশনায় বলা হয়, প্রতি পরিচালক ব্যাক্তিগত ভাবে কমপক্ষে ২ শতাংশ এবং সম্মিলিত ভাবে কম পক্ষে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। এজন্য ৬ মাসের সময় বেঁধে দেয় বিএসইসি।
সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৪মে কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তাদের ব্যাক্তিগত ভাবে সর্বনিম্ন ২ শতাংশ শেয়ার ধারনের বাধ্য বাধকতাকে অবৈধ ঘোষনা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। এর পরের দিন ১৫ মে এ রায় স্থগিত করেছে চেম্বার বিচারপতি। ফলে ২২ মে ২০১২ সাল পর্যন্ত যেসকল কোম্পানির পরিচালক সর্বনিম্ন ২ শতাংশ এবং সম্মিলিত ভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার রাখতে ব্যর্থ হয়েছে তারা আইন লংঘন করেছে বলে বিবেচিত হয়।
বিএসইসির নির্দেশনার এই ৫ বছরে ৩৮টি কোম্পানির মধ্যে ১৭টি বা ৪৪.৭৪ শতাংশ কোম্পানির পরিচালক নির্দেশনাটি পালন করতে সক্ষম হয়েছে। বাকি ২১টি কোম্পানি পালন করতে ব্যার্থ হয়। এর মধ্যে ৬ কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক রয়েছেন যারা ১০ শতাংশের কম শেয়ার ধারন করছে। এগুলো হলো: ইনটেক লিমিটেড ২.৫৫ শতাংশ, ফাইন ফুডস ৩.৪৯ শতাংশ, ন্যাশনাল টি কোম্পানি ৪.৩৩ শতাংশ, বিডি ওয়েলডিং ৫.০২ শতাংশ, ইউনাটেড এয়ার ৫.০২ শতাংশ এবং ফু-ওয়াং ফুডের ৫.০৩ শতাংশ।
এছাড়া অন্যান্য কোম্পানি গুলোর মধ্যে অগ্নি সিস্টেমসের পরিচালকদের মোট শেয়ারে অংশগ্রহণ ১১.৪০ শতাংশ, একটিভ ফাইন কেমিক্যালসের ১২.০২ শতাংশ, উত্তরা ব্যাংকের ১২.৫৯ শতাংশ, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১৮.৪৩ শতাংশ, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিজের ২০.১৫ শতাংশ, বিডিকমের ২৩.১০ শতাংশ, বিজিআইসির ২৩.৭৪ শতাংশ, ফু-ওয়াং সিরামিকসের ২৪.২২ শতাংশ, কর্নফুলী ইন্স্যুরেন্সের ২৫.৭২ শতাংশ, মেট্রো স্পিনিংয়ের ২৬.২১ শতাংশ, ম্যাকসন স্পিনিংয়ের ২৬.২৩ শতাংশ, রংপুর ডেইরির ২৭.৮৬ শতাংশ, পূবালী ব্যাংকের ২৮.৮৭ শতাংশ এবং এবি ব্যাংকের পরিমান ২৯.৩৬ শতাংশ।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ইয়াওয়ার সাঈদ বলেন, নির্দেশিকা প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে ব্যবহারিক কিছু সমস্যা রয়েছে, বিশেষ করে বৃহৎ মূলধন-ভিত্তি ব্যাংকিং কোম্পানি জন্য । তিনি বলেন, এটা সত্যিই কঠিন ব্যাংকের স্পনসরদের জন্য সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার রাখা। এজন্যই বিভিন্ন ব্যাংক আদালতে এই বিধান চ্যালেঞ্জ করেছে। তিনি আরো বলেন, নির্দেশনার মধ্যে কোন কিছুর অভাব বয়েছে কিনা তা খুজে বের করা জরুরী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, নির্দেশাবলীর একটি অন্যতম প্রধান লক্ষ্য কোম্পানিগুলোর স্পন্সর বৃহত্তর মনোযোগ নিয়ে আনা। যাতে তারা ভালো ভাবে পরিচালিত করে এবং সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের লাভবান হয়। অর্থনীতির প্রফেসর আরো বলেন, বিএসইসির দায়িত্ব হচ্ছে সাধারন বিনিয়োগ কারিদের রক্ষা করা, কিন্তু তারা তা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এদিকে বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রত্যেক পরিচালকের ২ শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের প্রয়োজনীয় সংশোধন করার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। এটা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের উপর ভিত্তি করে শেয়ারের নতুন স্ল্যাব করা হবে।
শেয়াবাজারনিউজ/সো/ম.সা