তিন বছর ধরে আড়ালে ক্রেডিট রেটিং ম্যানুয়াল: ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক ভীত কতটুকু মজবুত বা দুর্বল এ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে ক্রেডিট রেটিং কোম্পানিগুলো। অভিযোগ রয়েছে, এসব ক্রেডিট রেটিং কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে কোম্পানিগুলো তাদের আর্থিক প্রতিবেদন দুর্বল থাকা স্বত্ত্বেও শক্তিশালী করে নিচ্ছে। এতে করে প্রকৃত তথ্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা আরো নিশ্চিত করতে ক্রেডিট রেটিং কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আওতায় আনতে উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কিন্তু সে উদ্যোগ নেয়া পর্যন্তই সার। তিন বছর পার হলেও সে উদ্যোগ বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
জানা যায়, ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি বিএসইসির ৪৬৫তম কমিশন সভায় বাংলাদেশে কার্যরত এক্সটারনাল ক্রেডিট রেটিং এজেন্সীসমূহের জন্য প্রযোজ্য বিধিবিধানের অধিকতর প্রয়োগ ও সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা কর্তৃক তদারকী জোরদার করা ও তার পরিপালন নিশ্চিতকরণে ক্রেডিট রেটিং কোম্পানিগুলোর পরিদর্শন ম্যানুয়াল প্রস্তুত করার উদ্যোগ নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ লক্ষ্যে ৩ সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো.সাইফুর রহমানকে আহবায়ক,পরিচালক মো.মাহবুবুল আলমকে সদস্য ও উপ-পরিচালক শেখ মো. লুৎফুল কবিরকে সদস্য সচিব করে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনের নিকট উল্লেখিত পরিদর্শন ম্যানুয়াল প্রস্তুত করে দাখিল করতে জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু তিন বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এখনো এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএসইসি।
এতে ক্রেডিট রেটিং কোম্পানিগুলো থেকে যাচ্ছে জবাবদিহিতার বাইরে। তাই পুঁজিবাজার তথা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ক্রেডিট রেটিং কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে আরো জোরদার প্রয়োগ করা উচিত বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো: সাইফুর রহমান শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে জানান, ‘বিএসইসির হাতে এখন কাজের চাপ অনেক। বেশকিছু আইন প্রণয়নের খসড়া নিয়ে কাজ চলছে। এরমধ্যে এ বিষয়টিও রয়েছে। মূলত যোগ্য লোকবলের অভাবে কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। তবে প্রতিটি বিষয়ই আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে কাজ করছি’।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশে কার্যরত ৮টি ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি রয়েছে। এগুলো হলো: ক্রেডিট রেটিং ইনফরমেশন অ্যান্ড সার্ভিসেস লি:(সিআরআইএসএল),ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি অব বাংলাদেশ (ক্রাব),ন্যাশনাল ক্রেডিট রেটিংস লিমিটেড,ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেড,অ্যারগাস ক্রেডিট রেটিং সার্ভিসেস লিমিটেড,ওয়াসো ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি (বিডি) লি:,আলফা ক্রেডিট রেটিং লিমিটেড এবং দ্যা বাংলাদেশ রেটিং এজেন্সি লিমিটেড। এর মধ্যে রেটিং এজেন্সি কোম্পানি ক্রাব পুঁজিবাজারের ১৭ কোম্পানিসহ বাইরের সর্বমোট ১ হাজার ১৩৯টি কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং করে আসছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো হলো: জাহিনটেক্স ইন্ডাষ্ট্রিজ,ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ,সোনারগাঁ টেক্সটাইল,সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস,ওরিয়ন ইনফিউশন,মেট্রো স্পিনিং,এমআই সিমেন্ট ফ্যাক্টরী লি:,এইচআর টেক্সটাইল মিলস,গ্রামীন ফোন লিমিটেড,জিপিএইচ ইস্পাত,গোল্ডেন সন লিমিটেড,ফু-ওয়াং সিরামিক ইন্ডাষ্ট্রি,এনভয় টেক্সটাইল,ডেলটা স্পিনার্স,বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস,বরকতউল্লাহ ইলেকট্র ডাইনামিকস,আফতাব অটোমোবাইলস লিমিটেড। এছাড়া এগুলোর সঙ্গে ২০টি ব্যাংক,১০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান,৫টি সিকিউরিটিজ হাউজ,২৩টি বীমা কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং করে থাকে। জানা গেছে,প্রতিটি কোম্পানির আর্থিক ভীত কতটুকু মজবুত কিংবা দুর্বল এগুলোর উপর ভিত্তি করে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে রেটিং করা হয়ে থাকে। দীর্ঘমেয়াদে রেটিংগুলোর নাম হলো: ত্রিপল এ (AAA ),ডাবল এ (AA),সিঙ্গেল এ (A ),ত্রিপল বি ( BBB),ডাবল বি (BB ),সিঙ্গেল বি (B),ত্রিপল সি ( CCC),ডাবল সি (CC),সিঙ্গেল সি (C) এবং ডি (Default)।
এছাড়া স্বল্পমেয়াদে যেসব রেটিং রয়েছে সেগুলোর নাম হলো: এসটি-১ থেকে এসটি -৬ পর্যন্ত (ST-1,ST-2…ST-6) পর্যন্ত। দীর্ঘমেয়াদে ‘ত্রিপল এ’ রেটিং অত্যন্ত মজবুত ক্যাপাসিটি এবং খুবই স্বল্প ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানি বুঝায়। ‘ডাবল এ’ দিয়ে খুবই মজবুত ক্যাপাসিটি এবং খুবই স্বল্প ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানি বুঝায়। ‘সিঙ্গেল এ’ দিয়ে মজবুত ক্যাপাসিটি এবং স্বল্প ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানি বুঝায়। ‘ত্রিপল বি’ দিয়ে সন্তোষজনক ক্যাপাসিটি ও মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানি বুঝায়। ‘ডাবল বি’ দিয়ে অপর্যাপ্ত ক্যাপাসিটি ও অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানি বুঝায়। ‘সিঙ্গেল বি’ দিয়ে দুর্বল ক্যাপাসিটি ও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানি বুঝায়। ‘ত্রিপল সি’ দিয়ে খুবই দুর্বল ক্যাপাসিটি ও খুবই উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানি বুঝায়। ‘ডাবল সি’ দিয়ে অত্যন্ত দুর্বল ক্যাপাসিটি ও অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানি বুঝায়। ‘সিঙ্গেল সি’ দিয়ে ব্যর্থতার দিকে অগ্রসর হওয়াকে বুঝায়। আর সর্বশেষ ‘ডি’ রেটিং দিয়ে ব্যর্থ কিংবা অস্তত্বহীন অথবা দেওলিয়ার কোম্পানিকে বুঝায়।
অনুরুপভাবে স্বল্পমেয়াদের জন্য ‘এসটি-১’ রেটিং দিয়ে সর্বোচ্চ গ্রেড (Highest Grade)‘এসটি-২’ দিয়ে হাই গ্রেড (High Grade),‘এসটি-৩’ দিয়ে মাঝারি গ্রেড (Adequate Grade),‘এসটি-৪’ দিয়ে (Marginal),‘এসটি-৫’ দিয়ে অপর্যাপ্ত গ্রেড (Inadequate Grade) এবং ‘এসটি -৬’ রেটিং দিয়ে সর্বনিম্ন গ্রেড (Lowest Grade) কে বুঝানো হয়।
শেয়ারবাজারনিউজ/ম.সা