শুনানীর অপেক্ষায় সামিট
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: অনির্দিষ্টকালের জন্য লেনদেন স্থগিত থাকা সামিট পাওয়ার লিমিটেডের শেয়ার লেনদেনের তারিখ শুনানীর অপেক্ষায় রয়েছে। কোম্পানির একিভূতকরণের প্রতিবেদন বর্তমানে বিএসইসির এনফোর্সমেন্ট বিভাগে জমা পড়ে আছে। তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর তা কমিশন সভার উঠানো হবে বলে বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ার কোম্পানির (এসপিপিসিএল) তালিকাচ্যুতিতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না হওয়ায় গত ২৭ আগস্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য সামিট পাওয়ার লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন স্থগিত করে দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ। এ-সংক্রান্ত বিএসইসির তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমার পর বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কোম্পানিটির লেনদেনের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এসপিপিসিএল তালিকাচ্যুত হয়ে সামিট পাওয়ারে একীভূত হলেও সামিট পাওয়ার লিমিটেড নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার বিপরীতে মূলধন বাড়ানোর অনুমোদন নেয়নি। এ জটিলতায় এসপিপিসিএল তালিকাচ্যুত হয়ে গেলেও এর শেয়ারহোল্ডাররা সামিট পাওয়ারের শেয়ার বুঝে পাননি। আর স্টক এক্সচেঞ্জও আগের ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে একীভূতকরণের অংশ হিসেবে এসপিপিসিএলকে তালিকাচ্যুত করে। এতে যথাযথ বিধি অনুসরণের ব্যর্থতায় সামিট পাওয়ারের লেনদেন স্থগিতের পাশাপাশি তদন্তপূর্বক স্টক এক্সচেঞ্জের রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার সে সময়ের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
এ বিষয়ে বিএসইসির নিবার্হী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে জানান, সামিট পাওয়ার একীভূতকরণ প্রক্রিয়া এখন এনফোর্সমেন্ট বিভাগে জমা পড়ে আছে। কোম্পানির একীভূতকরণ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কোম্পানিকে শোকজ করা হবে। প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর শুনানীর দিন ধার্য করা হবে। শুনানী শেষে তা কমিশন সভায় উঠানো হবে।
এদিকে সামিট পাওয়ার কর্তৃপক্ষ পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধির আবেদন জানিয়ে আরএজেএসসিতে সম্পদ মূল্যায়নে ভ্যালুয়ারের প্রতিবেদন জমাও দিয়েছে। এ-সংক্রান্ত প্রাপ্তি স্বীকারপত্রও হাতে পেয়েছে কোম্পানিটি।
উল্লেখ্য, সামিট পাওয়ারের একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় যথাযথ বিধি অনুসরণে ব্যর্থতার অভিযোগে গঠিত বিএসইসির তদন্ত কমিটি গত ২৪ আগস্ট তাদের প্রতিবেদন কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে জমা দিয়েছিলো। সামিটের একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় কোম্পানি এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি, যা তাদের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী সংশ্লিষ্ট পক্ষকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হবে এবং এর পরই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।
জানা গেছে, গত ২৪ আগস্ট সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ার কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করে সামিট পাওয়ারের লেনদেন অব্যাহত রাখে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ। একীভূতকরণের পর পরিশোধিত মূলধন নিয়ে সমস্যা থাকার বিষয়টি ঐদিন লেনদেন শেষে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরে পড়লে দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে জরুরি তলব করে এ সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। সে বৈঠকে সামিট পাওয়ারের লেনদেন স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে এ বিষয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সে সময় কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শুক্রবার ছুটির দিনে জরুরি সভা ডাকেন। অবশ্য ডিএসইর একজন কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে ওএসডি করায় সেদিনের পূর্বনির্ধারিত জরুরি সভাটি অনুষ্ঠিত হয়নি। যদিও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সেদিনের জরুরি সভা ডাকা নিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক তৈরি হয়। সে সভায় একজন কমিশনার উপস্থিত না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত জরুরি সভাটি পণ্ড হয়ে যায়।
কমিশনের বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে শুধু দৈনন্দিন কার্যাবলি সম্পাদনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। দৈনন্দিন কার্যাবলির বাইরে জরুরি সভা তিনি এমন একসময় ডাকেন, যার দুদিন পর রোববার চেয়ারম্যানের অফিসে যোগদানের দিন ধার্য ছিল। অবশ্য জরুরি সভা পণ্ড হয়ে যাওয়ায়, অনুপস্থিত কমিশনারের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে অর্থমন্ত্রীর কাছে নালিশ জানিয়েছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
শেয়ারবাজারনিউজ/এম.আর