আজ: শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, শনিবার |

kidarkar

সলভেন্সি মার্জিনে আটকে আছে মূলধন বৃদ্ধি

Insurance_বীমাশেয়ারবাজার রিপোর্ট: অভিযোগ রয়েছে দেশের বীমা কোম্পানিগুলো স্বল্প মূলধন নিয়ে বড় ঝুঁকি গ্রহণ করছে। তাই ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্স্যুরেন্স সুপারভাইজরসের (আইএআইএস) পরামর্শ অনুযায়ী বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) কোম্পানিগুলোর জন্য ন্যূনতম মূলধন সীমা বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু সলভেন্সি মার্জিন নীতিমালার দোহাই দিয়ে কোম্পানিগুলো ন্যূনতম মূলধন সীমা মানছে না। আর এ বিষয়ে বীমা নিয়ন্ত্রকও আশার বাণী শোনানো ছাড়া কিছুই করতে পারছে না।

আইডিআরএ সূত্রে জানা যায়, বীমা আইন ২০১০ অনুযায়ী কোম্পানিগুলোকে পরিশোধিত মূলধনের লক্ষমাত্রা পূরনের জন্য তিন বছর সময় দেয়। সময় সীমা অতিক্রম হয়ে যাওয়ার পরেও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকা ভুক্ত বীমা খাতের ৪৭টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি ক্ম্পোনির পরিশোধিত মূলধনে ঘাটতি রয়েছে। ২০১০ সালের বীমা আইন এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ব্যাসেল-২ অনুযায়ী নন-লাইফ বীমা কোম্পানির ক্ষেত্রে ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকা এবং লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ক্ষেত্রে ৩০ কোটি টাকা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ টাকা দেবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকগণ।

সলভেন্সি মার্জিন: বীমা গ্রাহকদের ঝুঁকি গ্রহণ ও দাবি পরিশোধে কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতা নিরূপণের অন্যতম মাপকাঠি সলভেন্সি মার্জিন। ২০১১ সালে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) গঠিত হওয়ার পরই এ-সংক্রান্ত প্রবিধান প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠিত হওয়ার ছয় বছর হলেও এখন পর্যন্ত সলভেন্সি মার্জিনের খসড়া প্রবিধানমালা তৈরি করতে পারেনি আইডিআরএ।
এদিকে প্রবিধানমালাটি তৈরির জন্য একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণে যান আইডিআরএর সদস্যরা। বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ এনেও সভা-সেমিনার করা হয়। কিন্তু এর পরও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই কেন জানতে চাইলে আইডিআরএ সদস্য জুবের আহমেদ খান শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে বলেন, সহসাই সলভেন্সি মার্জিন নীতিমালা প্রণয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ এটি চূড়ান্ত হলে বীমা খাতের অনেক কোম্পানিই বন্ধ হয়ে যাবে। তাই নীতিমালাটি প্রণয়নে বেশকিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। দেখা যাক কী হয়।

জানা যায়, সলভেন্সি মার্জিন সম্পর্কে বীমা আইন, ২০১০-এ সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। এছাড়া জাতীয় বীমা নীতিতেও এ বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে। এর আওতায় কোম্পানিগুলো তাদের পরিশোধিত মূলধনের একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ তথা আর্থিক ঝুঁকি গ্রহণ করতে পারবে। প্রবিধানের মাধ্যমে এর মাত্রা ঠিক করবে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা।

এদিকে ন্যূনতম মূলধন অর্জন করতে না পারা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো হল: অগ্রনী ইন্স্যুরেন্স, কন্টিন্যান্টাল ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, ইসলামি ইন্স্যুরেন্স, জনতা ইন্স্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্স, স্ট্যান্ডাড ইন্স্যুরেন্স, তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স এবং নর্দান ইন্স্যুরেন্স।

লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি গুলো হল: পদ্মা লাইফ, প্রগতী লাইফ, প্রাইম লাইফ, প্রগ্রেসিভ লাইফ এবং রূপালী লাইফ।

নন-লাইফ বীমা কোম্পানির মধ্যে অগ্রনী ইন্স্যুরেন্সের বর্তমানে পরিশোধিত মূলধনের পরিমান রয়েছে ২৬ কোটি ৬৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। মূলধনে ঘাটতি রয়েছে ১৩ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

কন্টিন্যান্টাল ইন্স্যুরেন্সের পরিশোধিত মূলধনের পরিমান রয়েছে ৩২ কোটি ৯১ লাখ ২০ হাজার টাকা। মূলধনে ঘাটতি রয়েছে ৭ কোটি ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের পরিশোধিত মূলধনের পরিমান রয়েছে ৩২ কোটি ৭৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। মূলধনে ঘাটতি রয়েছে ৭ কোটি ২৬ লাখ ২০ হাজার টাকা।

ইসলামি ইন্স্যুরেন্সের পরিশোধিত মূলধনের পরিমান রয়েছে ৩০ কোটি ৮৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা। মূলধনে ঘাটতি রয়েছে ৯ কোটি ১৪ লাখ ২০ হাজার টাকা।

জনতা ইন্স্যুরেন্সের পরিশোধিত মূলধনের পরিমান রয়েছে ৩৮ কোটি ৩৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা। মূলধনে ঘাটতি রয়েছে ১ কোটি ৬৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের পরিশোধিত মূলধনের পরিমান রয়েছে ২৬ কোটি ৬৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। মূলধনে ঘাটতি রয়েছে ১৩ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের পরিশোধিত মূলধনের পরিমান রয়েছে ২৮ কোটি ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। মূলধনে ঘাটতি রয়েছে ১১ কোটি ৯৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের পরিশোধিত মূলধনের পরিমান রয়েছে ৩১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। মূলধনে ঘাটতি রয়েছে ৮ কোটি ৭৩ লাখ ১০ হাজার টাকা।

সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্সের পরিশোধিত মূলধনের পরিমান রয়েছে ৩১ কোটি ২১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। মূলধনে ঘাটতি রয়েছে ৮ কোটি ৭৮ লাখ ১০ হাজার টাকা।

স্ট্যান্ডাড ইন্স্যুরেন্সের পরিশোধিত মূলধনের পরিমান রয়েছে ২৯ কোটি ৫৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। মূলধনে ঘাটতি রয়েছে ১০ কোটি ৪২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

তাকাফুল ইন্স্যুরেন্সের পরিশোধিত মূলধনের পরিমান রয়েছে ৩৬ কোটি ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা। মূলধনে ঘাটতি রয়েছে ৩ কোটি ৯০ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

এবং নর্দান ইন্স্যুরেন্সের পরিশোধিত মূলধনের পরিমান রয়েছে ৩৮ কোটি ৭৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। মূলধনে ঘাটতি রয়েছে ১৩ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মধ্যে প্রগতী লাইফের পরিশোধিত মূলধনের পরিমান রয়েছে ১০ কোটি ৩৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। মূলধনে ঘাটতি রয়েছে ১৯ কোটি ৬২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

প্রাইম লাইফের পরিশোধিত মূলধনের পরিমান রয়েছে ২৯ কোটি ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা। মূলধনে ঘাটতি রয়েছে ৯৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

প্রগ্রেসিভ লাইফের পরিশোধিত মূলধনের পরিমান রয়েছে ১২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। মূলধনে ঘাটতি রয়েছে ১৭ কোটি ১০ লাখ টাকা।

এবং রূপালী লাইফের পরিশোধিত মূলধনের পরিমান রয়েছে ২৭ কোটি ৭৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। মূলধনে ঘাটতি রয়েছে ২ কোটি ২৬ লাখ ১০ হাজার টাকা।

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্স্যুরেন্স সুপারভাইজরসের (আইএআইএস) মতে, বীমা কোম্পানির ঝুঁকিভিত্তিক মূলধনের পর্যাপ্ততা অর্জনের জন্য সলভেন্সি-১-এর পাশাপাশি সুষ্ঠু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য সলভেন্সি-২-এর শর্তগুলো মেনে চলাও জরুরি। সলভেন্সি-১-এর শর্ত অনুযায়ী, বীমা ব্যবসায় বড় ধরনের বিপর্যয় ঠেকানোর জন্য এ খাতের কোম্পানিগুলোর পর্যাপ্ত মূলধন থাকতে হবে। এতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের কারণে গ্রাহকের বীমা দাবি বেড়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বিপর্যয় এড়াতে সক্ষম হবে।
এদিকে সলভেন্সি-২-এ বলা হয়েছে, এ ঝুঁকি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হলে বীমা-বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উদ্ধৃতপত্র তৈরি, ঝুঁকিভিত্তিক
মূলধন সংরক্ষণ, নিজ ঝুঁকি ও সক্ষমতার মূল্যায়ন এবং উচ্চপর্যায়ের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান থাকতে হবে।

পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর ক্ষেত্রে বীমা কোম্পানি গুরোকে কোন ছকবাধা কোন গাইডলাইন দেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জুবের আহমেদ বলেন, সলভেন্সি মার্জিন সমস্যা সমাধা হলে কোম্পানি গুলো এর মধ্য থেকেই গাইড লাইন পেয়ে যাবে।

তিনি আরো বলেন, বছর খানেক সময় লাগবে সলভেন্সি মার্জিনের সমাধান করতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বীমা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বীমা কোম্পানির হিসাব ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করেই সলভেন্সি মার্জিন নীতিমালাটি করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশের বীমা কোম্পানিগুলো এখন পর্যন্ত সঠিক নিয়মে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করতে পারে না। তাই বীমা খাতের হিসাব ব্যবস্থা ঠিক না করে কোনোভাবেই সলভেন্সি মার্জিন নীতিমালা প্রণয়ন সম্ভব নয়।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/সো

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.