আজ: শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৭ অগাস্ট ২০১৬, শনিবার |

kidarkar

ব্যবসা বাড়ছে ইস্পাত খাতে

ispatশেয়ারবাজার রিপোর্ট: ব্যবসায়িক মন্দা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের ইস্পাত খাত। এ খাতের শীর্ষ গ্রুপগুলো উৎপাদন-সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। আবার রড নির্মাণে মধ্যবর্তী কাঁচামাল বিলেট উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণতা বাড়ছে।

উদ্যোক্তারা বলছেন, মূলত সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প এবং বাস্তবায়নের অপেক্ষায় থাকা মেগা প্রকল্পগুলো সামনে রেখে উৎপাদনক্ষমতা বাড়াচ্ছে কোম্পানিগুলো। ভবিষ্যতে আবাসন খাতে স্থবিরতা পুরোপুরি কেটে গেলে এ খাতে প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে।

ইস্পাত খাতে উৎপাদন বাড়ার প্রমাণ পাওয়া যায় ইস্পাতপণ্য; বিশেষ করে লং স্টিল হিসেবে পরিচিত রড, অ্যাঙ্গেল, চ্যানেল তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে।

গত তিন বছরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ইস্পাতশিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল বিলেট ও স্ক্র্যাপ (পুরোনো জাহাজ ও পুরোনো লোহা) আমদানি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এই দুই ধরনের কাঁচামাল আমদানি হয় ২৮ লাখ টন। পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় সোয়া ৪৪ লাখ ২৮ হাজার টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আমদানি হয় প্রায় ৫৫ লাখ ৩৮ হাজার টন।

বিএসআরএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আলী হুসাইন আকবর আলী এক সম্মেলনে বলেন, বর্তমানে বছরে ৫ থেকে ৭ শতাংশ হারে বাড়ছে ইস্পাত খাতের বাজার। তবে আবাসন খাত ঘুরে দাঁড়ালে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ১৫ শতাংশের বেশি। এই বাজারের সম্ভাবনা বাড়ছে। এখন বছরে ৪০ লাখ টনের বেশি ইস্পাতপণ্য ব্যবহৃত হচ্ছে।

ইস্পাত খাতের উদ্যোক্তারা জানান, সরকারের অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। পদ্মা সেতুতে রডের ব্যবহার বেশি না হলেও চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীতে টানেল, রেলওয়ে লাইন, সেতু, সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎ প্রকল্প ও মেট্রোরেল প্রকল্পগুলোতে বিপুল পরিমাণে রডের দরকার হবে। আবার আবাসন খাতে ধীরে ধীরে মন্দা কাটছে। এ খাতে সব সময় মন্দা থাকবে না। আবাসন খাত ঘুরে দাঁড়ালে ইস্পাতপণ্যের বড় চাহিদা তৈরি হবে। ফলে ভবিষ্যতে ইস্পাত খাতে প্রবৃদ্ধিও বাড়বে।

ইস্পাত খাতের এই সম্ভাবনা মাথায় রেখে বড় কোম্পানিগুলো সম্প্রসারণে যাচ্ছে। ইস্পাত খাতের একটি কোম্পানির বাজার সমীক্ষা, ইস্পাত খাত নিয়ে একটি ব্যাংকের প্রতিবেদন এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১২ সালে ইস্পাত খাতে নেতৃত্ব দেওয়া বিএসআরএম, আবুল খায়ের ও কেএসআরএম গ্রুপের সম্মিলিত রড উৎপাদনক্ষমতা ছিল ১৭ লাখ টন। সম্প্রসারণের পর এখন তিনটি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনক্ষমতা দাঁড়াচ্ছে ২৯-৩০ লাখ টন। এই তিনটির বাইরে জিপিএইচ ইস্পাতও কারখানা সম্প্রসারণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ২০১৮ সালের শেষে প্রকল্পকাজ শেষ হলে কারখানার রডের উৎপাদন ১ লাখ ২০ হাজার টন থেকে বেড়ে ৭ লাখ ৬০ হাজার টনে উন্নীত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি। উৎপাদন ক্ষমতা ও কারখানার আধুনিকিকরণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে আরএসআরএম গ্রুপ। এভাবে ক্ষমতা বাড়তে থাকলে আগামী পাঁচ বছরে ইস্পাত খাতে উৎপাদনক্ষমতা দ্বিগুণ বাড়বে।

আরএসআরএমের কোম্পানি সচিব শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে বলেন, সরকারি মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন শুরু হলে ইস্পাতের ব্যবহার আরও বাড়বে। বড় প্রকল্পগুলোতে গুণগত মানের ইস্পাতপণ্য দরকার হয়। ভবিষ্যতে বাড়তি চাহিদাকে কেন্দ্র করে আরএসআরএমের উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি কারখানা আধুনিক করা হচ্ছে।

উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি রড তৈরির মধ্যবর্তী কাঁচামাল বিলেট উৎপাদনক্ষমতাও সম্প্রসারণ করছে কোম্পানিগুলো। আবুল খায়ের গ্রুপ এখন নিজেদের আবুল খায়ের স্টিল মেল্টিং কারখানায় চাহিদা অনুযায়ী বিলেট উৎপাদন করছে। প্রতিষ্ঠানটি এখন আর বিলেট আমদানি করে না। বিলেট তৈরির জন্য তারা প্রাথমিক কাঁচামাল পুরোনো লোহা আমদানি করছে। এ ছাড়া বিএসআরএম গ্রুপের নতুন বিলেট তৈরি কারখানায়ও উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে কোম্পানিটিকে বছরে আরও পাঁচ-ছয় লাখ টন বিলেট আমদানি করতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে আমদানি না করে নিজেদের কারখানায় বিলেট উৎপাদন করে চাহিদা মেটানোর চেষ্টায় আছে প্রতিষ্ঠানটি। বিলেট উৎপাদনের তালিকায় সম্প্রতি যোগ হয়েছে কেএসআরএম গ্রুপও।

বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ মাসুদুল হাসান বলেন, আবাসন খাতে মন্দা ধীরে ধীরে কাটছে। প্রান্তিক পর্যায়ে টিনের ঘরের স্থলে নতুন বিল্ডিং হচ্ছে। ইস্পাতের চাহিদা বাড়ার কারণে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও সম্প্রসারণে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে পাঁচ বছরে ইস্পাত খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন-সক্ষমতা দ্বিগুণ হবে। তবে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালোটাকা দেশে ধরে রাখতে পারলে পাঁচ বছরের আগেই ইস্পাত খাতে চাহিদা দ্বিগুণ হবে। এই বিষয়টিতে সরকারের জোর দেওয়া উচিত।

ইস্পাত খাতের একটি কোম্পানির তৈরি করা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১২ সালে গ্রেড রড উৎপাদিত হয় ২০ লাখ টন। এর ২৬ শতাংশই বিএসআরএম গ্রুপের। এর পরের অবস্থান ছিল আবুল খায়ের গ্রুপের হাতে, ১৩ শতাংশ। কেএসআরএম গ্রুপের হাতে ছিল ১২ শতাংশ। ৭ শতাংশ বাজার ছিল জিপিএইচের হাতে। নন-গ্রেড রডসহ ২০১২ সালে রড উৎপাদিত হয় ৩০ লাখ মেট্রিক টন। ইস্পাত খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, ইস্পাত খাতে এখন বছরে রড উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৪০ লাখ টনে।

ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের ২০১৫ ইয়ারবুক অনুযায়ী, বিশ্বে জনপ্রতি ইস্পাতের ব্যবহার প্রায় ২১৭ কেজি। তবে বাংলাদেশে ইস্পাতের ব্যবহার এখনো কম। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে ইস্পাতের ব্যবহার ছিল জনপ্রতি প্রায় ১৭ কেজি। একই সময়ে ভারতে ৫৮.০৬ কেজি, পাকিস্তানে ২৩.০৫ কেজি, মিয়ানমারে ৪০.০৮ কেজি। স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ইস্পাতের ব্যবহার কম হলেও ২০১৩ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে ৯ শতাংশ হারে বেড়েছে। আবার ইস্পাত খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশে এখন ইস্পাতের ব্যবহার জনপ্রতি ২৫ কেজি।

শেয়ারবাজারনিউজ/আ

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.