সমতায় ফিরলো আফগান, পুড়লো বাংলাদেশ
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: জয়ের কাজটা বল হাতেই অনেকখানি এগিয়ে রেখেছিলেন আফগানিস্তানের ক্রিকেটাররা। বাংলাদেশকে আটকে রেখেছিলেন মাত্র ২০৮ রানে। ব্যাটিং ব্যর্থতার পর বল হাতে ঘুরে দাঁড়ানোর অনেক চেষ্টাই করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু প্রথম ম্যাচের নাটকীয় জয়ের পুনরাবৃত্তি আর হলো না। শেষপর্যন্ত আফগানদের কাছে হারতেই হলো মাশরাফি-সাকিবরা। যোগ্য দল হিসেবেই বাংলাদেশকে ২ উইকেটে হারিয়ে দিল আফগানিস্তান।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে মেঘাচ্ছন্ন আকাশের নিচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বেশ সতর্কতার সঙ্গে শুরু করেছিলেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। আফগানিস্তানের দুর্দান্ত বোলিং-ফিল্ডিংয়ের সামনে রান তুলতে অনেকটাই কষ্ট হয়েছে বাংলাদেশের। ১৬৫ রানের নবম উইকেট হারিয়ে ভীষণ বিপদে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু অভিষিক্ত মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের দুর্দান্ত ব্যাটিং শেষ পর্যন্ত ২০৮ রানের বেশ সম্মানজনক সংগ্রহ এনে দিয়েছে মাশরাফির দলকে। তবে তাতেও জিতের মুখ দেখলো না বালাদেশ।
প্রথম ম্যাচের মতো আজকের ম্যাচও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তৈরি হয়েছিল টানটান উত্তেজনা। ২০৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১৬ ওভারের মধ্যে আফগানিস্তান হারিয়েছিল চারটি উইকেট। তখন কিছুটা ফিকেও হয়ে গিয়েছিল আফগানদের জয়ের আশা। কিন্তু পঞ্চম উইকেটে ১০৭ রানের অসাধারণ জুটি গড়ে দলকে জয়ের পথে নিয়ে যান স্টানিকজাই ও নবী। বাংলাদেশ এই জুটি ভাঙতে পেরেছে ৪০তম ওভারে। ৪৯ রান করে ফিরে গেছেন নবী। পরের ওভারে স্টানিকজাইও আউট হয়েছেন ৫৭ রান করে। কিন্তু ততক্ষণে আফগান স্কোরবোর্ডে জমা হয়ে গেছে ১৭৪ রান। অনেকখানিই নিশ্চিত হয়ে গেছে আফগানিস্তানের জয়। শেষপর্যায়ে ২২ রানের ইনিংস খেলে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে গেছেন নাজিবুল্লাহ জাদরান। তবে ৪৭তম ওভারে সৈকতের বলে জাদরানকে স্টাম্পিং করে সাজঘরে পাঠানোর সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি এই অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক। মুশফিক এই স্টাম্পিংটা মিস না করলে ম্যাচের ফলাফল ভিন্ন রকমও হতে পারত।
এদিকে টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের উদ্বোধনী জুটিতে ৪৫ রান পেয়েছিল বাংলাদেশ। শুরু থেকে যথেষ্ট সতর্ক থাকলেও একাদশ ওভারে ধৈর্য হারানোর মাশুল দিতে হয়েছে তামিমকে। ২০ রান করে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন বাংলাদেশের তারকা ওপেনার। দুই ওভার পর সৌম্য সরকারও আউট। তিনিও করেছেন ২০ রান।
দুই ওপেনারের বিদায়ের পর দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৬১ রান ওঠার পর আড়াআড়ি ব্যাটিং করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে গেছেন মাহমুদউল্লাহ। আগের ম্যাচে দারুণ অর্ধশতক করলেও এবার তাঁর অবদান ২৫ রান। তিন ওভার পর তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন মুশফিকও। এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান করেছেন ৩৮ রান।
সাকিব আল হাসান বেশিদূর যেতে পারেননি। ব্যক্তিগত ১৭ রানে এক্সট্রা কাভারে বেশ সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি। হাশমতউল্লাহ শাহিদি ধরতে পারেননি। তবে ঐ ওভারের শেষ বলেই ‘প্রতিশোধ’ নিয়েছেন বোলার মোহাম্মদ নবী। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেছেন তিনি। যদিও টিভি রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে প্যাডে লাগার আগে বল আঘাত করেছিল ব্যাটে। পরের ওভারের প্রথম বলে সাব্বির রহমানও (০) এলবিডাব্লিউ। মাশরাফি বিন মুর্তজাও টিকতে পারেননি। মাত্র দুই রান করে ক্যাচ দিয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।
১৪১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন ভীষণ বিপদে। তবে অভিষেক ম্যাচে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে নজর কেড়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। চাপের মুখে ব্যাট করতে নেমে খেলেছেন ৪৫ বলে ৪৫ রানের অপরাজিত ইনিংস। পরে বল হাতেও দেখিয়েছেন চমক। ১০ ওভার বল করে মাত্র ৩০ রানের বিনিময়ে নিয়েছেন দুটি উইকেট। সাকিব চারটি উইকেট নিয়েছেন ৪৭ রান খরচ করে।
অন্যদিকে আজকের ম্যাচের হারটা বাংলাদেশকে অনেকটাই পুড়িয়েছে । কারণ এই এক হারেই যে র্যাঙ্কিংয়ে ৩ পয়েন্ট হারাল বাংলাদেশ।
এ ম্যাচের আগে র্যাঙ্কিংয়ে সাতে থাকা বাংলাদেশের রেটিং পয়েন্ট ছিল ৯৮। কিন্তু আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই এক হারেই সেই পয়েন্ট কমে দাঁড়াল ৯৫তে। শনিবারও যদি আফগানিস্তানের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ তবে এক ধাক্কায় বাংলাদেশের পয়েন্ট হয়ে যাবে ৯১। আর সঙ্গে সঙ্গে র্যাঙ্কিংয়ে আটে নেমে যাবে বাংলাদেশ। কারণ সাতে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে ঘাড়ের কাছে নিশ্বাস ফেলছে ৯৪ পয়েন্ট নিয়ে। আর তৃতীয় ম্যাচটি জিতলেও বাংলাদেশের খুব বেশি লাভ হবে না। রেটিং পয়েন্ট ৯৫-ই থাকবে বাংলাদেশের।
শেয়ারবাজারনিউজ/এম.আার