ডিভিডেন্ড খাচ্ছে খেলাপি ঋণ
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: খেলাপি ঋণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদেরও ঘুম হারাম করে দিচ্ছে। কারণ খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের উচ্চ মুনাফায় লাগাম পরিয়ে দিয়েছে। এতে খাতটির সুনামহানীর পাশাপাশি বিনিয়োগকারীরাও উচ্চ ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংক মোট ৪ লাখ ৫২ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ২৬ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। এর জন্য ব্যাংকগুলোকে ১৬ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা সঞ্চিতি বা প্রভিশনিং করতে হয়েছে। এ টাকা ব্যাংকগুলোকে মুনাফা থেকে সঞ্চিতি করতে হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমেছে। পরিণতিতে ডিভিডেন্ড কমাতে বাধ্য হয়েছে ব্যাংকগুলো।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে বলেন, এই সময়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো ছিল, ব্যবসাও ভালো হয়েছে। খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ নেই। তবে গত কয়েক বছরে ব্যাংকাররা দুর্নীতির মাধ্যমে মাঝারি ও বড় ঋণ বিতরণ করেছেন। আবার কিছু ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রকল্প প্রস্তাব নিয়মমাফিক পরীক্ষা করা হয়নি। অদক্ষতা ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেওয়া এসব ঋণই এখন খেলাপি হয়ে পড়ছে। ব্যাংকগুলো পুনঃ তফসিল করে ঋণ নিয়মিত রাখার চেষ্টা করেও পারছে না। বলা যায়, দেশের ব্যাংক-ব্যবস্থা খুব খারাপ অবস্থার দিকে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভংকর সাহা বলেন, এ সময়ে ঋণ বেড়েছে, আবার খেলাপির পরিমাণও বেড়েছে। নীতিমালা করা আছে, ব্যাংকগুলো তা মেনে চলবে এটা আমরা আশা করি। খেলাপি ঋণ বাড়ার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা সরকারি কোনো সিদ্ধান্ত দায়ী নয়, ব্যাংকগুলো নিজেরাই দায়ী।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত্ব রূপালী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ১৫.৩১ শতাংশ।
এবি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ৮৬৯ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৪.২২ শতাংশ।
আল-আরাফাহ্ ইসলামি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৫.৯১ শতাংশ।
ব্যাংক এশিয়ার মোট খেলাপি ঋণ ৯০০ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৬.০১ শতাংশ।
ব্র্যাক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ৬২৯ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৪.৮৪ শতাংশ।
ঢাকা ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ৭০৬ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৫.৫২ শতাংশ।
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ৫৩৯ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৩.৫৪ শতাংশ।
ইস্টার্ন ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ৪৮৮ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৩.৯৯ শতাংশ।
এক্সিম ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৮৬ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৫.৩৪ শতাংশ।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ৫৩৪ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ২.৫৭ শতাংশ।
আইসিবি ইসলামি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ৭০৭ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৭৬.৩৯ শতাংশ।
আইএফআইসি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ১ হাজার ১৪ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৮.০৬ শতাংশ।
ইসলামি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৪.৬৮ শতাংশ।
যমুনা ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ৫৩৪ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৫.৮৩ শতাংশ।
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ৬০৫ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৪.৭০ শতাংশ।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ২৫১ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ২.৪৫ শতাংশ।
ন্যাশনাল ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৮.৩৪ শতাংশ।
এনসিসি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ৮৫০ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৭.৫২ শতাংশ।
ওয়ান ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ৬৪৬ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৫.৫৭ শতাংশ।
প্রিমিয়ার ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ৫০৬ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৪.৯২ শতাংশ।
প্রাইম ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ১ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৮.৩৬ শতাংশ।
পূবালী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ১ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৬.১৬ শতাংশ।
শাহজালাল ইসলামি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ৬৭৮ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৬.৬০ শতাংশ।
সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ৬৫৬ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৪.৪৪ শতাংশ।
সাউথইস্ট ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ৭৭২ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৪.৩৮ শতাংশ।
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ৪২৮ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৪.৫৫ শতাংশ।
সিটি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৩৭ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৭.৩৭ শতাংশ।
ট্রাস্ট ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ৪৬৭ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৩.৬২ শতাংশ।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ১ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৬.৩৫ শতাংশ।
উত্তরা ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ৭১০ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৯.৭৩ শতাংশ।
শেয়ারবাজারনিউজ/আ