আজ: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, মঙ্গলবার |

kidarkar

কনডেনসেট সরবরাহে সীমা আরোপ হচ্ছে

bpcশেয়ারবাজার রিপোর্ট: চুক্তি ভঙ্গ করে খোলা বাজারে উপজাত বিক্রির অভিযোগে বিপিসি’র সঙ্গে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিভিও পেট্রোক্যামিকেলসহ অন্য বেসরকারি রিফাইনারি কোম্পানিগুলোর টানাপোড়েন চলছে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আইনি লড়াইও চলছে। এমন পরিস্থিতিতে কনডেনসেট পরিশোধনের পর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) উপজাত (কনডেনসেট) সরবরাহে সীমা আরোপ করা হচ্ছে।

মন্ত্রণালয় ও বিপিসি সূত্র বলছে, এ-সংক্রান্ত নীতিমালা সংশোধন করে কনডেনসেট থেকে ন্যূনতম ৪৫ শতাংশ পেট্রল ও ১৬ শতাংশ ডিজেল উৎপাদন করে বিপিসির কাছে সরবরাহ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। একই সঙ্গে নিম্নমান ও বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন জ্বালানি পণ্য উৎপাদন নিষিদ্ধ করা হবে।

এ বিষয়ে বিপিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যক্তিখাতের রিফাইনারিগুলোর জ্বালানি পরিশোধন বিষয়ে গঠিত কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এ পরিবর্তন আনা হচ্ছে। চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে বেসরকারি রিফাইনারিগুলো উপজাত খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগ ওঠায় এ কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি রিফাইনারিগুলোর বিরুদ্ধে খোলাবাজারে উপজাত বিক্রির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ফেব্রুয়ারিতে রিফাইনারিগুলোর জ্বালানি পরিশোধনের সক্ষমতা যাচাইয়ে একটি কমিটি গঠন করে সরকার। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ আহসানুল জব্বারকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটিতে বুয়েট, বিপিসি, পেট্রোবাংলা, বিপণন কোম্পানি, ইস্টার্ন রিফাইনারি ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করা হয়। কমিটি দেশের ১৩টি বেসরকারি রিফাইনারি সরেজমিন পরিদর্শন করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়।

প্রতিবেদনে রিফাইনারিগুলোর ৪৫ শতাংশ পেট্রল, ১৬ শতাংশ ডিজেল ছাড়াও অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্য উৎপাদনের সক্ষমতার কথা জানানো হয়। এতে আরো জানানো হয়, রিফাইনারিগুলো গ্যাস ও সিস্টেম লস হিসেবে ৭ শতাংশ পণ্য নষ্ট হয় বলে কমিটিকে অবহিত করেছে। এ প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ জুলাই জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বেসরকারি রিফাইনারির জন্য ন্যূনতম ৪৫ শতাংশ পেট্রল ও ১৬ শতাংশ ডিজেল উৎপাদন করে বিপিসির কাছে সরবরাহের বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়।

এ ব্যাপারে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পাঠানো এক চিঠিতে আরো বলা হয়, বেসরকারি রিফাইনারির জন্য গুণগত মান সঠিক পর্যায়ে রাখা, বিএসটিআই অনুমোদিত নয় এমন পণ্য উৎপাদন না করা, বিশ্ববাজার থেকে কনডেনসেট আমদানির আগে বিপিসি অনুমোদন নেয়া ও আমদানির পর পরিমাণ জানানো-সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ-সংক্রান্ত একটি নীতিমালা শিগগিরই চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে।

বিপিসি সূত্র জানিয়েছে, দেশে প্রতিষ্ঠিত ১৫টি বেসরকারি রিফাইনারির মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিভিও পেট্রোক্যামিকেলসহ ১৩টির সঙ্গে বিপিসির চুক্তি রয়েছে। এসব রিফাইনারির মধ্যে সুপার পেট্রো কেমিক্যালস ও পেট্রোম্যাক্স ছাড়া বাকিগুলো গত অর্থবছরে ৩৭ শতাংশের কম পেট্রোলিয়াম পণ্য বিপিসিকে সরবরাহ করেছে।

এর আগে শর্ত ভঙ্গ করে বিপিসিতে উৎপাদিত পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহ না করায় সিভিও-সহ নয়টি রিফাইনারিকে সতর্ক করা হয়েছে। পরবর্তীতে এমন অপরাধে সংশ্লিষ্ট রিফাইনারির লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়। পাশাপাশি সিভিও পেট্রোক্যামিকেল-কে গ্যাসের উপজাত সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সিভিও আপিল করলে উচ্চ আদালত সরকারের এ সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন।

বিপিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নীতিমালা সংশোধনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট রিফাইনারিগুলোকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জানানো হয়, কোনো রিফাইনারি নীতিমালার বাইরে বিকল্প জ্বালানি উৎপাদন করলে লাইসেন্স বাতিল ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে বিপিসির পরিচালক (বিপণন) মীর আলী রেজা শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে বলেন, দেশের অধিকাংশ বেসরকারি রিফাইনারির কনডেনসেট থেকে জ্বালানি উৎপাদনের মান নিম্ন। পেট্রোবাংলার গঠিত কমিটি সবগুলো রিফাইনারি পরিদর্শন করে উৎপাদন প্রক্রিয়ার মান নির্ধারণ করেছে। সে অনুযায়ী আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়েছি। নির্ধারিত পরিমাণ জ্বালানি তেল বিপিসিকে সরবরাহ না করলে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, খোলা বাজারে কনডেনসেট বিক্রির অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিভিও পেট্রোক্যামিকেল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবী করে, উৎপাদিত সব কনডেনসেট বিপিসি নেওয়ার কথা থাকলেও চলতি বছরে বিপিসি কনডেনসেট নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। এর ফলেই কোম্পানি নন-ফুয়েল উপজাত তৈরী করতে বাধ্য হয়েছে বলে দাবী করা হয় যা পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি অ্যাসোসিয়েশন ও জ্বালানী মন্ত্রনালয়কে জানানো হয়েছে। ফলে কোনো কার্যক্রমই অনৈতিক নয় বলে দাবী করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। এর পাশাপাশি কনডেনসেট বিপিসি’র বাইরে বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই বলে জোর দাবী করে সিভিও কর্তৃপক্ষ।

শেয়ারবাজারনিউজ/আ

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.